Friday, August 15, 2025

তিন কারণে নির্বাচন মানবে না জনগণ জানালেন গোলাম পরওয়ার

আরও পড়ুন

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। তবে আমরা স্পষ্ট করে ঐকমত্য কমিশনকে বলেছি নির্বাচনের আগে অবশ্যই রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার, হাজার হাজার ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার ও আনুপাতিক হারে অর্থাৎ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা দিতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন হলে জনগণ সে নির্বাচন মেনে নেবে না।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে পৃথক ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের প্রায় সাড়ে সাত বছরই বিনা কারণে বিনা দোষে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখার নামে আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিল। আমার মরহুম পিতার দাফন ও আমাকে করতে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনার শাসন আমল ছিল গুম, খুন, হত্যা, জুলুম-নির্যাতন আর অন্যায়-অত্যাচার, রাহাজানি, ধর্ষণের শাসনামল। এ সময় বিরোধী দলের লোকজনকে তাদের রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার পালনসহ কোনো ধরনের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কেউ তাদের মত প্রকাশ করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে তার ফেসবুক আইডিতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের আধিপত্যবিরোধী পোস্টের কারণেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। শুধু আবরার ফাহাদ নয় এ রকম শত শত বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করেছে ওই খুনি হাসিনা ও তার দলীয় হেলমেট বাহিনী। দেশে এক ব্যক্তির একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। দেশের জনগণ জিম্মি হয়ে গিয়েছিল একটি দলের কাছে। কথা বললে গুম, খুন, অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন চালানো হতো। ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে, ফিরে পেয়েছে রাজনৈতিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার।

আরও পড়ুনঃ  চাতক পাখির মতো জাতি জামায়াতের দিকে তাকিয়ে আছে: গোলাম পরওয়ার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা আখ্যায়িত করে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আবার কেউ কেউ এটাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতাও বলে। আমাদের প্রথম স্বাধীনতা এসেছিল ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, তারপরও এটাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা কেন বলা হয়। তার কারণ হলো- বিগত সময়ে মানুষের কথা বলার সুযোগ ছিল না, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটদানের অধিকার কোনো কিছুই ছিল না। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষ তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেয়েছে এজন্য এটাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা হয়ে থাকে। দুই হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতার পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে ফিরে পাওয়া স্বাধীনতাকে আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে। এই স্বাধীনতাকে আবার ভূলুণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। এ জন্য আমরা বলেছি- ফিরে পাওয়া স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য যে রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য একটা সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল, ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেছিল- সেই রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কার করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে জামায়াত আমিরকে, জানা গেল কারণ

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হলেও ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনায় জাতি যখন শোকে মুহ্যমান, জনগণ যখন রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে, তখন ছাত্র আন্দোলনের নামে পতিত হাসিনার লোকজন সচিবালয় ঢুকে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে। এর আগে বিচারিক ক্যু, সচিবালয়ে আগুন, আনসার কাণ্ডসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে, যা আমাদের ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত হতে দমন করেছে। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার- আমরা যদি আবারও ফ্যাসিবাদের দিকে ফিরে যেতে না চাই, আবার কোনো স্বৈরাচারীর হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা তুলে দিতে না চাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, মাস্তানি, দখলদারিত্বের রাজনীতি দেখতে না চাই তাহলে রাষ্ট্রকাঠামোয় মিনিমাম একটা সংস্কার করে তারপর নির্বাচন দিতে হবে। যেটি এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এক ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে দেশ যাতে আর এক ফ্যাসিবাদের হাতে না পড়ে। আর এক স্বৈরাচারীর হাতে দেশকে তুলে দিতে না হয় সে ব্যাপারে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ’৪৭, ’৭১, ’২৪—প্রতিটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে আলেমদের ভূমিকা অপরিসীম: নাসির

২নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মাস্টার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সন্ধ্যায় ১নং ওয়ার্ড সভাপতি মো. মকিত শেখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা।

গাজী আল আমিন ও মো. আসাদ শেখের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- ফুলতলা উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্যা, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, মাওলানা সাইফুল হাসান খান, ড. আজিজুল হক, শেখ মো. আলাউদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফয়জুল কবির লিঠু, মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, মাওলানা জুবায়ের হোসেন ফাহাদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রহিম খান, মোজাহিদুল ইসলাম, মো. আসলাম সরদার, গোলাম মোস্তফা, আশরাফুল আলম, মাওলানা আলী আকবর ফারাজী, মাওলানা ইমদাদূল হক, ইউপি সদস্য মো. শামীম সরদার, মো. আলমগীর মোল্যা প্রমুখ।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