বগুড়ার ইসলামপুর হরিগাড়ি পশ্চিমপাড়ায় প্রেমে প্রত্যাখ্যানের জেরে এক তরুণের ছুরিকাঘাতে গৃহবধূ উম্মে হাবিবা (২০) ও তার শাশুড়ি লাইলী বেওয়া (৬৫) নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে।
এ সময় স্থানীয় পৌরটোপা বটতলায় নিজ মুদিদোকানে ছিলেন স্কুলছাত্রীর বাবা বুলবুল আহম্মেদ প্রামাণিক ও মা পারভীন আক্তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে গৃহবধূ হাবিবা মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে শ্বশুর বুলবুল আহম্মেদকে ফোন করেন। কল রেকর্ডে শোনা যায়, হাবিবা বলছেন, ‘হ্যালো, আব্বু। বাড়িত আসেন তো।’ হঠাৎ বাড়িতে যাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে আহম্মেদ জিজ্ঞাসা করেন, ‘ক্যা (কেন)?’ বুলবুল বলেন, সঙ্গে সঙ্গে ফোনে চিৎকার, চেঁচামেচি আর কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।
এরপর আর কারও জবাব মেলেনি। দ্রুত বাড়ি ছুটে যান তিনি। দেখেন, এক পাশে পড়ে আছেন তার মা এবং বউমার রক্তাক্ত মরদেহ। অন্য পাশে রক্তাক্ত জখম হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তার মেয়ে। বাড়ি ঢুকতেই দেখেন রক্তমাখা চাকু হাতে দৌড়ে পালাচ্ছেন সৈকত হোসেন। এ সময় সৈকতের সঙ্গে অন্য লোকও ছিল।
পরিবারের দাবি, প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে গত বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই কিশোরীর বাড়িতে যায় সৈকত আহমেদ (১৮) নামের এক তরুণ। সেখানে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করেন সৈকত। এ সময় রক্ষা করতে গেলে তার দাদি লাইলী ও ভাবি হাবিবাকে ছুরি মেরে পালিয়ে যান সৈকত। ওই সময় মহল্লার পৌরটোপা বটতলা এলাকায় নিজ মুদিদোকানে বেচাবিক্রি করছিলেন বুলবুল আহম্মেদ। দোকানে তার সঙ্গে স্ত্রী পারভীন আক্তারও ছিলেন। এক পর্যায়ে রাত ৮টা ৩৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে বুলবুল আহম্মেদের মুঠোফোনে কল করেন হাবিবা।
পুলিশ জানায়, ওই কিশোরীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন সৈকত। তিনি ইসলামপুর হরিগাড়ি মহল্লার বাসিন্দা ও সোহেল সাখিদারের ছেলে ও একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, অস্ত্রোপচার শেষে কিশোরীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, তার অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির বলেন, সৈকত মাদকাসক্ত ও বখাটে ছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ দাফন করা হয়।