পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকার ব্যবসায়ী সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় মামলার এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবার। বাদী দাবি করেছেন, মূল অভিযুক্ত চারজনকে বাদ দিয়ে অন্য তিনজনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে, বাদীর স্বাক্ষর নিয়েই এজাহার দায়ের হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা ৪১ মিনিটে মিডফোর্ডের রজনী ঘোষ লেনে নিজের দোকানে কাজে ব্যস্ত ছিলেন সোহাগ। হঠাৎ দলবল নিয়ে দোকানে ঢুকে পড়ে সারওয়াব হোসেন টিটুর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তার সঙ্গে ছিল মাহমুদুল হাসান মঈন, লম্বা মনির, টিটন গাজী ও আরও অনেকে। কথোপকথনের মাঝখানে আলমগীর নামে এক যুবকের অকথ্য ভাষায় গালাগালির জেরে সোহাগ উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
এরপরই শুরু হয় হামলা। টিটু গ্রুপের সদস্যরা সোহাগকে দোকান থেকে টেনে হিচড়ে বাইরে বের করে আনে। বাধা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন সোহাগের সঙ্গী ইসমাইল। এরপর রক্তাক্ত সোহাগকে মিডফোর্ডের তিন নম্বর গেটের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে সিমেন্টের ব্লক ও পাথর দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন লম্বা মনির, আলমগীর, রেজোয়ান উদ্দিন, মাহমুদুল হাসান মইন, নান্নু প্রমুখ।
সোহাগের পরিবার জানায়, ঘটনার পর তারা ২৩ জনকে আসামি করে একটি এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, এজাহারে মূল অভিযুক্ত চারজনকে বাদ দিয়ে নতুন তিনজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। বাদীর অভিযোগ, যেই এজাহারটি পড়ানো হয়েছিল, সেটিতে তার মা স্বাক্ষর করেছেন বলে বলা হলেও পরে অন্য একটি কাগজে তার স্বাক্ষর নেয়া হয়।
এজাহারে সাফা, কোভিদ, লাকি রজ্জা আলী পিন্টু এবং মামলার এক নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদ ইসমাইলের মামার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেটি পরিবার কখনোই চায়নি। বাদীর ভাষ্য:
“আপনারা বুঝতেই পারেন, একজন সাক্ষী কখনোই নিজের মামাকে ফাঁসাবে না। ডিসি স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনি আপনার ভাইয়ের বিচার চান, না আপনার মামার সেফ এক্সিট চান?”
হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে সোহাগের গোডাউন তালা দেওয়ার ফুটেজ পুলিশের কাছে জমা দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা হাসপাতালের সামনে ফাঁকা ফায়ারিংয়ের একটি ঘটনাতেও পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন বাদী।
এছাড়া, কোতোয়ালী থানার মামলা হলেও বনশাল থানার উপপরিদর্শক এমাদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন নিহতের পরিবার। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওই কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখান।
ডিএমপির কর্মকর্তারা জানান,
“এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। তদন্তে আরও এজাহার বহির্ভূত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”
এলাকাবাসী এবং নিহত সোহাগের পরিবার প্রত্যাশা করছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কলকাঠি নেড়া কুশীলবদের মুখোশও শিগগিরই উন্মোচিত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে।