Close Menu
    Facebook X (Twitter) Instagram
    • About Us
    • Contact Us
    • Content Transparency
    • Editorial Policy
    • Fact Checking Policy
    Facebook X (Twitter) Instagram
    DMN Express
    Subscribe
    • Home
    • জাতীয়
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • আলোচিত সংবাদ
    • ক্যাম্পাস
    • খেলা
    • বিনোদন
    DMN Express
    Home»আলোচিত সংবাদ»একই পরিবারের পাঁচজনকে গুম!
    আলোচিত সংবাদ

    একই পরিবারের পাঁচজনকে গুম!

    ডিএম নিউজ ডেস্কBy ডিএম নিউজ ডেস্কFebruary 23, 2025 7:18 AMUpdated:February 23, 2025 7:42 AM11 Mins Read
    Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest Email

    গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে প্রায় হাজার খানেক মানুষকে শুধুমাত্র ভিন্ন মতের হওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে গুম করেছেন শেখ হাসিনা ও তার বাহিনীর লোকজন। গুমের শিকার পরিবার গুলোর একজনকে তুলে নিয়ে গুম করার ঘটনা শোনা গেলেও একই পরিবারের পাঁচজনকে তুলে নিয়ে গুমের ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এমন ঘটনাই ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলা সদরের একটি পরিবারের সঙ্গে। পাঁচজনকে তুলে নেওয়ার পর চারজনকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন আর ফিরে আসেনি। এই পাঁচজনকে উদ্ধারে পরিবারটি বিভিন্ন সময়ে র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবিকে শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে দিয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু তাতেও তাদের মুক্তি মেলেনি।

    গুম হওয়া পাঁচজন হলেন— ঝিনাইদহ সদরের মাসুদুর রহমান, আশরাফুল আলম, আসাদুজ্জামান, কামরুজ্জামান ও (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ব্যক্তি। প্রথম চারজন সম্পর্কে আপন ভাই ও শেষ ব্যক্তি তাদের আপন ভাগিনা।

    প্রায় দেড় মাসের অধিক সময় ধরে ঢাকা মেইলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

    ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নানাভাবে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ইতিহাসের নির্মমতাকেও হার মানাবে। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই প্রকট ছিল যে কারও মারধরের চোটে পা ফেটে রক্ত বের হতো। সেই রক্তে ভিজে যেত ঘরের মেঝে। কিন্তু মারধর বন্ধ হতো না। সকাল, বিকেল ও রাতে মিলে তিন দফা রুটিন করে তাদের ওপর চলত শারীরিক নির্যাতন। শুধু তাই নয়, সারাক্ষণ চোখ বেঁধে রাখা হতো। খাওয়ার হিসেবে দেওয়া হতো সকালে একটা রুটি, বাকি দুই বেলা সামান্য সাদা ভাত। আর এ খাবারও শেষ করতে হতো মাত্র দুই মিনিটে। শেষ করতে না পারলে বেধড়ক মারধর। শুধুমাত্র খাওয়ার সময় বেধে রাখা চোখ খুলে দেওয়া হতো।

    কেন তাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, কী অপরাধ ছিল তাদের, আর সেইদিন গুলো তাদের কীভাবে কেটেছে —তা জানতে গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদক।

    তারা শুধু প্রশ্ন করত তুই স্বীকার কর, কতজনকে জঙ্গি ট্রেনিং দিয়েছিস। আমি বলতাম ভাই আমি তো জামায়াতে ইসলামী করি। মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকি। তখন তারা বিশ্বাস করত না। প্রথমে তো তারা মনে করেছিল বড় নেতা, পরে দেখলো কিছু নয়। পরে ছেড়ে দিল।
    ঢাকা মেইলকে ভুক্তভোগী মাসুদুর রহমান
    তাদের দাবি, তাদের অপরাধ ছিল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের দুজন। বাকিরা কোনো রাজনীতি না করলেও শুধুমাত্র আত্মীয় বা আপনজন হওয়ায় তাদেরও তুলে নেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে একই মাসে তুলে নেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন জনকে পর্যায়ক্রমে ছাড়া হয়। তবে তাদের একজনের অবস্থা এতটাই করুণ হয় যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। যখন বাসায় ফিরে এসেছিলেন অনেকের সঙ্গে ভালোভাবে কথাও বলতে পারতেন না। যদিও এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছেন তিনি।

