Tuesday, August 19, 2025

বিস্ফোরক তথ্য: ১৯৭১ এর শহীদদের সংখ্যা অবিশ্বাস্য পরিমাণ কম!

আরও পড়ুন

আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও প্রবাসী লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে দাবি করেছেন, ওই সময় সর্বোচ্চ দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

রবিবার (১৭ আগস্ট) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে পিনাকী এ দাবি তোলেন।

ভিডিওতে পিনাকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এটা মিথ্যা কথা। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তিনি দাবি করেন, সে সময় ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল ৯ হাজার মানুষ। অথচ শেখ হাসিনার পতনের পর লাখ খানেক মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ১৯৭১ সালেও এত মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়নি। তিনি বলেন, সে সময় শেখ মুজিব এক বিদেশি সাংবাদিককে শহীদের সংখ্যা তিন লাখ বলতে গিয়ে তিন মিলিয়ন বলে ফেলেন। এরপর সংবাদমাধ্যমে কপি-পেস্ট হতে হতে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। তিন লাখ সংখ্যাটাই বা কোন সার্ভের ভিত্তিতে পেয়েছে। এ নিয়ে কোনও জবাব পাবেন না। এসব ভারতীয় প্রোপাগান্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ সংখ্যাটাও ভিত্তিহীন সংখ্যা দাবি করে কয়েকটি বইসহ কিছু রেফারেন্স দিয়ে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, মাত্র তিনটি ডিভিশন ব্যবহার করে ৩০ লাখ মেরে ফেলল? কেউ প্রশ্ন করল না। একটি রিপোর্টে সংখ্যা বেরিয়ে আসে, ৩ লাখ, ৩০ হাজার বা ১০ হাজার না, মাত্র দুই হাজার। পুলিশের কাছে মাত্র ২ হাজার মানুষ নিখোঁজ থাকার অভিযোগ জমা পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করলে প্রকৃত সংখ্যা কয়েক হাজারে নেমে আসবে বলে মত তার।

আলোচিত এই অনলাইন একটিভিষ্ট যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এমন দাবির বিরোধিতা করেন। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক সাহায্য নিশ্চিত করতে ভারত এই সংখ্যাটি বাড়িয়েছে। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রেম নাথ হুনের একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, শরণার্থীর প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৯,০০০।

পিনাকী ভিডিওটিতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে ৩০ লক্ষ (৩ মিলিয়ন) শহীদের সংখ্যাকে “অত্যন্ত অতিরঞ্জিত” এবং “একটি মনগড়া” বলে অভিহিত করেন। তিনি এই সংখ্যার উৎপত্তির জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের ভুলকে দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেন, শেখ মুজিব ভুল করে একজন বিদেশী সাংবাদিককে “৩ লক্ষ” (৩০০,০০০) এর পরিবর্তে “৩ মিলিয়ন” বলেছিলেন। তিনি দ্য গার্ডিয়ানে আমেরিকান সাংবাদিক উইলিয়াম ড্রামন্ডের একটি প্রতিবেদনেরও উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে মৃত্যুর প্রায় ২,০০০ অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করা হয়েছিল।

প্রবাসী এই লেখক যুক্তি দিয়ে বলেন, এই অতিরঞ্জিত সংখ্যা প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ঘৃণা জাগানো এবং ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধা দেওয়া। তিনি দাবি করেন, এই মিথ্যা বর্ণনাটি আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

ভিডিওটিতে পিনাকী সম্মানিত সামরিক ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বচ্ছ, আন্তর্জাতিক কমিশনের প্রস্তাব করেছেন যাতে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য একটি বিস্তৃত মাঠ জরিপ পরিচালনা করা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের তদন্ত “ভারতীয়-আওয়ামী বয়ান” উন্মোচিত করবে এবং সত্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের একটি নতুন ইতিহাসের দিকে পরিচালিত করবে।

