ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য হলো তেহরানের দক্ষিণে অবস্থিত কঠোরভাবে সুরক্ষিত ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করা, যেটিকে তারা “বড় পুরস্কার” হিসেবে দেখছে। তবে সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক ও বিশ্লেষক আলোন পিঙ্কাসের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিকভাবে জড়িত না হলে, এই লক্ষ্য পূরণ করা ইসরায়েলের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পিঙ্কাস বলেন, “ইসরায়েল একা ইরানের পারমাণবিক-সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের বোমা, বোমারু বিমান ও অত্যাধুনিক ডেলিভারি সিস্টেম—যা ইসরায়েলের নেই।”
তিনি বলেন, “সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে জড়াতে আহ্বান জানাচ্ছেন।” ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, যদি এখনই ইরানের সঙ্গে সংঘাত বন্ধ হয়, তাহলে তারা কৌশলগতভাবে কিছুই অর্জন করতে পারবে না। তাই তেহরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস না করা পর্যন্ত তেল আবিব থামতে রাজি নয়।
পিঙ্কাস বলেন, “যদি উত্তেজনা প্রশমিত হয়, সেটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমেই হবে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদিনই পরস্পরবিরোধী বার্তা দিচ্ছেন, ফলে তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়।”
ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র মাটি ও পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং বিমান হামলা প্রতিরোধে উপযোগীভাবে গড়া। সেটিকে ধ্বংস করাকে ইসরায়েলি সামরিক পরিকল্পনাকারীরা “বড় পুরস্কার” হিসেবে বিবেচনা করছেন। তবে তারা জানেন, এটি সহজ কাজ নয়।
পিঙ্কাস আরও বলেন, “ইসরায়েলি জেনারেলদের পছন্দের পন্থা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে এই চূড়ান্ত আঘাত করা। কিন্তু তারা যথেষ্ট বাস্তববাদী এবং বুঝতে পারছেন যে, এমনটা নাও হতে পারে।”
পারমাণবিক সংকট ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা
এই মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। ইরান একদিকে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্রদের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করছে।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে যে, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র অর্জন করে, তাহলে তা শুধু ইসরায়েলের জন্যই নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের ফোর্ডো স্থাপনা ধ্বংস করা এতটা সহজ নয়, কারণ এটি এতটাই সুসংরক্ষিত যে, সাধারণ বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সেখানে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ঘটানো প্রায় অসম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্র কি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াবে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সক্ষমতা থাকলেও একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে দ্বিধান্বিত অবস্থানে রয়েছেন। হোয়াইট হাউস থেকে প্রতিদিন পরস্পরবিরোধী বার্তা আসায় স্পষ্ট নয়, ওয়াশিংটন শেষ পর্যন্ত সরাসরি জড়িয়ে পড়বে কিনা।
এই মুহূর্তে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং যে কোনো সময় একটি বড় ধরণের সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইসরায়েল চায়, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা চিরতরে ধ্বংস হোক, কিন্তু এর জন্য যদি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা না মেলে, তাহলে তেল আবিব কতদূর যেতে প্রস্তুত—সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
সূত্র : আল জাজিরা