    তাদের একজন মাসুদুর রহমান। তিনি সেই সময় জামায়াতে ইসলামীর ঝিনাইদহ সদরের একটি ইউনিয়ন আমিরের দায়িত্ব পালন করতেন। এটাই তার বড় অপরাধ। অথচ তার নামে থানায় কোন মামলাও ছিল না। ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট তিনি তার এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাখা হয় ঝিনাইদহের র‍্যাব-৬ এর কার্যালয়ে। পরে নেওয়া হয় ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে। দীর্ঘ সাত মাস তাকে গুম রাখার পর ছাড়া হয়। ততক্ষণে তিনি বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পান তার সম্পদ-জমিজমা সব শেষ।

    গুমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শেখ হাসিনা: এইচআরডব্লিউ
    গুম কমিশনের প্রতিবেদনে নির্যাতনের বিভীষিকাময় চিত্র
    ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমি মাগুরায় আমার খালা শাশুড়ির বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। তখন সাদা পোশাকে র‌্যাব পরিচয়ে তৎকালীন র‌্যাব-৬ এর সিও মেজর মনিরের নেতৃত্বে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। ওই সময় সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ বেধে ফেলল তারা। গাড়িতে তুলে র‌্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হয়। এরপর সেই চোখ খুলেছিল যখন পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে আমার বাসায় আসার সময়। তারা শুধু প্রশ্ন করত তুই স্বীকার কর, কতজনকে জঙ্গি ট্রেনিং দিয়েছিস। আমি বলতাম ভাই আমি তো জামায়াতে ইসলামী করি। মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকি। তখন তারা বিশ্বাস করত না। প্রথমে তো তারা মনে করেছিল বড় নেতা, পরে দেখলো কিছু নয়। পরে ছেড়ে দিল।

    এরপর ৫ আগস্টের পর তিনি সেখানকার থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ জিডি নেয়নি।

    মারধরে পা ফেটে রক্ত জমাট বেধে যেত!

    মাসুদুর রহমান বলছিলেন, আমাকে এমন সব নির্যাতন করা হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নির্যাতনে এতটাই দিশেহারা ছিলাম কখন সকাল হলো, আর কখন রাত হলো বুঝতে পারতাম না। কবে শীত, কবে গরম, তবে রোজা আসল, কবে ঈদ গেল, কবে কী হলো জানতামই না। আমাকে টাইম করে সকাল-বিকাল-রাতে তিন দফা মারা হতো। মাইরের চোটে আমার পা ফেটে ফেটে রক্ত বের হতো। ঘরের পুরো মেঝে রক্ত ভিজে যেত। এরপরও বন্ধ হতো না তাদের মারধর। সকালে যখন বাথরুমে যেতাম পা থেকে বের হওয়া রক্ত জমাট বাধার ফলে সেগুলো পানি না ভেজালে উঠতো না।

    তার মতে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পাক-ভারতে নির্যাতনের যত প্রক্রিয়া আছে, সবগুলো তার ওপর চালানো হয়েছে।

    প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা হয়েছিল হাত-পায়ের নখ

    মাসুদ বলেন, আমি যখন বাড়িতে আসি তখন আমার হাতে-পায়ে কোনো নখ ছিল না। সব তারা তাদের কাছে থাকাকালীন প্লাস দিয়ে তুলেছে। শরীরে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। নির্যাতনের কারণে তিন-চার মাস ডাকলেও অজ্ঞান ছিলাম।

    ভাত-পানির কষ্ট দিয়ে রাখা হতো

    মাসুদ বলছিলেন, তার ওপর চলা নির্যাতনের কারণে শরীরে কোনো কিছু খাবারের শক্তিও ছিল না। তাকে পানি দেওয়া হলেও প্রায় এক লিটার পানি তিনি ছয় দিন ধরে খেতেন। ফলে তার শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। যার কারণে টয়লেট হতো ১২ দিন ১৫ দিন পর। এ কারণে তিনি বাড়িতে ফিরলেও স্বাভাবিক ছিলেন না।

    মাসুদ জানান, তাদেরকে গুম করে রাখার সময় খাবার হিসেবে সকালে একটা রুটি, দুপুরে ও রাতে যৎসামান্য (তার দাবি সেটা ৫০ গ্রাম চালের বেশি নয়) সাদা ভাত দেওয়া হতো। তরকারি দেওয়া হতো বা লবণ ছাড়া। এভাবে তাদের মাসের পর মাস অল্প অল্প খাবার দিয়ে দুর্বল করে বাঁচিয়ে রেখেছিল গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। তার কথায়, ‘এই ভাতে দুটি লোকমা দিলেই ভাত শেষ হয়ে যেত। আর তা খেয়েই পরবর্তী সময় পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হতো।’

    নামাজেও মারধর করা হতো!

