ঢাকায় নতুন মিশন চালু করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনেরের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার (১৯ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ওই পোস্টে কমেন্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সারজিসের ওই কমেন্টটি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘যেই কমিশন গাজার গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে কিছু করতে পারে না, ইরাককে ধ্বংসস্তূপ থেকে রক্ষা করতে পারেনি, সিরিয়া লিবিয়াকে রক্তপিপাসুদের কুনজর থেকে বাঁচাতে পারেনি; যেই কমিশন মধ্যপ্রাচ্য কে ধ্বংস হতে দিয়েছে, মুসলমানদের টার্গেট করে জঙ্গি ট্যাগ দিয়েছে, পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যকে সার্ভ করেছে; যে কমিশন পুরো পৃথিবী কিংবা মানবতার না হয়ে কয়েকটি দেশ, গুটিকয়েক ব্যক্তি কিংবা কিছু গোষ্ঠীর দালাল হিসেবে কাজ করেছে, সেই তথাকথিত মানবাধিকার কমিশন দিয়ে আমরা কি করব?’
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ওই পোস্টে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) সঙ্গে ৩ বছরের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি মিশন পরিচালিত হবে, যার লক্ষ্য হলো দেশে মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষায় সহায়তা দেওয়া। এই মিশনের উদ্দেশ্য হলো সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত দায়বদ্ধতা পূরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইনি সহায়তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণ করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকারের সংস্কার ও জবাবদিহির অঙ্গীকারের অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, আমরা স্বীকার করি, বাংলাদেশে কিছু গোষ্ঠী জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ এমন একটি সমাজ, যেখানে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিদ্যমান। আমাদের অনেক নাগরিক জানিয়েছেন, যে কোনো আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব যেন এ দেশের মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে পরিচালিত হয়। সেই বিবেচনায় ওএইচসিএইচআর মিশন কেবল গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেমন পূর্ববর্তী সরকারের সময় সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই কাজ করবে। এটি কোনো সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্ল্যাটফর্ম হবে না, যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে যায়।
সরকার জানিয়েছে, আমরা আশা করি, এই মিশন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবে এবং স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় থাকবে। জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বাস্তবতাকে পুরোপুরি সম্মান করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এ ছাড়া, সরকারের পূর্ণ সার্বভৌম অধিকার থাকবে এ চুক্তি থেকে সরে আসার, যদি মনে করে যে এই অংশীদারত্ব আর দেশের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
উল্লেখ্য, যদি এই ধরনের একটি অফিস আগের সরকারগুলোর সময় থাকত, যখন বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গণহত্যার মতো অপরাধ দায়মুক্তির সঙ্গে সংঘটিত হতো, তাহলে হয়ত অনেক অপরাধ তদন্ত, নথিভুক্ত ও বিচারপ্রাপ্ত হতো। আজকের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি কেবল আদর্শ নয়, বরং ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।
সরকার এই অংশীদারিত্বকে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা বৃদ্ধির একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে, যা আমাদের মূল্যবোধ, আইন এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে বলেও জানানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।