বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ (৭৫) চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে মারা গেছেন। সোমবার (০৪ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবের আবাসিক কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (০৩ আগস্ট) রাতে তিনি কক্ষটিতে ছিলেন। সোমবার সকালে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় কক্ষটি খুলে অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়।
এদিকে মৃত্যুর মাসখানেক আগে সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশিদ তার বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বাহারকে শেষ ৩টি ইচ্ছার কথা বলেছিলেন বলে জানা গেছে। মৃত্যুর পর সেসব ইচ্ছার কথা সাবেক সেনাপ্রধানের সেজো বোনের জামাতা ডাক্তার জহির গণমাধমের সামনে প্রকাশ করেন। তবে তার শেষ তিন ইচ্ছার কথা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
সাধারণত সেনাপ্রধানদের ইন্তেকালের পর তাদের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করার সুযোগ পান। তাছাড়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সাবেক এই মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় সম্মান ও বুদ্ধজীবী কবরস্থানে স্থান পাবেন এটিই স্বাভাবিক।
চট্টগ্রাম ক্লাবে গেন্ট হাউসে আসা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদের মেজো বোনের জামাতা ডাক্তার জহির গণমাধ্যমকে বলেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বাহার তাকে ফোন করে প্রথম সাবেক সেনাপ্রধানের মৃত্যুর খবর জানান। তখন তিনি বলেছিলেন, মাসখানেক আগে হারুন তার শেষ ৩টি ইচ্ছের কথা বলেছিলেন।
সেটি হলো- মৃত্যুর পর তার মরদেহখানা দাফন করতে যাতে দেরি না করা হয়, তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার পাশে যেন দাফন করা হয় এবং মৃত্যুর পর যাতে রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মান দেওয়া না হয়। আমি উত্তরে কর্নেল বাহারকে সাবেক সেনা প্রধানের শেষ ৩টি ইচ্ছে তার সহধর্মিণী ও মেয়েকে জানাতে অনুরোধ করি।
ডেসটিনির আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি মামলায় হাজিরা দিতে রোববার চট্টগ্রাম আসেন সাবেক এ সেনাপ্রধান। পরে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের ৩০৮ নম্বর রুমে ওঠেন। সোমবার মামলায় হাজিরা দিতে চট্টগ্রাম আদালতে এম হারুন-অর-রশিদের উপস্থিতির দেরি হলে তার আইনজীবীর সহকারীরা সাবেক সেনাপ্রধানের নিকটতম আত্মীয়ে কাছে আদালতে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়টি জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চট্টগ্রাম ক্লাবে গেস্ট হাউসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
সাবেক সেনাপ্রধানের সেজো বোনের জামাতা ডাক্তার জহির আরও বলেন, সোমবার সকালে হারুনের আইনজীবীর সহকারীরা তিনি কোথায় আছে এমন খবর জানতে চেয়ে ফোন দেন। তখন আমি তাদের চট্টগ্রাম ক্লাবে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দিই। পরে কর্নেল বাহারের ফোনে জানতে পারি তিনি আর নেই।
এম হারুন-উর-রশীদের বয়স প্রায় ৭৫ বছর। তিনি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত তিনি দেশের দশম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অবসরে যাবার পর হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনির সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হন। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলও খাটেন।