পাকিস্তান বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ভারতীয় এয়ারলাইনসের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়ায়, পশ্চিমমুখী আন্তর্জাতিক রুটে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে শুরু করেছে ভারতীয় উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলো। বিশেষ করে নয়াদিল্লি, লখনউ ও অমৃতসর থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকার দিকে যাওয়া উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে রুট পরিবর্তনের ফলে সময়, জ্বালানি খরচ ও অপারেশনাল জটিলতা বেড়েছে। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
২০১৯ সালে বালাকোট স্ট্রাইকের পর আকাশসীমা বন্ধ থাকাকালীন ভারতীয় এয়ারলাইনসগুলো প্রায় ৭০০ কোটি রূপি ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল। এবারও সেই ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো ইতিমধ্যে কিছু রুটে উড্ডয়নের সময় (ফ্লাইট আওয়ার) ১-২ ঘণ্টা বাড়িয়েছে, আবার কিছু ফ্লাইট বাতিলও করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য দেশের এয়ারলাইনস যেহেতু পাকিস্তানের মূলভূখণ্ডের ওপর দিয়ে উড়তে পারবে, তাই তাদের খরচ কম থাকবে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভারতীয় সংস্থাগুলোর জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন রুটের ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ফ্লেক্সিবল রিবুকিং ও রিফান্ডের ব্যবস্থা রেখেছে। পূর্ণ আর্থিক প্রভাব জানতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
এর আগে, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপায় নয়াদিল্লি। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে নতুন সংকটের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে চিরবৈরী দুটি দেশের বাহিনীর মধ্যে।
ইতোমধ্যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারত, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি সামরিক অ্যাটাশিদের বহিষ্কার, ছয় দশকের পুরনো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতকরণ এবং আটারির স্থল-সীমানা ট্রানজিট পোস্ট বন্ধ করে দেয়া। এই পদক্ষেপগুলো মঙ্গলবারের পেহেলগাম হামলার পর নেয়া হয়, যেখানে ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানকে জানিয়ে দেয় যে, ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস পানি চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে।
ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাকিস্তানের পানি সম্পদ সচিব সৈয়দ আলী মুরতজাকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সততার সঙ্গে কোনো চুক্তি পালনের বাধ্যবাধকতা একটি মৌলিক বিষয়। কিন্তু আমরা যা দেখেছি তা হলো, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদ চালানো।’ পাল্টা জবাব হিসেবে নয়াদিল্লির জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেয় ইসলামাবাদ।