চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় তাদের কেরানীগঞ্জের বাসায় কেয়ারটেকারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তার নাম রফিকুল ইসলাম। তিনিই হোটেল থেকে তিনজনের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন।
চিকিৎসকদের ধারণা, বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন তিনজন। ময়নাতদন্তে পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ মামলায় রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে রমনা থানা পুলিশ।
এর আগে গত শনিবার সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন, তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার এবং তাদের প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈম হোসেনের চিকিৎসার জন্য গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই দিন বিকেলে মগবাজারের সুইট স্লিপে নামে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। ভর্তা-ভাত রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনিয়ে খান। আর এই খাবার নিয়ে আসেন কেয়ারটেকার রফিকুল। রাতেই কয়েক দফা বমি হয় তিনজনের। সকালে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যান তারা।
এ ঘটনায় গতকাল রোববারই রফিকুল ইসলামকে আটক করে রমনা থানা পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, খাবার নিয়ে এসেছিলেন রফিকুল। যেখান থেকে খাবার এনেছেন, সেই খাবার খেয়ে আর কেউ অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। শুধু এই তিনজন মারা গেছেন। যে কারণে খাবারে বিষাক্ত কিছু মেশানো হয়েছে কি না তা সন্দেহ করা হচ্ছে।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক কালবেলাকে বলেন, আমরা একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কথাবার্তায় সন্দেহ হচ্ছে। সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে।
সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলের এক কর্মচারী বলেন, পুলিশ হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে গেছে। ঘটনার দিন রাত ও সকালে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
আনোয়ারুল ইসলাম নামে হোটেলের এক কর্মকর্তা জানান, শনিবার বিকেলে মনির হোসেন তার প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে আসেন। এ সময় রফিকুল ইসলাম তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের হোটেলকক্ষ ভাড়া করে দেন। হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে, সন্ধ্যার দিকে একটি ব্যাগে করে খাবার নিয়ে আসেন রফিকুল। পরে তিনি চলে যান। রাত ৮টার দিকে মনির হোসেন নিচে নামেন। পরে পানি নিয়ে ওপরে উঠে যান তিনি।
আনোয়ারুল বলেন, মনির হোসেন ও তার স্ত্রী-সন্তানরা অসুস্থ হলেও হোটেলের কাউকে কিছু জানাননি। রোববার বেলা ১১টার দিকে রফিকুল তার মেয়েকে নিয়ে হোটেলে আসেন। তিনি প্রথমে স্বপ্না আক্তারকে ধরে পাশের আদ–দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে এসে মনিরকে একই হাসপাতালে নিয়ে যান। কক্ষে রফিকুলের মেয়ের চিৎকার শুনে হোটেলের কর্মচারীরা অচেতন অবস্থায় এই দম্পতির ছেলে নাঈমকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তিনজনেরই মৃত্যু হয়।
গতকাল রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজে এই তিনজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বিকেলে স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে যান।
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক জাকিয়া তাসনিম কালবেলাকে বলেন, পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষার ফল হাতে এলে জানা যাবে, তাদের মৃত্যু খাবারের বিষক্রিয়া থেকে হয়েছে কি না।
তিনি বলেন, নমুনাগুলো মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন আসার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে, তারা খাদ্যে বিষক্রিয়ায়, নাকি অন্য কোনো কারণে মারা গেছেন।