শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে টুঙ্গিপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আজ শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরো কড়াকড়ি আরোপ করে। সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের ভিতরে ও বাইরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। কাউকে সমাধিসৌধে যেতে দেওয়া হয়নি ।
আশপাশ এলাকায় কেউ দাঁড়াতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ার রাস্তা-ঘাট ছিল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ মানুষকে তেমন একটা চলাফেরা করতে দেখা যায়নি। রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা।
শুধু টুঙ্গিপাড়া সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে নয়, গোপালগঞ্জ জেলা সদরসহ গোটা জেলাতেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলা জুজে পুলিশ এপিবিএনসহ দেড় সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে । জেলার স্পর্শকাতর স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে টহল দিতে দেখা গেছে। জেলায় যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন শৃংখলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গা চৌরঙ্গী মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড, কলেজ সড়ক, বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ সড়ক, বাইপাস সড়কসহ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রবেশের স্থানগুলোতে এপিবিএনের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন । বঙ্গবন্ধুর সমাধির মূল প্রবেশদ্বার সহ বাকি দুইটি প্রবেশদ্বারও বন্ধ করে দেয়া হয়। ১ নং গেটের সামনে একটি প্রিজন ভ্যান ও একটি অত্যাধুনিক গাড়ি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন । আর ২ নং ও ৩ নং গেটের প্রবেশদ্বারে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে বঙ্গবন্ধু সমাধি ৩ নং গেটের পাশে কিছু দোকানপাট খোলা ছিল ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছিল না আগের মতো আয়োজন। আগে এই দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ সহ টুঙ্গিপাড়ায় কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সর্বত্র বিরাজ করত শোকাবহ পরিবেশ। লাখ- লাখ মানুষের জনসমাগম হতো। আর দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন রীতিমতো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করত। আগস্টে শোকের মাস জুড়ে কর্মসূচি পালন ও শোক দিবসের দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ আর শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এবার তা আর দেখা যাচ্ছে না। দলের নেতা-কর্মীদের আনাগোনাও নেই ।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়ন থাকাকালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস হিসেবে পালিত হতো। এই দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ , শোকসভা ও দোয়া-মিলাদ ছিল নিয়মিত আয়োজনের অংশ। কিন্তু এবার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের তিনটি প্রবেশদ্বারই বন্ধ রাখা হয়েছে। আগের মতো সমাধিকে ঘিরে কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আয়োজন নেই। এর বড় কারণ আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকেই নেতাকর্মীরা রয়েছে আত্মগোপনে।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নানা কর্মসূচি হতো। এবার শুধুই নীরব শোক। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে কেউ হয়তো বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আসার সাহস পাচ্ছে না। তবে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে সকল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের উর্ধে রাখা উচিত।
স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, আগে আমাদের ভালো বেচাকেনা হতো। কারণ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ব্যাপক জনসমাগম হতো এই দিনে। কিন্তু সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক আর কঠোর নিরাপত্তার কারণে এখন তেমন কেউ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আসেনা। তবুও দোকান খুলে বসে আছি।
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়া ১৫ আগস্ট উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কিংবা ১৫ আগস্ট পালনের কোন খবর পাওয়া যায়নি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে।’