    মাসুদ বলছিলেন, পাঁচ মাস পর আমার সেন্স আসতে শুরু করল। তার আগে তো কোনো সেন্স ছিল না। আমি যখনই নামাজে দাঁড়াতাম তখন পেছন দিক থেকে স্যান্ডেল দিয়ে বাড়ি (আঘাত) দেওয়া হতো, পড়ে যেতাম। আমি যখন বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম তখন আমার শরীরে কাঠামো ছিল কিন্তু বডি স্ট্রাকচার ছিল না, প্রায় অ্যাবনরমাল হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এখন অনেকটা সুস্থ।

    র‍্যাব, ডিবি ও পুলিশ নিয়েছে ৫৬ লাখ টাকা!

    মাসুদ জানান, তার মেজো, সেজো, ছোট ভাই ও আপন ভাগিনাকে তুলে নেওয়ার কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবিকে চাওয়া মাত্র টাকা দেওয়া হয়েছে। আর সেই টাকার পরিমাণ ৫৬ লাখ টাকার কম নয়। এই টাকাগুলো ম্যানেজ করতে তার পরিবারকে মাসুদের শেষ সম্বল ৬ শতক জমি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তিনি নিঃস্ব।

    গুম কমিশনে জমা পড়েছে ১৬০০’র বেশি অভিযোগ
    মাসুদ দাবি, তার পরিবার পুলিশ ও ডিবি ছাড়াও সেই সময়কার র‍্যাব-৬ এর অধিনায়ক মনিরকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এরপর মাসের পর মাস গুম করে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও সেই এলাকার সদর থানার ওসি উজ্জল দারোগাকেও টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

    মাসুদ বলেন, আমার তো সব শেষ। র‍্যাবকে ৫৩ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি আসছি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ৩ লাখ দিয়েছি ডিবি ও পুলিশ। সব মিলে ৫৬ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য আমাকে ছয় শতক জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখন আমার কিছুই নাই।

    বিদেশ পালাতে বাধ্য হয়েছেন

    মাসুদ, আলম, আসাদ ও কামরুজ্জামানের পর তুলে নেওয়া হয় তাদের এক ভাগিনাকে (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক)। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি ৫ মাস ২৮ দিন গুম ছিলেন। পরে মুক্তি পেলেও আর দেশে থাকতে পারেননি। মাসুদের ভাগিনা জানান, যখন তাকে তুলে নেওয়া হয়, সেদিন তিনি তার ফুপুর বাড়িতে ছিলেন। রাত দুইটায় তাকে ঘুম থেকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর পুরো সময় তার চোখ বাধা ছিল, সঙ্গে চলত নির্যাতন। আর একটি কথাই জানতে চাওয়া হতো, তার মামারা কেন জামায়াত-শিবির করেন, তিনিও জড়িত কিনা।

    তিনি বলেন, শেষে ছাড়লেও তারা বলেছিল যদি এসব কথা কাউকে বলিস তাহলে তোকে আবারও তুলে নিয়ে আসব। পরে আমি পরে আর দেশে থাকতে পারি নাই। কারণ গুমের শিকার হয়ে ফেরত আসার পরও র‍্যাব আমাকে ১০ দিন ১৫ দিন পর আবারও তুলে নিত। গ্রেফতার হয়েছে অমুক, তোকে লাগবে। নিয়ে বলতো এই এরে চিনিস কিনা! এভাবে তিন-চারবার গিয়েছি। পরে আমি বিদেশ চলে যাই।

