আজ ১৮ জুলাই। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে ২০২৪ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ প্রায় অচল ছিল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইন্টারনেট ও টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার।
ঘটনাবহুল এই দিনে একদিকে যেমন যুগান্তকারী কমপ্লিট শাটডাউন আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধ কর্মসূচি চলে, তেমনি অন্যদিকে মুগ্ধ ও ফাইয়াজসহ ছাত্র-জনতার ওপর চলে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ।
‘পানি লাগবে, পানি!’- ২০২৪ সালের জুলাইয়ের উত্তাল রাজপথে তৃষ্ণা নিবারণের ফেরিওয়ালা মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের সেই কথা আজ কেবলই স্মৃতি আর প্রেরণা। স্বৈরশাসকের বুলেট বুকে নিয়ে যিনি লিখে গেছেন আত্মত্যাগের অমর ইতিহাস।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, মুগ্ধ ঘুমানোর সময় তার এক চোখ খানিকটা খোলা থাকতো। সেদিনও একইভাবে এক চোখ খোলা আর আরেক চোখ বন্ধ ছিল। আমি এসে (হাসপাতালে) দেখে মনে করেছিলাম সে রেস্ট নিচ্ছে। ওই সময় তার বুকে যেসব মেশিন লাগানো ছিল সেগুলো খুলে নেয়া হচ্ছিল। পরে আমি ডাক্তারকে আমার সামনে আবারও সেগুলো লাগিয়ে চেক করতে বলি। তখন মনিটরে ইসিজির লাইনটা একদম সোজা দেখতে পাই, কোনোরকম প্রতিক্রিয়া ছিল না।
মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, মুগ্ধর চোখের নিচে ছোট্ট একটি তিল ছিল, এটাই একমাত্র পার্থক্য ছিল আমাদের দু’জনকে আলাদা করার। সে শহিদ হওয়ার পর আমি খেয়াল করি আমার চোখের নিচেও তিলজাতীয় এমন একটি মার্ক তৈরি হচ্ছে।
ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে স্নিগ্ধ বলেন, বাবা-মাসহ সবাই যখন আমাকে দেখে সবারই মুগ্ধের কথা মনে পড়ে। যতবারই আয়নার সামনে যাই, তার কথা মনে পড়ে। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে যে, আমার মতোই আরেকটা মানুষ ছিল সে এখন নেই।
মুগ্ধের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, ভাইকে হারানোর সঙ্গে আরও অনেককিছুই আমরা আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের একমাত্র চাওয়া ছিল আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচার, তা নিয়ে আমরা খুবই আশাহত।
যারা আহত হয়েছিলেন তারাসহ সবাই মিলে দেশের পরিবর্তনের জন্য এখনো যদি আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে এগিয়ে না আসি, তাহলে কোনোভাবেই পরিবর্তন সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন মুগ্ধের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত।