চট্টগ্রামের পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জায়েদ নূরের বিরুদ্ধে সাংবাদিক হয়রানি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নতুন মাত্রা পেয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) এক ভুক্তভোগী সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিস্ফোরক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন—কীভাবে একজন ওসি ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দালালে রূপ নিতে পারেন, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক প্রনব বড়ুয়া অর্নব জানান, গত বছর তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পথে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে তাকে আটক করা হয়। পটিয়া থানার ওসি জায়েদ নূরের মিথ্যা তথ্যে তাকে ‘বহু মামলার আসামি’ বলে উল্লেখ করে আটকে রাখা হয়। পরদিন তদন্ত ছাড়াই পুরনো চারটি মামলায় তাকে ‘অজ্ঞাত’ আসামি করে আদালতে চালান দেওয়া হয়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ২৩ দিন জেলে ছিলেন।
অর্নব তার পোস্টে দাবি করেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলাম না। শুধু একজন সাংবাদিক ও সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবে। ওসি জায়েদ নূর কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি, আবার কখনো জামায়াত ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেন। যার কাছে টাকা, তাকেই রক্ষা করেন—আর বাকিদের বিরুদ্ধে চালান দেন মিথ্যা মামলা।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি ছাড়াও আরও অনেক সাংবাদিককে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। অনেকে জিডি করেছেন। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির বলয় থাকায় ওসি এখনও বহাল তবিয়তে আছেন।”
এ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগও করেছেন বলে জানান। যদিও তদন্ত হয়েছে, কিন্তু ওসি তার সর্বোচ্চ প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। “সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়, আমি সত্য বলার অধিকার থেকে সরে আসিনি, আসবও না,” বলেন প্রনব বড়ুয়া।
এদিকে, ওসি জায়েদ নূরের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে পটিয়ায় ছাত্র আন্দোলন তীব্রতর হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের লাঠিচার্জে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন সকাল থেকে ৮ ঘণ্টা ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি—ওসি জায়েদ নূর, সার্কেল এসপি আরিফ ও থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা আসাদের অপসারণ। ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তারা আপাতত অবরোধ স্থগিত করেছেন, তবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—দাবি না মানলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার জানিয়েছেন, পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে।