ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের পর সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে তেল আবিব। সোমবার (৩০) রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি নেতারা বলছেন, ১২ দিনের সংঘাতে প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ায় এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোরও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার সোমবার বলেছেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ইসরায়েল, তবে গোলান মালভূমির মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়।’
গাজায় প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযান এবং প্রাক্তন সিরিয়ার নেতা ও ইরানের মিত্র বাশার আল-আসাদের উৎখাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
১৯৯৪ সালে জর্ডান এবং ১৯৭৯ সালে মিশরের পর ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী আরব রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। তবে, ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি আরব বিশ্বে গভীরভাবে অজনপ্রিয় ছিল।
জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী সিরিয়া এবং লেবাননের মতো দেশগুলোকে শান্তি ও স্বাভাবিকীকরণের বৃত্তে যুক্ত করার আগ্রহ রয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের অপরিহার্য এবং নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করা হবে। গোলান ইসরায়েল রাষ্ট্রের অংশ থাকবে।’
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের সময় সিরিয়ার কাছ থেকে এই অঞ্চল দখল করার পর ১৯৮১ সালে ইসরায়েল গোলান মালভূমিকে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করে। তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিরিয়ার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সিরিয়া কখনই গোলান হাইটস ছেড়ে দেবে না, এটিকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করে দামেস্ক।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা অবশ্যই ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের অংশ হতে হবে এবং আলাদা ট্র্যাকের মাধ্যমে পরিচালিত হবে না।
২০০২ সালের উদ্যোগে গোলান হাইটস, পশ্চিম তীর এবং গাজাসহ অধিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে ইসরায়েলের দখল প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে পূর্ব জেরুজালেমসহ একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানানো হয়।
গাজা যুদ্ধের সময়, আঞ্চলিক অন্যতম শক্তি সৌদি আরবও বারবার বলেছে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের শর্তাধীন। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার বলেন, ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিষয়ে শর্ত আরোপ করা অন্য রাষ্ট্রের জন্য গঠনমূলক নয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল এবং সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থী শাসকরা তাদের সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে এবং নতুন করে সংঘাত রোধ করার লক্ষ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে এবং মুখোমুখি বৈঠক করেছে।
একইসঙ্গে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন।