Tuesday, July 8, 2025

ভাড়া দিতে বিলম্ব, মা-ছেলেকে ঘরে রেখে দরজায় তালা দিলো মালিক

আরও পড়ুন

প্রতি মাসের ৫ তারিখ বাসার ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। গত জুন মাসের ভাড়া দিতে মাত্র ৩ দিন বিলম্ব হওয়ায় মা-ছেলেকে ঘরের ভেতরে রেখেই দরজার বাহিরে তালা দিয়ে দেন বাসার মালিক। পরে আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করে বিষয়টি জানায় ভুক্তভোগী পরিবার। এরপর স্বজনরা পুলিশকে জানালে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর আত্মীয়-স্বজন পুলিশের সহায়তায় তালা খোলে বের করা হয়। 

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এই ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের রায়পাড়া নির্ঝর ১৮ নম্বর বাসায়। 

বাসার মালিকের নাম ইউসুফ চৌধুরী, তিনি পিটিআইয়ের বিপরীত দিকের বাসিন্দা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে গেলে তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

জানা যায়, প্রায় ৪ বছর ধরে ইউসুফ চৌধুরীর রায় পাড়ার বাসায় ভাড়া থাকে থাকেন ইমন বর্মনের পরিবার। ইমন মঙ্গলকাটা এলাকার আলহাজ মতিউর রহমান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আড়াই বছর আগে ইমনের বাবা রামপ্রসাদ বর্মন মারা যান। পরে সংসারের হাল ধরেন ইমন। পৌর শহরে বিভিন্ন এলাকায় ঝাল-মুড়ি বিক্রি করে লেখাপড়া ও বাসা ভাড়াসহ সংসারের খরচ চালায় সে। প্রতিমাসে বাসা ভাড়া দিতে হয় ৬ হাজার ৬০০ টাকা। ৪ বছর ধরেই নিয়মিত বাসা ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছিল। গত জুন মাসের বাসা ভাড়া চলতি মাসের ৫ তারিখে দেওয়ার কথা থাকলেও হাতে টাকা না থাকায় দিতে পারেন নি ইমন। কয়েক দিনের সময় চান। 

আরও পড়ুনঃ  প্রবাসীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ স্বজনের

ইমনের পরিবারের অভিযোগ, গত ৫ জুলাই শনিবার ভাড়া না দেওয়ায় ৬ জুলাই বাসার গ্যাস সংযোগ বন্ধ করেন বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী। এরপর মঙ্গলবার সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখেন দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। জানালা দিয়ে প্রতিবেশীদের ও মোবাইলে ফোনে আত্মীয়-স্বজনকে বিষয়টি জানালে পুলিশের সহায়তায় দুপুর ২ টার পরে তালা খোলে দেওয়া হয় এবং গ্যাস সংযোগ চালু করে দেওয়া হয়। 

ভুক্তভোগী ইমন বর্মন বলেন, বাবা মারা যাওয়ায় পর আমি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঝাল মুড়ি বিক্রি করে খেলাপাড়ার খরচ ও সংসার চালাই। চার বছর ধরে নিয়মিত ৬ হাজার ৬০০ টাকা বাসা ভাড়া দেই। ভাড়া দিতে দেরি হওয়ায় ৩ দিন আগে গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা খেয়ে-না খেয়ে কষ্ট করে ছিলাম। মঙ্গলবার সকালে এসে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে চলে গেছেন। প্রথমে জানালা দিয়ে প্রতিবেশীদের জানাই। পরে আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা থানায় গিয়ে বিষয়টি জানালে পুলিশ এসে চাবি উদ্ধার করে দরজার তালা খোলে ও গ্যাস সংযোগ চালু করে দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  জুলাই নিয়ে পুলিশের আপত্তিকর পোস্ট, প্রতিবাদে আগুন জালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ

ইমনের মা জবা রানী বর্মন বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের পরিবারে একটি অনুষ্ঠান গেছে। এজন্য কয়েকদিন পরে বাসা ভাড়া দিতে বলায় খারাপ আচরণ করেছে। কয়েকদিন আগে গ্যাসের চুলা বন্ধ করেছে। আমাদেরকে ঘরের ভেতর রেখেই দরজায় তালা মেরেছে দিয়েছিল। 

ইমনের প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি বা জীবনে শুনিনি। সামান্য টাকার জন্য এমন আচরণ কীভাবে করে মানুষ। ঘরে আটকা থাকা অবস্থায় যদি কোন অঘটন ঘটে যেত তাহলে এর দায়ভার কে নিতো? 

‎‎পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া স্বপন চন্দ্র বলেন, চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমরা এসে দেখি ঘরের দরজার বাহিরে তালা লাগানো। মানুষের যে কোন সমস্যা হতেই পারে। মাত্র তিন দিন পার হওয়ায় ভাড়াটিয়ার সাথে এমন অমানবিক আচরণ করা ঠিক হয়নি।

আরও পড়ুনঃ  মসজিদের দোতলায় শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ নিয়ে যা জানা গেল

বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরীকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে মোবাইল ফোনে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ভাড়াটিয়া বিলম্ব করে ভাড়া দিলেও তাকে সময়মত কারেন্ট বিল, গ্যাস বিলের টাকা পরিশোধ করতে হয়। ইমনের পরিবারকে তিনি এক বছর আগে নোটিশ দিয়েছেন, কিন্তু এখন তারা বাসা ছেড়ে যাচ্ছে না।

এদিকে ঘটনার পর বিকেল ৪টায় ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে দেখা করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী। এ সময় তিনি গত জুন, চলতি জুলাই ও আগস্ট মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে তারা অন্য কোথাও নতুন বাসায় উঠবে। মালিকের এমন প্রস্তাবে সম্মতি জানায় ভুক্তভোগী ইমন বর্মনের পরিবার।

সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কালাম বলেন, শহরের রায়পাড়ায় একটি পরিবার বাহির থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে চাবি উদ্ধার করে দরজার তালা খোলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে কাউকে ভেতরে রেখে বাহিরে তালাবদ্ধ করে দেওয়া অমানবিক কাজ। 

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