Saturday, July 19, 2025

আজ দুই বিষয়ে বার্তা দেবে জামায়াত

আরও পড়ুন

সাত দফা দাবিতে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো একক সমাবেশ ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ শনিবার দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হবে। তবে সকাল থেকেই ইসলামী সংগীত পরিবেশনসহ নানা আয়োজন থাকবে সমাবেশে। এর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত দলীয়ভাবে কোনো সমাবেশ করেনি। বিভিন্ন দলের সঙ্গে ও জোটের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছিল। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, আজকের সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগম ঘটবে। জামায়াতের উদ্দেশ্য—বড় ধরনের সমাবেশ করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করা। সমাবেশ থেকে নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। গণহত্যার বিচার ও সংস্কার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার ভিত্তিতে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা; এ দুই বিষয়ে দলের প্রধান দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন। পাশাপাশি সমাবেশের মূল মঞ্চে জামায়াতের সমাবেশে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কর্মপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দলের নেতারা এবং জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এরই মধ্যে ঢাকায় দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ, বিরাট আকৃতির ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে সারা দেশে। থাকবে পর্যাপ্ত ছাউনি, চিকিৎসক দল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, দুই মহানগরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে কয়েক লাখ লোক অংশ নেবে। ১০০ ফুট লম্বা এবং ৩৬ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে এলইডি মনিটর, অতিথিদের বসার সুব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার সংযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, এরই মধ্যে সমাবেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলের আমিরসহ শীর্ষ নেতারা ঢাকা মহানগরসহ দেশজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রস্তুতি সভা, মিছিল-সমাবেশসহ সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। ১০ হাজারের মতো বাস এবং কয়েক জোড়া ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে। লঞ্চেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ গতকাল সমাবেশের উদ্দেশে রওনা দেন। বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জামায়াতের টার্গেট আজকের সমাবেশে ১৫ লাখ লোক সমাগম ঘটানো। তবে বিএনপির কোনো নেতা সমাবেশে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দলীয় সূত্র জানায়।

আরও পড়ুনঃ  গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন, টুঙ্গিপাড়ার মানচিত্র বদল : রনি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যখন তীব্র বিতর্ক চলছে, সে সময়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় বিশাল সমাবেশ করতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে জামায়াত স্মরণকালের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে। এরই মধ্যে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে জামায়াতের প্রতিনিধিদল। বিপুল পরিমাণ লোকের গাড়ি পার্কিং, অজু-নামাজের ব্যবস্থা এবং টয়লেট স্থাপন, মেডিকেল বুথ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।

জানা গেছে, এতদিন ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনোই এককভাবে বড় সমাবেশ করেনি দলটি। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘জাতীয় সমাবেশ’ করার মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দিতে চাইছে দলটি। এই সমাবেশে ভিন্ন বা বিশেষ কিছু রয়েছে বলে জামায়াতের নেতারা জানান।

আরও পড়ুনঃ  যারা মব তৈরি করেছে, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না : তারেক রহমান

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র চার দিন আগে জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাহী আদেশে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিলেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হলে সে সময় জামায়াতও রাজপথে ব্যাপক সক্রিয় হয়। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বসে নেই দীর্ঘদিন কোণঠাসায় থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিক, সামাজিক, কূটনৈতিক, সাংগঠনিকসহ চতুর্মুখী তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করছে দলটি।

জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাত দফা দাবিতে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামী। দাবিগুলো হচ্ছে—১. সব গণহত্যার বিচার, ২. প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ৩. জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, ৪. জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, ৫. সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, ৬ প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এবং ৭. জাতীয় নির্বাচনের আগে সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা।

জাতীয় সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে এরই মধ্যে জামায়াতের নেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলেও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ অন্যরা উদ্যান পরিদর্শন করেন। এ সময় গোলাম পরওয়ার বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা আবহাওয়া ভালো দেখছি। সমাবেশে অসংখ্য মানুষের সমাগম হবে। সেজন্য চেষ্টা করেছি অজু ও খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করা। ১৫টি মেডিকেল বুথ স্থাপন করা হবে। সেখানেও কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার পানির বোতল থাকবে। তিনি বলেন, ৩৩টি এলইডি ডিসপ্লে, তিন শতাধিক মাইক, পর্যাপ্ত লাইটিং এবং গণমাধ্যম কর্মীদের বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আটটি উপকমিটি করা হয়েছে। সমাবেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সবার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রস্তুতি সমাপ্তি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ব্রেকিং নিউজ: বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে সমাবেশের উদ্দেশ্যে গত রাতেই অনেকে রওনা হয়েছেন। ঢাকার বাইরে থেকে যেসব গাড়ি আসবে, সেগুলো রাখার স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি স্পটে জামায়াত-শিবিরের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। সবমিলিয়ে সমাবেশ সফলে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ঢাকা মহানগরীর জনসাধারণসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন জামায়াতের সেক্রেটারি।

সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম গতকাল শুক্রবার কালবেলাকে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এবং বিশেষ করে ফ্যাসিবাদ আমলে দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর জামায়াতে ইসলামীর ওপর অসংখ্য জুলুম-অত্যাচার করা হয়েছে। এখন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের সেইভাবে প্রমাণিত করতে চাই। তিনি বলেন, বিরাট আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ৩০০ জনের মতো মানুষ বসতে পারেন। এরই মধ্যে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার ও সংস্কার শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার ভিত্তিতে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়টিতে মূল ফোকাস থাকবে বলে তিনি জানান।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