    মাসুদের ভাগিনা জানান, তার নামেও কোনো থানায় মামলা ছিল না। কিন্তু তাকে বিনা অপরাধে সেদিন তুলে নিয়ে প্রায় ছয় মাস গুম করে রাখা হয়েছিল। পুরো সময়ে তিনি কোথায় ছিলেন, কারা তার কাছে আসত, তা দেখতে পেতেন না চোখ বেধে রাখার কারণে।

    আসাদুজ্জামানকে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট তার ভায়রা ভাইয়ের বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। যারা তুলে নিয়েছিল তাদের সবার গায়ে সাদা পোশাক ছিল। এরপর তাকে সোজা চোখ বেধে নিয়ে যাওয়া হয় র‍্যা-৬ এর ক্যাম্পে। সেখানে কয়েকদিন রাখার পর নেওয়া হয় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার দূরত্বের জায়গায়। কিন্তু তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা তিনি বলতে পারেন না। কারণ, তার দুই চোখ সারাক্ষণ বাধা থাকত। তাকে ছাড়া হয় ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর। এই সময়ে তাকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, শিবিরের সঙ্গে জড়িত তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান কোথায়। পাশাপাশি নির্যাতন চলতো সমান তালে। তিনি বলেন, আমাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। শুধুমাত্র টাকা আদায়ের জন্য। অথচ আমার নামে কোনো মামলা ছিল না। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। অপরাধ আমার দুই ভাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করে।

    আসাদুজ্জামান বলেন, আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর র‍্যাব-৬ এর মেজর মনিরকে আমরা আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। তার মুখের ভাষা ছিল জঘন্য। সে বলত, ঝিনাইদহে কোনো জামায়াত-শিবিরের বংশ রাখব না। সবাইকে জেলা ছাড়া করব। আমি ছাড়া পাওয়ার পর যখন সদর থানায় গেলাম, তখন ওসি বলল, আপনার এখন অভিযোগ করাটা ঠিক হবে না, অভিযোগ করলে উল্টো আরও বিপদে পড়বেন। এরপর আর ভয়ে জিডিও করা হয়নি। তিনি বের হয়ে এসে দেখেন, তার ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চাকরিটাও নেই। পরে সেখানে আবেদন দিয়ে জীবিত প্রমাণ করে তিনি চাকরি ফেরত পান।

    আশরাফুল আলমকে তুলে নেওয়া হয় ২০১৭ সালের ৭ মে খুব সকালে। তিনি জানান, তাকে খুলনায় তার কর্মস্থল থেকে সাদা পোশাকে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর গাড়িতে তুলে দিনভর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয় তাকে। সেই সঙ্গে গাড়িতে পিঠ মুড়িয়ে ফেলে রেখে চলে ব্যাপক মারধর। বিভিন্ন অপরিচিত মানুষের নাম বলে তার কাছে জানতে চাওয়া হতো তারা তার কাছে আসে কিনা। এরপর নেওয়া হয় র‍্যাব-৬ এর কার্যালয়ে। এরপর সন্ধ্যার পর তার ছোট ভাই কামরুজ্জামানকে একই গাড়িতে নেওয়া হলো ঢাকায়। ঢাকায় দুই ভাইকে ডিবি অফিসে রাখা হয়েছিল।

    ঝিনাইদহ থেকে মিন্টো রোডের ডিবি অফিস!

    আশরাফুল বলছিলেন, আমাদের যখন গাড়িতে তোলা হলো, আমি ছোট ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে বুঝলাম সে আমার ভাই। পরে ডিবির অফিসে নিয়ে যখন তারা নাম ঠিকানা লিখছিল তখন তারা প্রশ্ন করেছিল, তাহলে তোরা দুই ভাই। আমি বলেছিলাম, হু। এরপর দুই ভাইকে একই রুমে রাখা হয়েছিল। আমার চোখের সামনেই আমার ছোট ভাইকে মেরে রাখা হতো। একদিন দেখলাম, ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাথরুমের দরজার সামনে পড়ে আছে। তার সারা শরীরে রক্ত। তার পাশ দিয়ে অফিসাররা বাথরুমে যাওয়া আসা করছে।

