পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই ইরানের কাছে নতুন একটি চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওমানের মাধ্যমে এই বার্তা তেহরানে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে প্রস্তাবের নির্দিষ্ট শর্তাবলি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। খবর বিবিসির।
রোববার (১ জুন) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল বুসাইদি তেহরান সফরে গিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের কিছু ‘মূল উপাদান’ তুলে দেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চুক্তিটি গ্রহণ করলে তা ইরানের স্বার্থেই হবে।
এই প্রস্তাব এমন একসময়ে এসেছে, যখন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি) জানিয়েছে, ইরান ফের উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইরানের কাছে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে—যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার খুব কাছাকাছি।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই ইউরেনিয়াম যথাযথভাবে পরিশোধন করলে অন্তত ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। ইরান এমন একটি দেশ, যার কাছে এখনও কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তবুও এত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম তৈরি করছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘এই চুক্তি ইরানের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে না।’
চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমরা এই প্রস্তাবের জবাব দেব আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের অধিকার অনুসারে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি আইএইএ বোর্ডে ইরানকে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ইরান এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত এলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ওমানের মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে। তবে মূল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার অধিকার।
আইএইএ-এর সর্বশেষ তথ্য বলছে, ইরান গত তিন মাস ধরে প্রতি মাসেই এমন পরিমাণ ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে, যা একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ইরান চাইলে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনে সক্ষম হতে পারে।
তবে তেহরান বরাবরই বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।