ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে এক অভিনব ও চমকে দেয়া কায়দায় হত্যা করা হয় ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর। পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ট্রাকেই লুকানো ছিল দূরনিয়ন্ত্রিত মেশিনগান, আর সেটির নিয়ন্ত্রণ ছিল দেশের বাইরের স্যাটেলাইট সংযুক্ত অপারেটরের হাতে। পুরো অপারেশন সম্পন্ন হয় মাত্র ৬০ সেকেন্ডে। খবর এনডিটিভি
তেহরানের পাশের শহর আবসরদে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন ফখরিজাদেহ। রাস্তার পাশে একটি পরিত্যক্ত ট্রাকে লুকানো ছিল ৭.৬২ এমএম FN MAG মেশিনগান, যাতে যুক্ত ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি। গাড়ির নিচে, কাঁধে ও শেষে মেরুদণ্ডে গুলি লাগে এই পরমাণু প্রকৌশলীর।
অভিযানে ছোড়া হয় ১৫টি গুলি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার স্ত্রী বা তিন দেহরক্ষীর কেউ গুলিবিদ্ধ হননি। ঘটনার পরই বিস্ফোরণ ঘটানো হয় সেই ট্রাকে, যদিও বহু যন্ত্রাংশ অক্ষত থেকে যায়।
ফখরিজাদেহ ছিলেন ইরানের সবচেয়ে গোপন পরমাণু প্রকল্প ‘প্রজেক্ট আমাদ’-এর মূল রূপকার। পশ্চিমা গোয়েন্দারা তাকে ডেকেছিলেন ‘ইরানের রবার্ট অপেনহাইমার’। এমনকি ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তিতেও তার নাম ছিল না।
২০১৮ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘এই নামটি মনে রাখুন।’ এরপরই ধারণা জন্ম নেয়, তিনি শুধু বিজ্ঞানী নন, বরং একটি লক্ষ্যবস্তু।
ইসরায়েল দায় স্বীকার না করলেও পরে মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন বলেন, ‘ফখরিজাদেহ ছিল বৈধ টার্গেট।’ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করে, দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনুসরণ করছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। অস্ত্র যন্ত্রাংশ গোপনে ইরানে এনে জোড়া লাগিয়ে চালানো হয় এই নিখুঁত অভিযান।
ঘটনার পর তেহরানজুড়ে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। ইরান পারমাণবিক কার্যক্রমে গতি বাড়ায়, পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। দেশটির কট্টরপন্থীদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়।