আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিও সরগরম। নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সমাবেশের পাশাপাশি গণসংযোগ চালাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আগামী নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান অন্তত ২৮ জন। সে হিসাবে প্রতিটি আসনে গড়ে প্রায় পাঁচজন প্রার্থী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন ও মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে বিভাজন। এরই মধ্যে জামায়াত ছয়টি আসনে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চারটিতে এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসন বরাবরই দখলে ছিল বিএনপি ও চারদলীয় জোটের। তবে এবারের নির্বাচনে সব আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। তবে বিএনপির সেই প্রচেষ্টায় চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির সভাপতি, বুয়েট ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকাস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আসনে এবার ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টির জন্য তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
জামায়াতের পাশাপাশি এবার এসব আসনে ভাগ বসাতে চাচ্ছে অন্য দলগুলো। তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির সঙ্গে থাকা জোটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও তাদের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবও প্রার্থী হতে চান।
এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সংগঠক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনয়ন চাইবেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ উদ্দিন মাহদী। বিএনপির সঙ্গে জোট হলে এখানে এই দুজনের যে কাউকে দেখা যেতে পারে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে বিএনপি থেকে ভাগ বসাতে পারেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি। ফলে জোট হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই দুটি আসন শরিকদের ছেড়ে দিতে হতে পারে বিএনপিকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর)
মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার না থাকায় আসনের হিন্দু ভোটারদের প্রতি নজর থাকবে প্রতিটি দলের। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের ডামি নির্বাচনের এমপি সংগ্রাম এলাকার ভোটারদের ওপর খুব অত্যাচার করেছেন। এ বিষয়টি ভোটারদের নজরে আছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান মামুন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ হান্নান, জেলা বিএনপির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কেএম বশির উদ্দিন তুহিন, জেলা বিএনপির পরিবেশবিষয়ক সহ-সম্পাদক ড. শামসুল হক কিবরিয়া ও নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আযম চৌধুরী, প্রিন্সিপাল এম এ মোনায়েম।
ইতোমধ্যে জামায়াত থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে উপজেলা আমির একেএম আমিনুল ইসলামকে এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা সাইফুল্লাহ বিন আনসারী। এদিকে আলোচনায় আছে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা শিল্পোদ্যোক্তা আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান সুখন দলে ফিরতে পারেন। দলে ফিরলে তার ভাগ্যে বিএনপিদলীয় মনোনয়নও জুটতে পারে। স্বতন্ত্র কিংবা এনসিপি থেকেও তিনি প্রার্থী হতে পারেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)
আসনটিকে বিএনপির দুর্গ বলা হয়ে থাকে। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনেও এই আসন থেকে জয় ছিনিয়ে আনেন বিএনপির প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া। পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন। পরে তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। তবে ২০২৩ সালে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন।
আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রার্থী হতে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, ছাত্র দলের সাবেক সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ শামীম। তিনি বলেন, দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট এবং তৃণমূলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার বিষয়টি দল অবশ্যই বিবেচনা করবে বলে আশা করি। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাও এ আসনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এর পাশাপাশি আহসানুল হক শিপন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য তরুণ দে এবং আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ, ডাক্তার নাজমুল হুদা বিপ্লবও রয়েছেন এই প্রার্থী তালিকায়।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মো. মোবারক হোসাইন। তিনিও ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে এ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ উদ্দিন মাহদী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী নেছার আহমেদ নাছেরী এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা মাইনুল ইসলাম।
জানতে চাইলে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এটি বিএনপির আসন। আমি এলাকায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। বিএনপির সঙ্গে থাকা জোটের কেউ প্রার্থী হবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামিম জানান, সরাইল এবং আশুগঞ্জে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী ও জনসাধারণের দুর্দিনে পাশে ছিলাম। বহুবার জেল খেটেছি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার বিশ্বাস, বিএনপি আমার ত্যাগ বিবেচনায় ধানের শীষের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মো. মোবারক হোসাইন বলেন, ‘আমি প্রতিটি ঘরে ঘরে যাচ্ছি। জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিগত দিনে যেসব প্রার্থী সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন, তারা এলাকায় কোনো কাজ করেননি। তাই জনগণ পরিবর্তন চায়। স্বচ্ছ নির্বাচন হলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর)
এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে পাঁচবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন হারুন আল রশীদ। তবে ২০০৮ সালের পর আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের হাতে। আগামী নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য লুৎফুল হাই সাচ্চুর মৃত্যুর পর ওই সালের উপনির্বাচনে অংশ নেন শ্যামল। পরে ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় নির্বাচনে অংশ নিলেও রাতের ভোটে হেরে যান তিনি। এমনকি তার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীরা।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিলও মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. জোনায়েদ হাসান। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মনোনয়ন চাইবেন যুগ্ম সংগঠক মো. আতাউল্লাহ। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মাওলানা গাজী নিয়াজুল করিম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা মুহসিনুল হাসান।
ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, ‘২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি অংশ নিয়েছি। পাশাপাশি বিগত সময়ে জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে কাজ করেছি। আমি আশাবাদী এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাব। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া)
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এই আসনে ভোটের মাঠে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আসনটিতে ইতোমধ্যে মাঠ গোছাতে শুরু করেছে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য দলগুলো।
আসনটিতে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন সাবেক এমপি ড. মুশফিকুর রহমান। তবে আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম হওয়া জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহাম্মেদ ভূঁইয়া। এছাড়া প্রকৌশলী মুসলেহ উদ্দিন, নাসরুল্লাহ খান জুনায়েদ ও প্রকৌশলী নাজমুল হক, নাছির উদ্দীন হাজারী ও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতি জসিম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা জয়নাল আবেদীনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে তাদের দল।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহাম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে সরাসরি মাঠে থেকে দলের আন্দোলন-সংগ্রামসহ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে কাজ করেছি। কসবা-আখাউড়া যখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছিল তখন নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম। আমার কর্মকাণ্ডের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাকে গুম করে শারীরিক নির্যাতন চালায়। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মো. আতাউর রহমান সরকার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কসবা-আখাউড়ায় শক্তিশালী সংগঠন। জাতীয় রাজনীতিতে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে এটা এ আসনেও বয়ে যাচ্ছে। মানুষ চাচ্ছে সৎ, যোগ্য দেশপ্রেমিক ও আল্লাহভীরু নেতৃত্ব। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে এখানকার মানুষ দাঁড়িপাল্লা প্রতীককে বেছে নেবে।’
জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘বিগত ৫৪ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দুর্নীতি ও মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন। এবার জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর)
২১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জেলার সবচেয়ে বড় আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫। আসনটিতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের প্রার্থী বিভিন্ন সময়ে জয়ী হয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে শক্ত অবস্থানে আছে বিএনপি। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন জেলা বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন তাপস, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নান, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদীর হোসেন মো. জসীম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. সাইদুল হক সাঈদ, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক কেএম মামুনুর রশিদ, বিএনপি নেতা উচ্চ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল বাকি।
এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন আইনজীবী আবদুল বাতেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ূম ফারুকী। ইতোমধ্যে সবকটি দলের প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির কথা তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশে নতুনভাবে জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাছে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর)
জুলাই বিপ্লবের পর আসনটিতে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও বর্তমানে কোন্দলে জর্জরিত দলটি। বিশেষ করে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এমএ খালেক ও মেহেদী হাসান পলাশের অনুসারীরা। সংঘর্ষের তীব্রতায় ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। পরে নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে অন্যত্র সম্মেলনের অনুষ্ঠান করতে হয়। এরপর কমিটি গঠন করা হলেও দলীয় কোন্দল চরম পর্যায়ে রয়েছে।
আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হানাহানির শঙ্কা রয়েছে। বিএনপির প্রার্থী হতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মো. আবদুল খালেক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য রফিক সিকদার, উপজেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ।
এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মাওলানা আবদুল মজিদ। এ আসনটি জোটগত কারণে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকির জন্য বিএনপিকে ছেড়ে দিতে হতে পারে।
জানতে চাইলে জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাঞ্ছারামপুর আমার শেকড়। এখানকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’ জোটের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এখনো এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ‘বাঞ্ছারামপুর বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। এই আসন থেকে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তাই আমি আশাবাদী এই আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবেন।