সম্প্রতি ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন জম্মু-কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পহেলগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার রেশ কিছুতেই যেনো কাটছে না। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন। ভারত নেক্কারজনক এই সন্ত্রাসী হামলার জন্য সরাসরি দুষছে চিরশত্রু পাকিস্তানকে। তবে পাকিস্তান এই হামলার সাথে কোনভাবেই জড়িত নয় বলে দাবী করেছে। এদিকে ভারতের অভ্যন্তরেই কিছু ঘটনার কারণে কাশ্মীর হামলা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। ভারতের স্থানীয় এক সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক হিন্দুরাও দাবী করছেন এই হামলা সম্পূর্ণভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাজানো নাটক। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই এই হামলা এমনটিই বলছেন স্বয়ং ভারতীয়রা।
এখন প্রশ্ন হলো কাশ্মীরের এই হামলার ঘটনায় মূলত কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী মোদির আসলে কী কী লাভ হলো। প্রথমত জম্মু কাশ্মীর অঞ্চলটি নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের দ্বন্দ্ব সেই ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেশ ভাগের পর থেকেই। সেসময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান আর হিন্দু ধর্মলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গঠিত হয় ভারত। এমনকি সেসময় বাংলাদেশের ভুখন্ডও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ার কারণে। তবে কোন এক আশ্বর্যজনক কারণে মুসলিম অধ্যষিত হওয়ার পরও জম্মু-কাশ্মীর এলাকাটি থেকে যায় ভারতের নিয়ন্ত্রণেই। এবার এই অঞ্চলটিতে হামলার ঘটনা ঘটার পর কোনরূপ তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানের ওপর দায় দিয়ে ভারত বিশ্বের কাছে এটি প্রমাণ করতে চাইছে যে মুসলামান মানেই জঙ্গি বা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত। মোদির এই মাস্টারপ্ল্যান দ্বারা সমগ্র বিশ্বের কাছে একধরণের সিমপ্যাথি আদায়েরও চেষ্টা করা হয়েছে।
এই হামলার দায়ভার মুসলিমদের ওপর দিয়ে ইসরায়েলি স্টাইলে যে মুসলিম নিধনের পায়তারা করেছে কসাই মোদি এটি তার দল বিজেপি নেতাদের কিছু বক্তব্যেই স্পষ্ট। একে কোন রকমের তদন্ত ছাড়াই ওরা বলছে পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে অপরদিকে তার দলের নেতারা বলছে পাকিস্তানকে গাজা বানানো হবে। মোদির দল বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারীর যে বক্তব্য ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তার মানে হলো ইসরায়েল যেভাবে গাজায় বর্বরতা চালাচ্ছে ভারতও পাকিস্তানের মুসলিমদের ওপর এমন বর্বরতা চালাবে। আবার পশ্মিমবঙ্গের সেই নেতা গণমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, ২৬টি লাশের বিনিময়ে মুসলিমদের ২৬০ টি লাশ চাই। এর মানে খুবই ষ্পষ্ট যে ভারত এবার নিজের দেশের মুসলিমদের হত্যাকান্ডের পর আশেপাশের দেশগুলোর মুসলিম নিধনের কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
অন্যদিকে কাশ্মীরে এই হামলার পর সর্বপ্রথম আশ্চর্যজনকভাবে এর নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। মুসলিম গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু এই হামলার সমালোচনা করে ভারতের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। অপরদিকে ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা চালাতে অস্ত্র দিয়ে সহয়তা করা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কাশ্মীর হামলা ইস্যুতে ভারতের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এসব ঘটনায় বিশ্লেষকরা ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার কর্র্তৃক মুসলিম নিধনের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন।
বেলাশেষে কাশ্মীরের এই হামলার ঘটনায় মোদির লাভের চেয়ে লসের পাল্লাটাই ভারী। এর প্রধান কারণ হলো ভারত-পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার পর পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। যার ফলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবেও ব্যপক লোকসানে পড়ে গেছে মোদির সরকার। পাকিস্তান আকাশ পথ বন্ধ করায় দীর্ঘ পথ ঘুরে ঘুরে দূরের গন্তব্যে যেতে হচ্ছে ভারতীয় সকল বিমানকে। এতে বড় ধরণের লোকসানের মুখে ভারতীয় বিমানখাত। আর কাশ্মীরের এই হামলা যে মোদির সাজানো নাটক হতে পারে তার প্রমাণও ইতিমধ্যে মিলতে শুরু করেছে বিভিন্ন মাধ্যমে।