চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ব্লগার আসাদুজ্জামান নূরের অনুসারী বিজয় দেবনাথকে ইসলাম ধর্মের অবমাননা ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী প্রচারণা ও ইসকনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়াও অভিযোগও উঠেছে। এই তিন সাংবাদিক হলেন- সৌমিত্র চক্রবর্তী, লিটন কুমার চৌধুরী এবং কৃষ্ণ চন্দ্র দাস।
জানা যায়, গত শনিবার (৯ আগস্ট) সীতাকুণ্ডে রাসুল (সা.)-কে অবমাননার অভিযোগে বিজয় দেবনাথ নামে এক যুবককে ছাত্র-জনতা আটক করে। পরে তার মোবাইল ফোন ঘেঁটে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে একটি ইসকন গ্রুপের সঙ্গে তার সক্রিয় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সদস্য ওই তিন সাংবাদিকের বিভিন্ন দেশবিরোধী ও উসকানিমূলক পোস্টও ফাঁস হয়। এরপর ছাত্র-জনতা বিজয়কে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
পরদিন রোববার (১০ আগস্ট) সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।
একই দিন দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। জুলাই অভ্যুত্থানের যোদ্ধা ছাত্র প্রতিনিধি নাফিস হাসান অভিযোগ করে বলেন, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ইসকনের নেতৃত্ব দেন এবং একটি গ্রুপে লিখেছেন, “সীতাকুণ্ডে ইসকন মুভ করলে সমস্যা কোথায়? ইসকনকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আশ্রয় দিতে হবে।”
এছাড়াও, চট্টগ্রামে আলীফ হত্যা মামলার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের আন্দোলনকে দমন করার জন্য সৌমিত্র চক্রবর্তী গ্রুপে মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন এবং ছাত্রদের প্রতিবাদকে “সাম্প্রদায়িক অপশক্তি” আখ্যা দিয়ে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
নাফিস হাসান আরও অভিযোগ করেন, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ২০২৪ সালের ফেনীর বন্যা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না, ভারত নাকি বাংলাদেশের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে নাফিস হাসান বলেন, এটি শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার নয়, বরং দেশবিরোধী গুজবকে আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। তিনি অভিযোগ করেন, ইসকনের মাধ্যমে পরিচালিত এ নেটওয়ার্ক ধর্মীয় উসকানি ও বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহে সক্রিয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের রিপাবলিক টিভি “হিন্দু নির্যাতন” শিরোনামে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কৃষ্ণ চন্দ্র দাস বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তিনি জানান, যেসব পোস্টের কথা বলা হচ্ছে তা ২০২১ সালের। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ফেনীর বন্যা প্রসঙ্গে তার মন্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশে বাস করে দেশের বিরুদ্ধে কেন কথা বলব?”
অপরদিকে, সৌমিত্র চক্রবর্তীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
লিটন কুমার চৌধুরী বলেন, “ইসকন বাংলাদেশের অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের মতো একটি সংগঠন। তাই বলে সব হিন্দু ইসকনের সদস্য, এমনটা বলা সঠিক নয়।”
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, বিজয় দেবনাথকে রোববার ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।