বিস্তারিত উল্লেখ করে পিনাকী বলেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর সিপিবি এবং যারা সচরাচর নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে আসছে, এদের চেতনা ব্যবসার একটা মূল উপাদান বা বয়ান হইতেছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি আর্মি নয় মাসে মানে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে একটা জেনোসাইড বা গণহত্যা চালিয়েছে এবং সেই জেনোসাইডে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে। আর পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার মধ্যে নাকি এক কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছাইড়া ভারতে আশ্রয় নিছিল। এ দুইটা ছাড়া আরো আছে ২ লক্ষ মা-বোনকে নাকি ধর্ষণ করেছিল পাকবাহিনী আর তার দোসররা এবং এই সমস্ত অত্যাচার নির্যাতনের পরিণামে ভারত মানবিক কারণে আগায় আইসা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক অভিযান চালায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত কইরা আমাদের মুক্ত স্বাধীন কইরা দেয়। এর ফলে আমাদেরকে ভারতমাতার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকতে হবে।

“এখন এই ঘটনা যেগুলো বললাম এগুলো যদি আসলেই সত্য হয় তাহলে তো আমাদের আসলেই ভারতমাতার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কিন্তু উপরে প্রত্যেকটা দাবি ডাহা মিথ্যা। একদম ডাহা মিথ্যা কথা। আমরা ভারতমাতার সোর্স থেকেই প্রমাণ করে দেখাবো যে গণহত্যা আর এক কোটি লোকের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার দাবিগুলা ডাহা মিথ্যা” বলেন তিনি।

পিনাকী বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি দাবিগুলো মিথ্যা হয়ে থাকে তাইলে এসব বয়ান প্রচার করল কে? কেনইবা প্রচার করল? তখনকার আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা ভারতের দিল্লি আর কলকাতাতে অবস্থান করে ঘটনাগুলো কভার করতো। ভারতের মিডিয়া এবং ইস্টার্ন কমান্ড তাদেরকে যে সমস্ত প্রেস ব্রিফিং দিত তারা সেটাই পাবলিশ করতো। ভারতমাতার মিডিয়া যে কি মাল সেটা তো আমরা আজকে হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছি তাই না? ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা পতনের পর থেকে তারা এমন কোন আজগুবি অতিরঞ্জিত খবর নাই যেটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অংশ হিসেবে পাবলিশ করে নাই।

“তো এই কাজে ভারতের লক্ষ্য কি ছিল?ভারতের লক্ষ্যই ছিল এই উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে যাতে কোন মতে একটা ইউনিটি বা একতার বোধ না থাকে। এখানে একটা ব্যাপার খেয়াল করলে দেখবেন যে, ভারতমাতা উপমহাদেশের যে ডাইভার্স বহুভাষী হিন্দুদের এক রাষ্ট্রে বসবাস করার মধ্যে কোন গড়মিল লক্ষ্য করে না। কিন্তু উপমহাদেশের বহু ভাষাভাষী মুসলমানরা যখন শক্তিশালী হইয়া একসাথে একটা রাষ্ট্র গঠন করে তার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়া ঝাপায় পড়ে। এখনো দেখেন উপমহাদেশের বিভিন্ন মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা এগুলো লাগায় রাখে। এইটার একটা উপায় হইতেছে ভুয়া অর্থনৈতিক বৈষম্যের বয়ান সৃষ্টি কইরা দেশীয় হলুদ মিডিয়া দিয়া প্রচার করানো, বাংলাদেশী মুসলমানদের পাকিস্তানি মুসলমানদের ঘৃণা করতে শেখানো, পাঞ্জাবী মুসলমানদের ঘৃণা করতে শেখানো, বেলুচ মুসলমানদের ঘৃণা করতে শেখানো। এমনকি তাদের ভাষা উর্দুকে ঘৃণা করতে শেখানো” বলেন এই অনলাইন একটিভিষ্ট।

আরও পড়ুনঃ  কোচিংয়ের লাইভ ক্লাসে অশ্লীলতা, স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওতে তোলপাড়

