মহাসড়কে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন শাহজাহান বাদশা (২৮) নামের এক যুবক। অপরিচিত একটি প্রাইভেটকার ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী তুলছিল। তিনি সে প্রাইভেটকারে উঠেন। এরপর তাকে জিম্মি ও মারধর করে নগদ টাকা ও ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ও সদর এলাকার মেম্বার বাড়ির মধ্যে এ ঘটনাটি ঘটে।
শাহজাহান বাদশা শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের মো. বাবুলের ছেলে।
জানা গেছে, টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর দুর্বৃত্তরা শাহজাহানকে মহাসড়কের মেম্বার বাড়ি এলাকায় ন্যাশনাল ফিড মিলের সামনে ফেলে চলে যায়। এরপর স্থানীয় লোকজনের সাহায্য নিয়ে তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সে সময় অন্য এক ব্যক্তির স্মার্টফোনে নিজের ফেসবুক আইডি লগইন করে একটি ভিডিওর মাধ্যমে ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
ভিডিও ক্লিপে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাকে বলতে শোনা যায়, আল্লাহ গো, আল্লাহ! লাল স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ালাইছি আল্লাহ! এখন কয়টা বাজে ভাই? ৬টা ৪৫ মিনিটে মাওনা থেকে প্রাইভেটকারে উঠছি। বুইঝাহালতেছিনা ভাই, কাল আমার পরীক্ষা। পরের দিন আমার বিদেশের ফ্লাইট। আমার সব শেষ, পকেটের নগদ ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংক থেকে সাড়ে ৬ লাখ, মোবাইল ব্যাংকিং, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলার কার্ড মোট টাকা নিছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার। ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা শেষ, টর্চার করছে মারাত্মক। আমতলী ফেলাইয়া চলে গেছে। আল্লাহ জীবন ভিক্ষে দিছে, এজন্য ধন্যবাদ আল্লাহ! টেহা নেক, কইত্তে যে বাইচ্চা আইছি আল্লাহ! আমার সার্টিফিকেট, আমার পাসপোর্ট, মারধর করে সবকিছু নিছে গা। এই গামছা দিয়ে বানছে, মুখ বানছে!
শাহজাহান বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, রোববার (২০ জুলাই) সকালে ঢাকায় তার একটি পরীক্ষা আছে। এছাড়া পরীক্ষার পর সেদিন রাতে তিনি ভ্রমণের উদ্দেশে বিদেশে যাবেন। তাই আগেরদিন শনিবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় যাওয়ার জন্য রওনা করেছিলেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সড়কের এক প্রান্তে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, এ সময় সেখানে একটি প্রাইভেটকার ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী তুলছিল। তার সামনে প্রাইভেটকারে আরও কয়েকজন যাত্রী উঠেছেন। তাই নিরাপদ যাত্রার জন্য তিনি নিজেও সেটিতে ওঠেন। কয়েক মিনিট পরেই তাকে গাড়ির ভেতরে থাকা আরও চারজন জিম্মি করে ফেলেন। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ টাকা-পয়সা ও স্মার্টফোন নিয়ে নেয়। এরপর সঙ্গে থাকা চারটি ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে নেয় তারা।
তিনি আরও বলেন, এরপর জোর করে কার্ডগুলোর পিন নিয়ে আশপাশের এলাকার বিভিন্ন বুথে গিয়ে পর্যায়ক্রমে ৬ লাখ টাকা তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। তার সঙ্গে থাকা প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকাও নিয়ে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাকে মারধর করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মেম্বার বাড়ি এলাকায় ন্যাশনাল ফিড মিলের সামনে ফেলে যায় তারা। পরে স্থানীয় ও স্বজনদের সহযোগিতায় তিনি সেই রাতে বাড়ি ফেরেন।
শাহজাহান বাদশা আরও বলেন, তিনি শ্রীপুর থানা পুলিশকে ঘটনার বিষয়টি জানিয়ে আবারও ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক কালবেলাকে বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। পুরো ঘটনাটি জয়দেবপুর থানা এলাকায় ঘটেছে। কিন্তু তিনি যেহেতু শ্রীপুর থানা এলাকা থেকে গাড়িতে উঠেছিলেন, তাই আমরা নিজ উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছি।