Tuesday, July 8, 2025

বিএনপি যেসব সংস্কার প্রস্তাবে একমত, যেগুলোয় দ্বিমত

আরও পড়ুন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপি কোন কোন প্রস্তাবে একমত হয়েছে, আর কোন কোন বিষয়ে একমত হতে পারেনি, সেই পরিসংখ্যান হাজির করেছে দলটি। রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মির্জা ফখরুল দাবি করেন, বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের প্রতিনিধিরা অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছেন। দীর্ঘ আলোচনার মধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবের বিপরীত কিংবা নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ায় এবং তা নিয়ে অনেক সময় অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণে ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বলেই আমাদের প্রতিনিধিরা ধৈর্য ধরে আলোচনা শুনছেন এবং তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশনকে সহযোগিতা করছেন।

কিছু বিষয়ে বিএনপি কেন একমত হতে পারেনি, সেই ব্যাখ্যা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার নামে জনগণের নির্বাচিত সংসদ, নির্বাচিত সরকার তথা রাষ্ট্র কাঠামোকে দুর্বল ও অকার্যকর করার কোনো প্রস্তাবের যুক্তিসংগত বিরোধিতা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং জনগণকে জবাবদিহি করতে বাধ্য কোনো সরকারকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুর্বল ও অকার্যকর করা অবশ্যই সংস্কারের মূল আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে এমন কোনো প্রয়াসে সমর্থন জানানো সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থি বলে তা থেকে বিরত থাকার অর্থ সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা নয়; বরং এ প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করা।

আরও পড়ুনঃ  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা না থাকলে দেশ মহাসংকটে পড়বে: মঞ্জু

পুলিশ সংস্কার কমিশন: বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ কমিশনের প্রস্তাব এখনো আলোচনায় আসেনি। তবে ওই কমিশনে দলের নেতারা যতটুকু জানিয়েছেন, তা হলো—র‌্যাব বিলুপ্তিসহ প্রায় সব বিষয়েই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন: কিছু ছাড় দিয়ে ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতেই বিএনপি সম্মতি জানিয়েছে। শুধু ২৯ নম্বর সুপারিশে বিএনপি একমত নয়। ২৯ নম্বর সুপারিশে আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধন করে এটি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে যে, দুদকের চাওয়া কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য হবে না।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন: কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টি প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে, পাঁচটিতে আংশিক একমত এবং পাঁচটি সুপারিশে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। ১১টি প্রস্তাবে বিএনপি একমত হতে পারেনি, যেগুলো দেশে প্রদেশ সৃষ্টি, পদোন্নতি ও অন্যান্য প্রশাসনিক অসংগতির বিষয়। পদোন্নতির বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় কার্যকর রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  রাজনীতির হিসাব বদলে যাচ্ছে : রনি

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন: গুরুত্বপূর্ণ ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টি সুপারিশে বিএনপি একমত হয়েছে, ৯টিতে আংশিকভাবে একমত এবং ১৮টিতে ভিন্নমত পোষণ করে যুক্তিসহ পরামর্শ দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাবিষয়ক সব প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। তবে এর কিছু বিষয়ে নির্বাচিত সংসদে আইন প্রণয়ন কিংবা এরই মধ্যে কোনো অধ্যাদেশ হলে তা সংসদে রেটিফাই ও সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রয়োজন হবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থাবিষয়ক সংস্কার কমিশন: কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে বিএনপি একমত হয়েছে, ১৪টিতে আংশিকভাবে একমত এবং ৬৪টিতে ‘ভিন্নমতসহ একমত’ হয়েছে। অর্থাৎ এসব বিষয়ে পরিবর্তনে একমত হয়ে বিভিন্ন আইনে ও বিধিতে সংশোধনী কীভাবে অধিকতর কার্যকর হবে, তা প্রস্তাব করেছে বিএনপি।

২৪টি প্রস্তাবে বিএনপি একমত হতে পারেনি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা-সংক্রান্ত ১২টি আইন ও ছয়টি নীতিমালা আছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও নির্দিষ্ট বিধান আছে। এসব প্রস্তাবের বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং কয়েকটি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে স্পষ্টতই বাধা সৃষ্টি করে তাদের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে। বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আনা সব প্রস্তাবে একমত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ বললেন এনসিপি নেত্রী

সংবিধান সংস্কার কমিশন: সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি সুপারিশে বিএনপি দফাওয়ারি মতামত দিয়েছে এবং অধিকাংশ সুপারিশে একমত হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ—দুই বিষয়ে আমরাই ছাড় দিয়েছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিধান বিশ্বের কোথাও না থাকার পরও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিএনপি সম্মত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়েও বিএনপি তাদের প্রস্তাব থেকে সরে এসে একমত হয়েছে। জাতীয় সংসদে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটিসহ আসন সংখ্যার অনুপাতে সভাপতির পদ দিতেও বিএনপি সম্মত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা-সংক্রান্ত আর্টিকেল ৪৯ পরিবর্তনে বিএনপি সম্মত হওয়ায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানান দলটির মহাসচিব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হয়ে তারা তা বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এমন বহু সংস্কার প্রস্তাবে শুধুই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা একমত হয়েছি, যেগুলোর বাস্তবায়ন অত্যন্ত দুরূহ এবং যে উদ্দেশ্যে এসব প্রস্তাব, তা অর্জনের সাফল্য প্রশ্নসাপেক্ষ। রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সংসদীয় কার্যক্রমে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা যুক্তিগ্রাহ্য মতামত দিয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