তিনি বলেন, আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রোপাগান্ডার কৌশল ছিল আজগুবি কাল্পনিক একটা অত্যন্ত অতিরঞ্জিত অবাস্তব নিহতের সংখ্যা ছড়ানো যাতে মুসলমানদের মধ্যে ঘৃণা বজায় থাকে। মুসলমানরা যেন একে অপরকে ঘৃণা করে। বাস্তবে ভারতের এই কৌশল কাজও করেছে। ৭১ এর যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের‌ ব্যাপারে দাবি করা হয়, এক কোটি মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণয় ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিছিল। তো আওয়ামী লীগের নেতারা কিন্তু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় নাই তারা দেশ থেকে পালানোর সময় বিভিন্ন ব্যাংকের ডাকাতি করা কোটি কোটি টাকা নিয়া ইন্ডিয়ায় গেছিল। সেসব টাকা দিয়ে কলকাতাতে বাড়ি ভাড়া করে থাকতো, ফ্ল্যাট ভাড়া করে। আর মদ খাইতো। তখন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। বাংলাদেশের গ্রামের সংখ্যা ৬৮ হাজার এর মত। আমরা এটা জানি সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছাইড়া রোহিঙ্গা ফিলিস্তিনিদের মত অন্য দেশের রিফিউজি হিসেবে আশ্রয় নয়। এটা তো একটা ভয়াবহ ঘটনা। ভারতমাতাও এই সংখ্যা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে সেই সময় তাদের গণমাধ্যম দিয়া প্রচার করাইছে। তাদের গণমাধ্যম কি জিনিস সেটা তো বুঝেননি? তো এটা করার পিছনে ভারতের একটা স্বার্থ ছিল। ভারত এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার কইরা আমেরিকা ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্য, ওষুধ, সাহায্য এগুলো অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ত্রাণ হিসেবে আনতো। এখন শরণার্থীর সংখ্যা, রিফিউজি সংখ্যা যত বেশি দেখাবে ভারতের লাভ তত বেশি। কারণ একজনের বিপরীতে যদি তারা ১০০ জনের হিসাব দেখায়, খাবার টাকা ইত্যাদি নেয় তাহলে বাকি ৯৯ জনের টাকা-খাবার নিজেরা পকেটস্থ করতে পারবে। একদম খোদ ভারতের রেসপন্সিবল মানুষের রেফারেন্সই
দেখায়তেছি।

পিনাকী বলেন, ভারতের এবং আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল প্রোপাগান্ডার বিপরীতে আপনারা যদি আসল সংখ্যাটা শুনেন তাহলে আপনারা চেয়ার থেকে পড় যাবেন। ভারতের সেনাবাহিনীর লেফটেন্ট জেনারেল প্রেমনাথ হুন তার এক সাক্ষাৎকারে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রিফিউজিদের আসল সংখ্যাটা বলছেন। উনি একজন কট্টর হিন্দুত্ববাদী যিনি অবসরের পর শিবসেনাতে জয়েন করেছিলেন। এরপর বিজেপিতেও যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে ভারতের মিডিয়া রেডিফে উনার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। এই সাক্ষাৎকারে জেনারেল হন ৭১ সালে ভারতে আশ্রয়ণ শরণার্থীদের আসল সংখ্যাটা প্রকাশ করেছিলেন ৯ হাজার। কই এক কোটি আর কই ৯ হাজার। বাংলাদেশে গ্রামের সংখ্যা ৬৮হাজার‌। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী মেজরিটি সংখ্যক গ্রামের কেউই ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয় নাই। গ্রামের সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি ভারতের গিয়ে আশ্রয় নিছিল। এখন কাঠালরানীর পতনের পরেই তো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা বিপ্লবী জনতার ধাওয়া খাইয়া প্রায় লাখ খানেক দুর্বৃত্ত ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিছে। কলকাতা আওয়ামী লীগ আবার অফিস খুলিছে। আরো অনেক দুর্বৃত্ত পলাতে গিয়ে বিপ্লবী জনতার হাতে ধরা খেয়েছে। ৭১ সালে এখনকার চেয়ে কম সংখ্যক মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিছিল। ভারতমাতা এবং আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা কিভাবে ৯ হাজার এক কোটিতে রূপান্তরিত হয় দেখছেন?

