Saturday, July 26, 2025

অনুদানের টাকার দ্বন্দ্বে শহীদ তালিকার ভুয়া নাম ফাঁস

আরও পড়ুন

পটুয়াখালীতে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে অংশ না নিলেও বশির সরদার (৪০) নামের এক মৃত ব্যক্তির নাম শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তালিকা থেকে তার নাম বাতিল ও সরকার থেকে দেওয়া সঞ্চয়পত্র স্থগিত করার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।

বশির সরদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের সেকান্দার সরদারের ছেলে। গত বছর ১৫ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত বশির সরদারের বড় ভাই নাসির উদ্দিন ‘তার ভাই বশির উদ্দিন শহীদ নয়’ মর্মে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। গত মঙ্গলবার নাসির উদ্দিনের আবেদন পেয়ে পদক্ষেপ নেয় জেলা প্রশাসন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই শহীদ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া টাকা নিয়ে পরিবারে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়প্রত মৃত বশির সরদারের স্ত্রী একাই নিচ্ছিলেন বলে দাবি পরিবারের অন্য সদস্যদের।

আরও পড়ুনঃ  খালেদা জিয়াকে বিষ প্রয়োগে মারতে চেয়েছিল পাশের একটি দেশ

আবার বশিরের স্ত্রীর দাবি, নাসির উদ্দিনের পরামর্শেই তিনি স্বামীকে শহীদ দেখিয়ে অনুদানের জন্য আবেদন করেন। পারিবারিক এই দ্বন্দ্বে জুলাই শহীদ তালিকায় বশির উদ্দিনের নামটি যে ভুয়া, সেটি সামনে আসে।

আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। তিনি বলেন, ‘নিহত পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য নিয়ে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজুলেশন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে তাদের নির্দেশনা পেলে পরর্বতীতে বশিরের নাম বাতিলের বিষয়টি কার্যকর করা হবে।


বশিরের স্ত্রী মোসাম্মদ রেবা আক্তার জানিয়েছেন, তার স্বামী ২০০৪ এর ৩ জুলাই পটুয়াখালী চৌরাস্তা থেকে বাসায় ফেরার পথে পায়ে লোহা ঢুকে আহত হন। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে একপর্যায়ে পচন শুরু হয়। পরে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বশিরের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুনঃ  সারা দেশের মানুষকে গোপালগঞ্জে ডাকলেন সারজিস

রেবা আক্তার বলেন, ‘তার চিকিৎসায় অনেক দোনাগ্রস্থ হরেয় পড়েছি।

আমার স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। পরে স্বামীর বড় ভাই নাসিরের সহায়ত সরকারি সাহায্য পেতে শহীদের তালিকায় বশিরের নাম দেওয়া হয়। অনুদানের টাকা পাওয়ার পর সেই টাকা নাসির ও শ্বশুর শাশুড়ি দাবি করে। তাদের টাকা দেই নি বলে নাসির জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে।’
পটুয়াখালীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, ছাত্র প্রতিনিধি ও আন্দোলনে বাছাই কমিটির সদস্য মো. সজীবুল ইসলাম সালমান বলেন, ‘নিহত বশির অহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসা করানো হয় এবং পরর্বতীতে তার মৃত্যু হয়। এরপর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হিসাবে বশিরের নাম তালিকায় লিপিবদ্ধ করায় তার পরিবার। জুলাই যোদ্ধা হিসাবে শহীদ হিসাবে ওই পরিবারকে জেলা প্রশাসন ২ লাখ এবং সরকার থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়। একপর্যায়ে এই অনুদানের অর্থ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। ফলে মঙ্গলবার ২২ জুলাই মূল ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বশিরের বড় ভাই নাসির। এরপর বুধবার জেলা প্রশাসক একটি সভা করে শহীদের তালিকা থেকে বশিরের নাম বাতিল চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। এ অভিযোগের পর আমরাও খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে জুলাই শহীদ নন।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