দেশের আর্থিক খাত ‘মারাত্মক ঝুঁকির’ মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘সরকার আর্থিক খাতকে উন্নত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রথমত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। দাম স্থিতিশীল না হলে কিছুই সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, যা বর্তমানে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে আছে।’
বুধবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
গভর্ন বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, দেশের উন্নয়নের অবস্থা এবং ব্যাংকিং খাতের নাজুক পরিস্থিতি। একে স্থিতিশীল করতে আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। তবে এটা করা সম্ভব এবং আমরা তা করবই।‘
গভর্নরের মতে, তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নতুন উদ্ভাবন এবং আর্থিক শিক্ষার প্রসার। এই খাতেও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি তুলে ধরেন।
গত বছর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর্থিক খাতের দুর্দশার চিত্র একের পর এক সামনে আসতে থাকে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একের পর এক অনিয়ম, জালিয়াতি ও প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে বিদেশে পাচার করার তথ্য তুলে ধরা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।
এসব তথ্য প্রকাশ হতে থাকলে গ্রাহক সেসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এতে কিছু ব্যাংকের হাড্ডিসার খোলস বেরিয়ে আসে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে থেকেই অর্থনীতিতে সংকট চলছিল। ২০২৪ সালের জুনে আওয়ামী লীগ সরকার যখন নতুন অর্থবছরের বাজেট দিয়েছিল, তখনো অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না।
কিন্তু এরপর জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন, নজিরবিহীন অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার যে সংকট আর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরেও সেখান থেকে সামলে ওঠা যায়নি।
জিডিপিতে বিদেশি সহায়তার অংশ কমে যাওয়ায় এখন বাংলাদেশকে নিজস্ব অর্থ জোগাড়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে গভর্নর মনে করেন।
বর্তমানে রাজস্ব আদায় পর্যাপ্তভাবে হচ্ছে না জানিয়ে আহসান মনসুর বলেন, এ খাতে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তা ছাড়া সরকার এ খাত নিয়ে কাজ করছে যেন আয় বাড়ানো যায়। সে জন্য রাজস্ব আদায়ে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
গভর্নর বলেন, ‘রাজস্ব আহরণে বাংলাদেশ ভালো করতে পারছে না, এ খাতে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের ধর্মঘটের নেতিবাচক প্রভাব আমরা দেখেছি। তারা মূলত তাদের বিদ্যমান অবস্থা বজায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু এটি কোনো সমাধান নয়।‘
তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। ভারত যদি জিডিপির ১৮ থেকে ২০ শতাংশ, নেপাল যদি ২০ শতাংশের বেশি রাজস্ব তুলতে পারে, তবে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?’
কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার: ড্রাইভিং ডেভেলপমেন্ট উইথ মার্কেটস, ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিদেশি অর্থায়ন শুধু প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বেসরকারি খাতেও বিদেশি অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কাজে লাগানোর বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে বলেও গর্ভনর মনে করেন।