“কাহিনী এখানে শেষ না। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় মদদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহের ফলে দেশে আইন শৃঙ্খলা ব্যাপক অবনতি ঘটে। এর সাথে অবাঙালি মুসলমান হত্যা, ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ এমনকি পাকিস্তানি আর্মিদেরকে খুন করা। এর জবাবে কাউন্টার ইনসার্জেন্সি অপারেশন ইত্যাদি কারণে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ছাড়াও বেশ কিছু নিরীহ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আমার পরিবারও ভারতে আশ্রয় নিছিল। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের একটা পলিসি ছিল না যে, পুরো পাকিস্তানের মানুষকে রিফিউজি বানায় ভারতে পাঠায় দেওয়া। এটা আমরা কিভাবে জানি? কারণ পাকিস্তান সরকার ভারতে আশ্রয় নেওয়া রিফিউজিদের দেশে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানাইছিল। এমনকি শরণার্থীদের দেশে ফিরে আসলে তাদের রিসেপশন করার জন্য সীমান্তে অভ্যর্থনা কমিটির ব্যবস্থাও করছিল। কিন্তু ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা ভারতের ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করার বদলে দেশে ফিরে না আসে এইজন্য ইন্ডিয়া আর আওয়ামী লীগ শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনকে নাশকতা করে। শরণার্থীরা সবাই দেশে ফিরে আসলে তো ভারতের বাটপারি মাঠে মারা যাবে। গভর্নর টিক্কা খান যেদিন সীমান্তে ফিরে আসে শরণার্থীদের রিসেপশন করার জন্য, অভ্যর্থনা কমিটিতে যায় তখন লীগের গুন্ডারা সেই রাস্তা দিয়ে শরণার্থীদের যে বাস আসবে সেই রাস্তার মধ্যে মাইন পুইতা রাখে। এর ফলে প্রত্যাবর্তনরত শরণার্থীদের বাস মাইনের উপরে পইড়া বিস্ফোরণে উইড়া যায় যাত্রিসমত সবাই মারা যায়” বলেন তিনি।

প্রবাসী এই লেখক বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় ৩০ লাখ শহীদ। বিএনপি তাদের যে ৩১ দফা দিয়েছে সেখানে ২২ নাম্বার দফা এই ব্যাপারে তারা একটা প্রতিজ্ঞা করিছে। অনেকগুলো দাবির মধ্যে এটা বলছে যে ৭১ সালে নিহত হওয়া মানুষের সংখ্যা এক্সটেন্সিভ সার্ভে কইরা বের করবে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বেগম খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে একটা বক্তব্য দিছিলেন। সেটা শুনে আওয়ামী লীগ আর সিপিবি-বামদের মাথা খারাপ হয়ে গেছিল। চিল্লাপাল্লা শুরু করছিল। পারলে ওইদিনই খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে যায়। খালেদা জিয়া বলছিলেন যে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে।এখনো অনেকেই বলে এমনকি যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী তারাও বলে যে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষে সোহরাওয়ার্দীর বডিগার্ড (শেখ মুজিব) যখন ১০ই জানুয়ারি নয় মাস পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে তখন সে এক বিদেশী সাংবাদিককে নিহতের সংখ্যা তিন লাখ বলতে গিয়ে ইংরেজিতে ভুলে তিন মিলিয়ন বলে। এরপর একবার বলে ফেলার পর সেটা বারবার রিপিট করতে করতে আন্তর্জাতিক মিডিয়াও আনক্রিটিক্যালি কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই সেই সংখ্যা বিভিন্ন জায়গায় কপি পেস্ট করে প্রিন্ট করে প্রচার করতে থাকে। এখন এইটা সাংবাদিকতা পেশার একটা কমন বৈশিষ্ট্য। সাংবাদিকরা এক জায়গায় পাবলিশ হওয়া রিপোর্ট কপি পেস্ট করে নিজেদের মধ্যে পাবলিশ করতে থাকে। আসল ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকরা ব্লাইন্ডলি কোন রিপোর্ট কপি পেস্টের অভ্যাস ফলো করে না। সেই ব্যাপারে তদন্ত কইরা দেখে। এটা খালি বাংলাদেশে না। আমেরিকা সহ পাশ্চাত্যের মিডিয়াতেও হয়।

আরও পড়ুনঃ  ফেসবুক থেকে এখন আয় করতে পারবেন যে কেউ, জেনে নিন উপায়!