    আশরাফুল আলম আরও বলেন, ডিবির কাউকে চিনতে পারিনি। কিন্তু একজনের নাম ইমরান স্যার শুনেছিলাম চোখ বাধা অবস্থায়। আমাকে সারাদিন মারধরের পর রাতে একটা রুমে নিয়ে বেধে রাখত। পরে আমাকে অন্যখানে চালান করে দেয় তারা। আমাকে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে আছরের সময় পর্যন্ত টানা মারত। আর বলত, এই তোরা সকলে জামায়াত-শিবির করিস না, তোরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিস। এমন মারত যে আমরা দুই ভাই বাথরুমেও যেতে পারতাম না। একজনের সাহায্য নিয়ে তারপর যেতে হতো। তারা আমার চেয়ে আমার ছোট ভাইকে বেশি মারত।

    দেওয়া হলো জঙ্গি মামলা, সেই মামলায় সাত মাস কারাগারে

    আশরাফুল বলেন, আমাকে ডিবিতে ২৮ দিন রাখার পর চালান দেওয়া হলো মহেশপুর থানায়। সেই থানায় দুইদিন রাখার পর তারা চালান দিলো ঝিনাইদহ থানায়। সেখান থেকে জঙ্গি মামলা দিয়ে পাঠানো হলো কারাগারে। কারাগারে থাকলাম সাত মাস। আমি জঙ্গির সাথে সম্পৃক্ত এমন একটা মামলা দিয়েছে। সেই মামলায় এখনো খালাস পাইনি। আমি কারাগার থেকে জামিন হয়ে বের হওয়ার সময় আবারও ডিবি আমাকে তুলে নিয়ে গেল। পরে বুঝলাম তারা আমার পরিবারের কাছে টাকা পয়সা নেওয়ার জন্য নিয়েছিল। এরপর তার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয় জেনে তারা তাকে ছেড়ে দেয়।

    চাকরি হারান তিন ভাই ও তাদের ভাগিনা

    এই পরিবারটির মধ্যে মাসুদ একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তার অপর দুই ভাইয়ের একজন আসাদুজ্জামান একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে আর আশরাফুল আলম একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাদের ছোট ভাগিনা ছিলেন একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাদেরকে তুলে নেওয়ার পর তারা অনুপস্থিত থাকার কারণে সবার চাকরি চলে যায়। পরে তারা জীবিত প্রমাণাদি দিয়ে চাকরী ফেরতে পেলেও ভাগিনা চলে যান বিদেশে। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন।

    র‍্যাব-৬ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ!

    এই পরিবারের যাদের তুলে নিয়ে গুম করে রাখা হয়েছিল তাদের চারজনই জানিয়েছেন, র‍্যাব-৬ তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সবাইকে তুলে নেওয়ার পর রাখা হয়েছিল সেই ক্যাম্পে। পরে চালান করে দেয় দূরের কোনো জেলায়। আর এই কাজে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন মেজর মনির নামে এক অফিসার। যার বিরুদ্ধে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও করেছেন।

    র‍্যাব সদর দফতর যা জানাল

    র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি বিষয়টি জানলাম এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতনকে জানাব। তারা বিষয়টা জানার পর আশা করি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

    এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, এমন ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এটা অবশ্যই আনকমন ব্যাপার। আমার মনে হয় বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা দরকার। একই পরিবারের ওপর কেন এটা করা হলো! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা ইচ্ছেকৃতভাবে এটা করেছিল, নাকি লোকালি কারও ইন্ধনে তাদের সঙ্গে এমন করা হয়েছে সেটা পুরোপুরি তদন্ত করে দেখা দরকার।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email

    Related Posts

    সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় চাকরি হারালেন ইমাম

    June 17, 2025 5:53 PM

    যেসব কারণে কমে পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন, না জানলে বিপদ

    June 17, 2025 3:09 PM

    এটিএম বুথে কিশোরী ধর্ষণ, যেভাবে ধরা পড়ল নিরাপত্তাকর্মী

    June 17, 2025 12:48 PM
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Latest News

    ইরান ইসরায়েল যুদ্ধ অবশেষে উত্তর কোরিয়া মুখ খুললো আর তুলোধুনো করলো

    June 19, 2025 8:38 AM

    ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে ভেদ করছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র?

    June 19, 2025 8:26 AM

    ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছি : ইরান

    June 19, 2025 8:13 AM

    প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি যে আহ্বান জানাল ইরান

    June 19, 2025 8:03 AM
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest Vimeo YouTube
    © 2025 DMN Express.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.