জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘সরকার চাচ্ছে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ না করে জি এম কাদেরবিহীন একটি পুতুল পার্টি গঠন করতে। অথচ দেশের এই সংকটে জাতীয় পার্টির মতো একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সোমবার (২৮ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
জি এম কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচন আয়োজনের আর কোনো বাস্তব সক্ষমতা নেই।
এমনকি সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল থেকেও এখন বলা হচ্ছে, ‘সরকারের ভেতরেই আরেকটা সরকার কাজ করছে’ এবং এই সরকার নিরপেক্ষ নয়।
সম্প্রতি উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশু, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি গভীর শোক জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন দুর্ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় মানুষের দুর্ভোগ কয়েক গুণ বাড়ছে সরকারের দুঃশাসন, ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে।
’
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার এখন শুধু নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছে। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য কোনো জরুরি ব্যবস্থা না নিয়ে বরং মিত্রদের নিয়ে জোট গঠন করছে, যেন জনগণের ক্ষোভ থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়। এই সরকার মানুষের প্রতি নয়, বরং নিজের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়েই বেশি চিন্তিত।
জি এম কাদের আরো বলেন, ‘আমার নামে মিথ্যা হত্যা মামলা, ব্যাংক হিসাব জব্দ, পাসপোর্ট আটকে দেওয়া—এসব কিছুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, সরকারের মূল লক্ষ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করা।
আমাদের অফিসে অগ্নিসংযোগ, কর্মসূচিতে হামলা এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে সরকার একটি প্রতিহিংসার রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাইলস্টোন দুর্ঘটনার পর যেসব সরকারি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, তারা ৯ ঘণ্টা ধরে জনতার রোষানলে অবরুদ্ধ ছিলেন। তখন সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে আত্মরক্ষামূলক রাজনৈতিক বৈঠকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন একটি পরিস্থিতিতে যারা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের ফ্যাসিবাদের দোসর বলা হচ্ছে।’
রংপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, “আমরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি, আমাদের দুজন নেতা শহীদ হয়েছেন, বহু নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
অথচ আমাদেরই এখন ‘দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত করে হয়রানি করা হচ্ছে।”
দেশে বিনিয়োগ আসছে না, গার্মেন্টস খাত ধ্বংসের মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএর তথ্য মতে, এক-দেড় মাসের মধ্যে ১০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ট্যাক্স আদায় কমে গেছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিতে কষ্ট হবে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হবে, অস্থিরতা বাড়বে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারদলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া গ্রহণযোগ্য ভোট সম্ভব নয়।’
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা নেই, নির্বাচন আয়োজনের ন্যূনতম সক্ষমতাও নেই। দেশবাসী মুক্তি চায়, স্থিতিশীলতা চায়। সেই মুক্তির পথ একটাই—সমঝোতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’