“এখন যারা বলে সোহরাওয়ার্দীর বডিগার্ড (শেখ মুজিব) ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩০ লাখ বলছে, তারা ওই ৩ লাখ সংখ্যাটাই বা কোন সার্ভের ভিত্তিতে পাইছে। যদি এটা জিজ্ঞেস করেন এ ব্যাপারে কোন জবাব পাবেন না। ঘুরে ফিরে কিছু পেপারের কপি পেস্ট করে কিছু আর্টিকেল বড়জোর দেখাবে। যেসব আর্টিকেলে কোথাও কোন ধরনের ফিল্ড সার্ভের কোন রেফারেন্স থাকে না” বলেন তিনি।সাংবাদিকতা কোর্স

“এখন এটা মানলাম যে, শেখ মুজিব লাখকে ইংরেজিতে মিলিয়ন বলছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ৩ লাখ সংখ্যাটাও তো ৩০ লাখের মতই ভিত্তিহীন। বানানো একটা সংখ্যা। যারা এই সংখ্যা প্রচার করে তারা তো আজগুবি একটা সংখ্যা প্রচার করে।”

পিনাকী বলেন, এবার আসেন আসল সংখ্যা কত ছিল সেটা বের করা যাক। আস্তে আস্তে সব রেফারেন্স দেখাইতেছি। প্রথমত ৩ লাখ সংখ্যা নিয়ে একটা রেফারেন্স দেখাই। ৭১ সাল নিয়ে সবচেয়ে বেশি স্কলারলি বই হইতেছে লিসন আর রোজের। বইয়ের নাম হইতেছে ‘ওয়ার এন্ড সেশন পাকিস্তান, ইন্ডিয়া এন্ড দ্য ক্রিয়েশন অফ বাংলাদেশ’। ১৯৯১ সালে পাবলিশ হয় বইটা। এখানে দুইজন লেখক এই বইতে দেশগুলার সমস্ত অফিশিয়াল ডকুমেন্ট রিভিউ করছেন এবং তিন দেশের ৭২ সালে ভূমিকা রাখা সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইনপার্সন সামনাসামনি সাক্ষাৎকার নিছেন। এ সমস্ত তথ্য প্রমাণ তারা বিশ্লেষণ কইরা এই বইটা লিখছেন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রামাণ্য বই। এই বইয়ের লেখকেরা ৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ করা দুইজন অত্যন্ত সিনিয়র ভারতীয়র সাক্ষাৎকার নিছেন। যেখানে তাদের জিজ্ঞেস করা হয় ৭১ সালে নিহত বাঙালির সংখ্যা কত? একজন ভারতী উত্তর দেয়, ৩ লাখ কারণ সে টের পাইছিল এই ঘাগু লেখকদের কাছে ৩০ লাখের মত অবাস্তব ভাষ্য করা একটা সংখ্যা বেচা যাবে না। সে অন্য প্রচলিত সংখ্যা ৩ লাখ বলে দেয় ফট কইরা। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই ভারতীয় যখন ৩ লাখ বলে তার পাশে বসে তাকায় থাকা আরেকজন ভারতীয় তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে সংখ্যা বাড়াও এটা বুঝানোর জন্য। এরপর প্রথম ভারতীয় এক ধাক্কায় তার সংখ্যা বাড়িয়ে ৫ লাখ বলে ফেলে। মাথায় যা আসে ফসাদ করে কয়ে দেয়। ইন্ডিয়ান প্রপাগান্ডা কি মাল সেটা আজ কে ভালো বুঝছে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলা পর্যন্ত একটা ঘটনার ছবি আরেকটা ঘটনা ছবিগুলা চালায় দেয়। এইখানে লেখক দুইজন সে ঘটনার বিবরণ লিখছেন এবং মতামত দিছেন এবং হতাহতের সংখ্যা যাই হোক এর মধ্যে অনেক প্রশ্ন আছে,যেমন কতজন যুদ্ধ করতে যে মারা গেছে কতজন বিহারী ছিল অবাঙালি মুসলমান ছিল এর মধ্যে কতজন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে কতজন ভারতীয় বাহিনীর হাতে কতজন মুক্তি বাহিনীর হাতে মারা গেছে বা পাকিস্তানি বাহিনীর কতজন মারা গেছে, রাজাকার কতজন মারা গেছে।

