Thursday, August 7, 2025

‘কারাগারে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগও মারধর করত’

আরও পড়ুন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ায় আটক করে প্রথমে থানায় নেওয়া হতো। সেখান থেকে কারাগারে। এরপর চলত শারীরিক-মানসিক নির্যাতন। দিনের পর দিন উলঙ্গ অবস্থায় থাকতেও বাধ্য করা হতো।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘জুলাই কারাবন্দিদের স্মৃতি’ অনুষ্ঠানে এভাবেই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতনের স্মৃতি তুলে ধরেন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাসহ অন্যরা।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় কারাগারে তাদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন, যা শুধু তাদের শরীরই ক্ষতবিক্ষত করেনি— ভেঙে দেয় মনোবল, গুঁড়িয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস।

জুলাইয়ের স্মৃতি স্মরণ করে মাদ্রাসাশিক্ষার্থী মাহাদি হাসান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই মতিঝিল থানা-পুলিশ তাকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে উলঙ্গ করে সাত দিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন করার পর চিকিৎসা দেওয়া হতো না। এতে বন্দি অনেকের হাত-পা পচে যায়।

আরও পড়ুনঃ  হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা

কারাগারে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগও মারধরে অংশ নিত বলে অভিযোগ করে মাহাদি। নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুকুট মিয়ার অভিজ্ঞতাও একই রকম।

মুকুট জানান, উত্তরা থেকে তুলে নিয়ে বিমানবন্দর থানায় তাকে অনেক মারধর করা হয়। এত বেশি মারধর করা হয় যে, একবার বসলে আর উঠতে পারতেন না। সেই যন্ত্রণা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম নীরব বলেন, লালবাগ থানায় তিন দিন আটকে রেখে শুধু পানি চাওয়ার অপরাধে তাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  এইমাত্র পাওয়া: এবার ৮ জোড়া ট্রেন ভাড়া করল সরকার, কারণ জানা গেলো

বিক্রমপুরের ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী অনন্যা রহমান অর্পা জানান, জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে ২১ জন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তার নামে সাতটি মামলা দেওয়া হয়।

অভ্যুত্থানের সময় নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রিকশাচালক রাজু বলেন, পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাতে তুলে দেয়। তারা মারধর করত, ভয় দেখাত। কারাগারে নিয়ে আমাকে কনডেম সেলে রাখা হয়। সেখানে উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানো হতো।

ছাত্রদল নেতা ইব্রাহিম কার্দি জানান, নিউমার্কেট থানায় ওসি নিজে দুই দিন ধরে তাকে বেদম মারধর করেন। রিমান্ডে নিয়ে আরও নির্যাতন চালানো হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, গ্রেপ্তারের চার ঘণ্টা পর তার নামে ককটেল বিস্ফোরণের মামলা দেওয়া হয়। একটি কনডেম সেলে সাত-আটজনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টা আলো-বাতাসহীন ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। খাবার শুধু একটা শুকনো রুটি।

আরও পড়ুনঃ  বড় সুখবর বিকাশ গ্রাহকদের জন্য

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, হাসিনার সময় পুরো দেশটাই ছিল কারাগার। প্রতিটি জেলখানায় বানানো হয়েছিল আয়নাঘর। এখন সময় এসেছে, এসব নির্যাতনের তালিকা তৈরি করে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করার।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই দেশ কেউ একা উদ্ধার করেনি। আমরা সবাই একসঙ্গে মাঠে নেমে লড়াই করেছি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