দায়িত্ব নেয়ার পর টক ঝাল মিষ্টির অভিজ্ঞতা নিয়ে এক বছর পার করলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যখন একে একে পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের প্রায় সব বিচারপতি সেই ক্ষণে ছাত্র জনতার মুখ থেকে দাবী ওঠে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি করার। এরপর ইতিহাস ভেঙে ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট বাংলাদেশে ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
এরপর বিচার বিভাগের মর্যাদা ফেরাতে ছুটে গিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। দেশের সুনাম বাড়াতে যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মেলনে।
তার ঘোষিত রোডম্যাপ কালের সন্ধিক্ষণে এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সংস্কারের ও ইতিবাচক পরিবর্তনে তার মানসিকতা অনেক কিছুর পরিবর্তন সূচীত করেছে।
বিচার বিভাগের অনেক কিছুর শুরু করে দেয়া ড. সৈয়দ রেফাত ইতিহাসে মূল্যায়িত হবেন আরেক কারণে তিনিই প্রথম কোনো প্রধান বিচারপতি যিনি সপ্তাহে দুদিন রোববার ও সোমবার প্রশাসনিক কাজ করেন। বলা যায় সাংবিধানিক মামলায় শুনানির ওপর জোর দেন।
তবে সমালোচনাও আছে ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়ে। অনেকেই বলেন আপিল বিভাগে মামলার গতি শ্লথ হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলেন এভাবে চললে মামলার পাহাড় জমে যাবে। তবে প্রধান বিচারপতির দর্শন হয়তো একটি মামলার চূড়ান্ত বিচারে সবাই যেনো সঠিক বিচারটি পায়। সেজন্য সবপক্ষকেই সময় নিয়ে শোনা।
এক বছরে কি কি করেছেন প্রধান বিচারপতি-
বিচার সংস্কারের রোডম্যাপ
২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক ভাষণে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগকে সংবিধানসম্মত দায়িত্ব পালনে ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে একটি বিচার সংস্কার রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
ওই ভাষণে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং ‘মাসদার হোসেন মামলা’র রায় বাস্তবায়নে একটি পৃথক বিচার প্রশাসন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন।
তিনি বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীন ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে নীতিমালা প্রণয়ন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেধার চর্চা বৃদ্ধি, উন্নত দেশের মতো নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং বিচার পরিষেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দেশে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্যও নির্দেশনা দেন।
স্বচ্ছতা আনতে ১২ দফা নির্দেশনা
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সেবার মানোন্নয়নে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেন।
এই নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন তদারক করতে সুপ্রিম কোর্টে প্রতি মাসে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান বিচারপতি নিজে।
এই বৈঠকগুলোতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁদের দপ্তর থেকে নেওয়া পদক্ষেপের অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। জেলা পর্যায়ের আদালতেও এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অনেকাংশে নিশ্চিত হয়েছে।
পেপারলেস হাইকোর্ট বেঞ্চ
প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে বিচারসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি কোম্পানি সংক্রান্ত বেঞ্চে সম্পূর্ণ কাগজবিহীন (পেপারলেস) বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
এ উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ওই বেঞ্চের সব নথি অনলাইনে জমা দেওয়া যায়। পরে ২০ জুলাই আরেকটি কোম্পানি বেঞ্চেও কাগজবিহীন বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধান বিচারপতির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে অন্যান্য বেঞ্চেও এই পদ্ধতি চালু করা হবে।
আইনি সহায়তার জন্য সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা চালু
২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট একটি সার্কুলার জারি করে জানানো হয়, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতে উপস্থিত সব আসামিকে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাতে আদালতে উপস্থিত কোনো আসামি আইনজীবীর অভাবে আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য নিম্ন আদালত বা ট্রাইব্যুনালে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকলে, তাকে লিগ্যাল এইড লইয়ার্স প্যানেল থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, নিযুক্ত আইনজীবী যেন বাধাহীনভাবে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (ন্যাশনাল লিগাল এইড সার্ভিস অর্গানাইজেশন) দেশের সব জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে।
আলাদা বিচার প্রশাসন সচিবালয় গঠনের উদ্যোগ
বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিচার প্রশাসন সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়।
এতে একটি অধ্যাদেশের খসড়া, প্রস্তাবিত সচিবালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো (অরগানোগ্রাম) এবং ব্যবসা বণ্টন ও পরিচালন বিধিমালায় সম্ভাব্য সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিসমূহের একটি। তাই আলাদা সচিবালয় গঠিত হলে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা ও ছুটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটবে এবং বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতায় আলাদা সচিবালয় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাঠামো প্রস্তুতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
বদলি ও পদায়ন নীতিমালা
প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার সংস্কার রোডম্যাপ অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নে বৈষম্য দূর করতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালাটি ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ অধ্যাদেশ
২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উন্নত ও প্রতিবেশী দেশগুলোর বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতির বিশ্লেষণের পর একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের মতামত নিয়ে এই খসড়াটি ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে, “সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫” উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং আইন হিসেবে পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে “সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল” গঠিত হয়েছে। কাউন্সিলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।
সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালতে হেল্পলাইন চালু
২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে সেবাগ্রহীতাদের জন্য একটি হেল্পলাইন চালু হয়। পরবর্তীতে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় হেল্পলাইন চালু করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার পদমর্যাদার একজন বিচারিক কর্মকর্তা এই হেল্পলাইন পরিচালনা করেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেন।
এছাড়া সকল নাগরিকের জন্য বিচারসেবা নিশ্চিতে ২০২৫ সালের ১৪ মে দেশের ৬৪ জেলা ও ৮ মেট্রোপলিটন এলাকায় হেল্পলাইন চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রতিটি জেলায় ৩ সদস্যের কমিটি গঠন এবং জেলা ও দায়রা জজকে সিম-সহ মোবাইল ফোন সরবরাহ করা হয়েছে।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্গঠন
সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর ফলে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে সংসদের হাতে ন্যস্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ উক্ত সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করলেও, বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন হিসেবে আপিল বিভাগে বিচারাধীন ছিল।
২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তি করলে বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরায় কার্যকর হয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের এই কাউন্সিল ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
এই ধারাবাহিকতায়, হাইকোর্টের তিনজন বিচারক ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে পদত্যাগ করেন এবং তা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে আরও কিছু বিচারকের বিষয়ে কাউন্সিলের কার্যক্রম চলমান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার
২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি, প্রধান বিচারপতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সংস্কারকৃত মূল ভবন ও আদালত কক্ষের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইসিটি-এর নতুন সংস্কার করা ভবন ও আদালত কক্ষ উদ্বোধনের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হলো।
সারাদেশে জনসচেতনতা কার্যক্রম
বিচার ব্যবস্থা মূলত দেশের জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য গঠিত। তাই জনগণ বিচার বিভাগ থেকে কী আশা করে এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগের কী সক্ষমতা অর্জন প্রয়োজন, তা সরাসরি বোঝার জন্য প্রধান বিচারপতি ২০২৫ সালে ইউএনডিপির সহায়তায় দেশের সকল বিভাগীয় শহরে স্টেকহোল্ডার সভার আয়োজন করেন।
এই স্টেকহোল্ডার সভাগুলো প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য একটি ব্যবহারিক রূপরেখা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পরিবেশবিষয়ক ন্যায়বিচার: বিচারকদের ভূমিকা শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার
২০২৫ সালের ৩ মার্চ, সুপ্রিম কোর্ট ‘পরিবেশবিষয়ক ন্যায়বিচার রক্ষা: একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বিচারকদের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজন করে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রাজিলের ন্যাশনাল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিন।
সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা শীর্ষক জাতীয় সেমিনার
২০২৫ সালের ২২ জুন রাজধানীর একই ভেন্যুতে “বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা” শীর্ষক একটি জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী, আমন্ত্রিত অতিথি, জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, প্রধান বিচারিক হাকিম, ও বিভিন্ন জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার জন্য আলাদা আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
প্রধান বিচারপতির নির্দেশে ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র পাঠিয়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিচারিক কার্যক্রম আলাদা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট বিচার বিভাগের কাঠামোতে পরিবর্তন এনে পর্যাপ্ত সংখ্যক পদ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানানো হয়।
বর্তমানে দেশের নিম্ন আদালতগুলোতে একই বিচারক (যেমন: যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ) দেওয়ানি আপিল, রিভিশন, ফৌজদারি আপিল, রিভিশনসহ বিভিন্ন বিশেষ আদালত ও ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনা করে থাকেন।
ফলে বিচারকদের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছে না, এবং মামলার জট ও বিলম্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে দেওয়ানি মামলায়।
এই প্রেক্ষাপটে পৃথক বিচারিক কর্তৃত্ব সহজতর করতে এবং মামলা জট নিরসনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
চৌকি আদালত ও নিম্ন আদালতে কম্পিউটার সরবরাহ
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত চৌকি আদালত ও নিম্ন আদালতগুলোতে বিচারপ্রার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে এবং এসব আদালতের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রয়োজনীয় ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহের নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশনার আলোকে ২০২৫ সালের ২ জুলাই দেশের ৪০টি চৌকি আদালতে মোট ৭১টি ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং বিভিন্ন জেলা আদালতে মোট ৪০০টি ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের ১২০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আগামী ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। তাঁর সবচেয়ে বড় সফলতা হবে যদি বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও তা না-ও হতে পারে, তবু ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা থাকবে বহু “না” কে “হ্যাঁ” বানিয়ে বিচার বিভাগে নতুন পথচলার সূচনা করার জন্য। কারণ, তিনিই একমাত্র প্রধান বিচারপতি, যাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অনুরোধ করলেও বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমন লোভহীন প্রধান বিচারপতি এর আগে কয়জনই বা এসেছেন?
সূত্র: চ্যানেল ২৪