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিলাতের দা গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটা আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। ‘বিগ ব্রাদার গোস টু ওয়ার’ এর লেখক শাস্তিব্রত একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ভারতীয় বাঙালি সাংবাদিক যিনি ত্রিপুরাতে ভারতীয় ট্রেনিং শিপ ঘুরে দেখে এসে সেখানে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং নিয়ে একটা রিপোর্ট করেন। রিপোর্টে এটাও লেখা আছে, এই রিপোর্ট যদি ভারত থেকে করতো তাকে ভারতে গ্রেপ্তার করতো। উনি সেপ্টেম্বর মাসে আগরতলাতে একটা ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর ভলেন্টিয়ারদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, সেখানে ২০০ জনের ভলেন্টিয়ারদের মধ্যে মাত্র ছয় জনকে সামান্য কিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। মাত্র তিনজন কোন একটা অপারেশনে অংশ নিছে। সব অপারেশনে যেমন ব্রিজ ধ্বংস করে এরকম কাজে ইন্ডিয়ানরা কিন্তু নিজে করতো। মুক্তিবাহিনীর নিজেদের সদস্যের সদস্যদের মতে তারা বড়যোদ্ধ একটা গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে।

“আসেন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ করি। ৭১ সালের যুদ্ধে ইস্টার ফ্রন্টে পাকিস্তান আর্মির অর্ডার অফ ব্যাটেল কি ছিল। অর্ডার অফ ব্যাটেল হইতেছে একটা যুদ্ধে দুই পক্ষের মধ্যে কার কয়টা ইউনিট অংশ নিয়েছে, কোন ইউনিট কি রকম সেটার একটা লিস্ট তালিকা আরকি। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪১ সালে জার্মানি যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে হামলা করে সেটার নাম দিছিল অপারেশন বারবার। এই অপারেশন বারবার ছিল ব্যাপক একটা অভিযান।
মিলিটারি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান গুলোর মধ্যে একটা । সেখানে জার্মান পক্ষে ১৪১ টা ডিভিশন অংশ নেয়। সোভিয়েত পক্ষে জার্মানির এস্টিমেট ছিল ২১৪ টা ডিভিশন। একটা ডিভিশন প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার সৈন্য থাকে। ৭১ সালে ইস্টারন ফ্রন্টে পাকিস্তান আর্মির অর্ডার অফ ব্যাটল ছিল তিনটা মাত্র- ১৪ ডিভিশন, ১৬ ডিভিশন আর ৯ ডিভিশন। ১৪ ডিভিশন আগে থেকেই ছিল। মার্চের শেষ দিকে এপ্রিল মাসে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অতিরিক্ত ১৬ আর ৯ ডিভিশন আসে। ইস্টারন ফ্রন্টে এই দুইটা ডিভিশন তাদের ভারী অস্ত্র মানে ভারী কামানটামান এগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে রেখে আসে। তারা খালি লাইট উইপন্স মানে হালকা অস্ত্র মটার- এগুলো নিয়ে আসে। সামরিক পরিভাষায় ইস্টার্ন ফ্রন্টে তো আসলে যুদ্ধ ছিল না এটা ছিল কাউন্টার ইনসার্জেন্সি অপারেশন।”

তিনি আরো বলেন, জার্মানরা জাতি হিসেবে হাইলি এফিশিয়েন্ট জাতি। জার্মানি তখন প্রথম বিশ্বের একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল দেশ ছিল যাদের লজিস্টিক্যাল ক্যাপাবিলিটি ট্রিমেন্ডাস ছিল। এত এত মানুষ সৈন্য রসদ এফিশিয়েন্সি মুভ করানো চারটাখানি কথা না। তাও এত এফিশিয়েন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল একটা জাতি পাঁচ বছরে শতশত ডিভিশন সৈন্য আর তাদের ট্রিমেন্ডাস ইন্ডাস্ট্রিয়াল লজিস্টিক্স ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে সারা ইউরোপ খুঁজে খুঁজে মাত্র ৬০ লাখ ইহুদি মারতে পারলো আর পাকিস্তানের মত একটা তৃতীয় বিশ্বের দেশ মাত্র নয় মাসের কাউন্টার ইনসার্জেন্সি অপারেশনে মাত্র তিনটা ডিভিশন ব্যবহার কইরা কোন বিশাল বিশাল গ্যাস চেম্বার ইন্ডাস্ট্রিয়াল চুল্লি ব্যবহার না কইরা ৩০ লাখ লোক মাইরা ফেলাইল এবং লুকায় ফেলাইল। গাঞ্জা না খাইলে নাকি প্রগতিশীল হওয়া যায় না। তো গাঞ্জার নৌকা কোন পাহাড়তলিতে নিছিল দেখেছেন কেউ। কেউ প্রশ্ন করে নাই। কাউরে প্রশ্ন করতে দেয় নাই। এটাই প্রগতিশীলতা। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

