কিশোরগঞ্জে বিয়ের তথ্য গোপন করে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন নাঈম হাছান নামে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেলায় এ নিয়ে তোলপাড় চলছে।
নাঈম হাছান কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের কিষ্টপুর গ্রামের আব্দুল মোতালিবের ছেলে। আব্দুল মোতালিব ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও চৌগাংগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি ঘটা করে বিয়ে করেন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী নাঈম হাছান। তাঁর শ্বশুরবাড়ি জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামে। খামা গ্রামের জসীম উদ্দীনের মেয়ে আজিজুন্নাহার সাথীর সঙ্গে বিয়ের বরযাত্রী ছিলেন চৌগাংগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ছাইফুল ইসলাম। ৬ লাখ টাকা দেনমোহরে নাঈম হাছান ও আজিজুন্নাহার সাথীর বিয়েতে ১ নম্বর সাক্ষীও ছিলেন ছাইফুল ইসলাম। কিন্তু এর ৯ মাস পর গত অক্টোবরে বাংলাদেশ পুলিশের ক্যাডেট উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ইউপি চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলামই অবিবাহিত হিসেবে নাঈম হাছানকে দিয়েছেন বৈবাহিক অবস্থার সনদ।
জানা গেছে, অবিবাহিতের এই সনদ ব্যবহার করে বিবাহিত নাঈম হাছান এসআই পদে নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছেন। তাঁর রোল নম্বর-১০৯৭২৩। ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ২০২৫-এ নিয়োগের লক্ষ্যে চূড়ান্ত ফলাফলে ৪৬০ নম্বর ক্রমিকে তাঁর নাম রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণার আগে ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির বড় পদপ্রত্যাশী হিসেবে সংগঠনটির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন নাঈম হাছান। এ ছাড়া তাঁর বাবা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা।
অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায় থাকা নাঈম হাছান নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং বিবাহিত হওয়ার পরও পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের সময় বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যান ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাফর ইকবাল।
গত ৩০ জুন চৌগাংগা ইউনিয়নের বিড়ারভিটা গ্রামের মৃত শাহেদ আলীর ছেলে আব্দুর রব কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবর নাঈম হাছানের তথ্য গোপন এবং জালিয়াতির তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
অভিযোগে বলা হয়, নাঈম হাছান বাংলাদেশ পুলিশের এসআই নিয়োগ পরীক্ষা ২০২৪-এ ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে অবিবাহিত বলে নিয়োগ পেয়েছেন। এর প্রমাণ হিসেবে অভিযোগের সঙ্গে নাঈম হাছানের বিয়ের কাবিননামা যুক্ত করা হয়।
এদিকে গত অক্টোবরে ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর বৈবাহিক অবস্থা অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে (তালাকপ্রাপ্ত/তালাকপ্রাপ্তা গ্রহণযোগ্য নয়) এবং শিক্ষানবিশকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই অবিবাহিত থাকতে হবে শর্ত দেওয়া হয়েছে।
বরযাত্রী হিসেবে যাওয়া এবং বিয়ের সাক্ষী হওয়ার পরও কীভাবে অবিবাহিত হিসেবে সনদ দিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে চৌগাংগা ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছাইফুল বলেন, ‘বিয়েতে সাক্ষী ছিলাম কি না, মনে নেই। তবে নাঈম বিয়ে করেছে। একটা প্রত্যয়ন লিখে এনে আমাকে দস্তখত করার কথা বলেছিলেন, দস্তখত করে দিয়েছি। এখন অভিযোগ পাওয়ার পর গতকাল (মঙ্গলবার) আবার বিবাহিত হিসেবে নতুন করে প্রত্যয়ন দিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমার ধারণা না থাকায় এমনটি হয়েছে।’
পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় বৈবাহিক অবস্থার তথ্য গোপনের বিষয়টি কেন ধরা পড়েনি, প্রশ্নের জবাবে ইটনা থানার ওসি মো. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তখন পুলিশকে এ ব্যাপারে কেউ তথ্য দেয়নি। তাই আমরা বিষয়টি জানতে পারিনি। এখন বিষয়টি জানার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, ‘এটি সত্য নয়। আপনি আমার সম্পর্কে জানেন। সে রকম প্রমাণিত হলে আমি চেয়ার ছেড়ে চলে যেতে প্রস্তুত আছি।’
জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বাজিতপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়টি তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’