বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য, বুড়িচং উপজেলা এনসিপির সদস্য নিহাদ সিদ্দিকী ও সমন্বয়ক কামরুজ্জামান পিয়াসের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন এক কৃষক । এমন একটি ভিডিও এসেছে আমাদের প্রতিনিধির হাতে।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলা ষোলনল ইউনিয়ন পূর্বহুড়া গ্রামের কৃষক শফিকুর রহমান শিমুল এই অভিযোগ করেন। বুড়িচং উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য নিহাদ সিদ্দিকী কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলা ষোলনল ইউনিয়ন ভরাসার গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম সিদ্দিকুর রহমান ছেলে। এটিএম সিদ্দিকুর রহমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। আরেক স্বঘোষিত সমন্বয়ক কামরুজ্জামান পিয়াস বুড়িচং গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুড়িচং উপজেলার একজন সমন্বয়ক জানান, তারা প্রশাসনের সাথে ছবি উঠিয়ে সেগুলো দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে। কয়েকজনের একটা সিন্ডিকেট আছে। এই দুইজন আছে তাদের মধ্যে।
জানা যায়, ষোলনল ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি সালেহ আহমেদের কাছে তারা দুইপক্ষের লোকজন গিয়ে সমঝোতার জন্য বৈঠক করেন । বৈঠকে প্রথমে ২৫ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে নারাজ শফিকুর রহমান শিমুল। বৈঠকটি হয়েছিল সমন্বয়ক নাহিদ সিদ্দিকীর ভাই কামরুলের ভরাসার বাজারে ওষুধ ফার্মেসিতে।
সমঝোতার বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা ষোলনল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালেহ আহমদ বলেন, আমার কাছে এসেছিল দুইপক্ষ। আমি তাদের বলেছি তোমরা তোমাদের মতো সমাধান কর। এই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না বলে এড়িয়ে যান তিনি।
২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার পর কুমিল্লার গোমতী নদীর চরে ফসলি জমির ওপর বালুর কাচড়ার স্তর পড়ে। কৃষকদের দাবি, এসব বালু না সরালে চরে শাকসবজি উৎপাদন করা যাবে না। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই বালু সরানোর উদ্যোগ নেয় স্থানীয় কৃষকরা । তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সনিয়া হক জানান, অনুমতি দেয়া হয়নি।
কৃষক সফিকুর রহমান শিমুল জানান, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় কৃষি জমির ওপর বালুর স্তর পড়ে। এগুলো সরানোর জন্য আমরা বুড়িচং উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করি। উনারা আমাদের বালু সরানোর অনুমতি দিয়েছেন।
কৃষি জমিকে চাষের উপযোগী করার জন্য বালুগুলো সরানোর জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ বালু কাটা হচ্ছে ।
তিনি আরো বলেন, বুড়িচং উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নিহাত আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে । সে কিছু দিন আগে বালুর সরানোর শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে । তার সাথে আরেক সমন্বয়ক কামরুজ্জামানও এসেছিল । বুড়িচং উপজেলার আরও কয়েকজন এটার সাথে জড়িত। প্রতিনিয়তই তারা আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করছে ।
তিনি জানান, কৃষক তাদের চাঁদা দিবে নাকি ফসল করবে এটাই বুঝতে পারছি না । কৃষি জমির বালু কেটে আমরা একটি স্থানে রাখছি । তারা বলছে তাদের চাঁদা দিতে হবে। সমন্বয়ক নিহাত বলেছেন ষোলনল ইউনিয়নের মাটির দায়িত্বে তিনি রয়েছেন।
কৃষকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক নিহাদ সিদ্দিকী বলেন, আমি মাটি কাটার ইউনিয়নের সমন্বয়ক । বুড়িচং উপজেলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার ইউনিয়নভিত্তিক মাটিকাটা কমিটি করে দিয়েছিলেন। ষোলনল ইউনিয়নের প্রধান দায়িত্বে ছিলাম আমি । যারা মাটি কাটতো তাদের বিরুদ্ধে আমরা ইউএনও অফিসে তথ্য দিতাম । আমি চাঁদা দাবি করিনি। আমি কেমন ছেলে, এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখবেন ।
ট্রাকপ্রতি ২০০ টাকা চাঁদা চেয়েছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বুড়িচং উপজেলার সমন্বয়ক কামরুজ্জামান পিয়াস জানান, সফিকুর রহমান শিমুলের সাথে আমি অন্য একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমি চাঁদা চাই নাই। তারা অবৈধভাবে মাটি কাটছে।
এই বিষয়ে জানতে এনসিপির বুড়িচং উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী তারেক ইমামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সমন্বয়ক চাঁদাবাজি করছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলেবৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসেন বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত না। শুধু কৃষক নয়, কারো কাছেই চাঁদা চাওয়া উচিত না। বিষয়টি আমি দেখতেছি।
বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সোনিয়া হক বলেন, চরের বালু কাটার জন্য আমরা কাউকে অনুমতি দেইনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়ে থাকলে এটা উনাদের বিষয় ।
বুড়িচং থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আজিজুল হক বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে এখনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।