আরও পড়ুনঃ  জামায়াতের কর্মী সংখ্যা বাড়াতে বললেন পুলিশ কর্মকর্তা

পিনাকী বলেন, ২০২৩ সালে গাজার যুদ্ধে ইসরাইল প্রায় দুই বছর ধরে গাজার উপরে ব্যাপক এরিয়াল বোম্বিং করছে। গ্যাস চেম্বারের পর এরিয়াল বোম্মিং হচ্ছে সবচেয়ে বড় এফিশিয়েন্ট মেথড অফ জেনোসাইড। যুদ্ধবিমান থেকে ১০০০ বা ২০০০ পাউন্ডের একটা বোমা একটা ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় ফেললে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়। এরপরেও গাজার হেলথ মিনিস্ট্রির হিসেবে গাজাতে দুই বছরে নিহতের সংখ্যা ৭০০০০ এর মত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ব্লাডিয়েস্ট রক্তাক্ত যুদ্ধ ছিল ফ্রান্সে ভারডুনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ১৯১৬ সালের ১০ মাস ধরে সংঘটিত হয়। ১০ মাস ধরে ১২ লাখ জার্মান আর ১১ লাখ ফরাসি সৈন্য রিলেটিভলি একটা অত্যন্ত ছোট এলাকায় জড় হয়ে ক্রমাগত আক্রমণ প্রতি আক্রমণ করতে থাকে। দুই দেশই শিল্পোন্নত। প্রথম বিশ্বের দেশ। বিশাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর লজিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি। ভারডুনে জার্মানরা প্রথমদিন ফরাসি পজিশনে ১০ লাখ আর্টিরালি সেল নিক্ষেপ করছিল। একদিনে পুরা যুদ্ধে দুই পক্ষ মিলে চার থেকে পাঁচ কোটি খালি আর্টিলিশেল নিক্ষেপ করছে। কত কোটি কোটি রাউন্ড রাইফেল আর মেশিনগান গুলি খরচ করছে সেটা তো হিসাবই নাই। ভারডুনে যুদ্ধে জার্মান সৈন্য ক্যাজুয়ালটি বা নিহত হইছে দেড় লাখ, ফরাসি হতাহতের সংখ্যা দেড় লাখের মত, সেখানে পাকিস্তান পুরা নয় মাসের কাউন্টার ইনসার্জেন্সি অপারেশনে কোথাও কোন ধরনের এরিয়াল বম্বিং না কইরা ৩০ লাখ বা তিন লাখ মাইরা ফেলল?এ মূর্খ প্রগতিশীলদের এ সমস্ত বয়ান শুনলে আসমানে উঠে যেতে ইচ্ছা করে।

বিখ্যাত আমেরিকান সাংবাদিক উলিয়াম ড্রাম ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের প্রফেসর। ৭২ সালের ৬ জুন বিলাতের গার্ডিয়ান পত্রিকা ঢাকা থেকে পাঠানো উনার সেই রিপোর্টটা ছাপে। যুদ্ধের পর বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ে অসংখ্যবার ভ্রমণ কইরা গ্রামের মানুষজনের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন মানুষের সাথেও ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন। উনি লিখছেন ইংরেজিতে “মাই জাজমেন্ট বেসড অন নিউমেরাস স্ক্রিপউন্ড বাংলাদেশ এন্ড এক্সটেন্সিভ ডিসকাশন উইথ মেনি পিপল ভিলেজ লেভেল এসওয়েল ইন গভমেন্ট থ্রি মিলিয়ন ডেথ ফিগার ইজ এক্সাজারেশন সো গ্রস টুবি”। তার মানে উনি বলতেছেন যে, আমি বিভিন্ন সরকারি লোক এবং গ্রামের লোকদের সাথে আলাপ-শালাপ কইরা যেটা বুঝতে পারছি যে এই ৩০ লক্ষ নিহতের সংখ্যা এত বেশি বাড়ায় বলা যেটা একটা অসম্ভব এবং ভুয়া একটা সংখ্যা। এরপরে উনি মুজিবের নিহতের সংখ্যা নিয়া একটা সার্ভের কথা প্রকাশ করেন। মুজিব ৭২ সালে দেশে আইসা ৩০ লাখ নিহত বলার পর একটা সরকারি উদ্যোগ নিছিলেন নিহতদের আসল সংখ্যা বের করার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের তৎকালীন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যে প্রত্যেক থানায় পুলিশের মাধ্যমে একটা রিপোর্ট পাঠাইতে ওই থানায় নয় মাসে পাকিস্তান আর্মির হাতে নিহত মানুষের সংখ্যা কত এবং সেগুলো যোগ করে কত আসে। মুজিব সেই রিপোর্ট আসলে সংখ্যা দেখা স্বাভাবিকভাবেই সেটাকে ধামাচাপা দেয়। বিলরামন্ড একদম সরকারের ভেতর থেকে সেই রিপোর্ট দেখে সে সংখ্যা প্রকাশ করে। সংখ্যাটা কত?

“সংখ্যাটা আসল সংখ্যা শুনলে ভিমড়ি খাইবেন। ৩ লাখ? এক লাখ? ৩ হাজার? ১০ হাজার? না কোনটাই না। ২ হাজার। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, ২ হাজার। এই রিপোর্টটা এখনো আছে যে কেউ নিজের চোখে সেটা পড়ে নিতে পারেন। স্পষ্ট লেখা আছে ইংরেজি” জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রথমে আমাদের বের করতে হবে দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে জনপদের মধ্যে কোথায় কোথায় পাকিস্তানি আর্মির বেস ক্যাম্প ছিল। এটার সংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কথা না, পাকিস্তানের মাত্র তিনটা ডিভিশন সৈন্য দেশে কাউন্টার ইনসার্জেন্সি অপারেশনে ছিল। এরপরে বের করতে হবে নয় মাসে পাকিস্তান আর্মি দেশে কয়টা গ্রামে কখন কবে রেড দিছে। পাকিস্তানও এ ব্যাপারে আমাদেরকে হেল্প করতে পারে চাইলে তারা করবে। আমরা দরকার হলে ক্রস চেক করে নেব কতজন সৈন্য সেই রেডে অংশ নিছে। ৭১ সালে জীবিত প্রাপ্ত বয়স্ক বহু মানুষ এখনো জীবিত আছে এরকম রেড প্রত্যেক গ্রামে তো হয় নাই। দেশে ৬৮ হাজার গ্রামের মধ্যে অতি অল্প সংখ্যক গ্রামেই হইছে তার উপরে এক গ্রামে বড়জোর একবার কি দুইবার এরকম রেড হইছে। দিন সময় সপ্তাহ অনুযায়ী পুরা নয় মাসের ঘটনাকে রিকনস্ট্রাক্ট করা এভাবে সম্ভব। এটা করা হইলে কমন সেন্সর ইনভেস্টিগেটিভ সব রিপোর্ট অনুসারে পাকিস্তান আর্মির কাউন্টার ইনসার্জেন্সির আসলে নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজারে নেমে আসবে। আমি সিওর।

“এরপর সেই তদন্ত খালি বাঙালি না। ভারতীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে যত অবাঙালি মুসলমান মারা গেছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে সেটাও বের করতে হবে। দুইটা সংখ্যায় কম্পেয়ার করে ঠিক করা হবে। এই তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কেউ কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পররাষ্ট্র সচিব জসিম খুব লাফাইছিল পাকিস্তানেরকে ক্ষমা চাওয়া নিয়া।”

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