জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন এলাকা পহেলগামে হামলার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদির সরকার বারবার দোষারোপ করে আসছে মুসলমানদের। সরাসরি পাকিস্তানের ওপর দায় চাপালেও নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির নেতারা বলছেন এই হামলা চালিয়েছে কাশ্মীরী স্থানীয় মুসলমানরাও। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে কাশ্মীরী মুসলমানরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উল্টো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন হামলার শিকার হওয়া পর্যটকদের বাঁচাতে। ভাইরাল হওয়া এসব ভিডিও আবার সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন স্বয়ং ভারতীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। ভারতীয় মিডিয়ার শত চেষ্টার পরও মুসলমান সেই বীর যুবকের পরিচয় এবার সামনে এসেছে, যে একাই প্রাণপণে লড়ে উঁচু পাহাড় থেকে একের পর এক হামলার শিকার হওয়া হিন্দুধর্মাবলম্বীকে কাঁেধ করে নিচে নামিয়ে এনে প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
জম্মু-কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পহেলগামের স্থানীয় বাসিন্দা সাজাদ আহমেদ। তিনি পেশায় একজন শাল বিক্রেতা। পর্যটকদের কাছে শাল বিক্রি করেই সংসার চলে মুসলমান এই যুবকের। হামলার দিন রীতিমতো তিনি বের হয়েছিলেন শাল বিক্রি করতে। কিন্তু চোখের সামনে এমন নির্মম হামলা দেখে তিনি একাই প্রাণ বাঁচিয়েছেন ৫০ জনের ওপর পর্যটকের। আজ মোদি সরকার যেখানে এই হামলার দায় বারবার কাশ্মীরের মুসলমানদের ওপর দিচ্ছেন ঠিক তখনি যেনো মুসলমান এই বীর যুবকের পরিচয় সামনে এলো।
কাঁধে করে উঁচু পাহাড় থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর একজনকে নামিয়ে এনে প্রাণ বাঁচিয়েছেন মুসলমান এই যুবক। সম্প্রতি ভারতীয় হিন্দুধর্মলম্বী প্রেমা যাদব নামের একজন সামাজিক মাধ্যম এক্সে এই যুবকের একটি ভিডিও পোষ্ট করে ক্যাপশনে হিন্দিতে লিখেছেন, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘এই সেই কাশ্মীরী যে কয়েক ডজন মানুষকে পিঠে বহন করে বাঁচিয়েছিলো।’ আর তার পোষ্ট করা ভিডিওটিতেও দেখা যায় এই মুসলিম যুবক একজন পর্যটককে রক্তাক্ত অবস্থায় পিঠে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু সাজাদ আহম্মেদই নন সামাজিক মাধ্যমে আরও বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে একটি শিভাঙ্গী চৌধুরী নামের আরেক ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম এক্সে শেয়ার করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে মুসলমান এক যুবক একটি ছোট বাচ্চাকে নিয়ে উঁচু নিচু পাহাড় বেয়ে নিচে নামছেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে এই ভারতীয় নারী লিখেছেন, ‘পাহেলগাঁওতে যেদিন জঙ্গি হামলা হয়, সেদিন কাশ্মীরিরা নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে পর্যটক ্ তাদের সন্তানকে বাঁচিয়েছেন। পর্যটকদের বাঁচাতে দুজন প্রাণ দিয়েছেন, এইসব খবর মিডিয়া চ্যানেলে দেখতে পাবেন না। কারণ, ভারতীয় মিডিয়া চ্যানেল জঙ্গিদের মতনই চায় ভারতবর্ষের লোকদের ধর্মের নামে বিভাজন করতে।’ ভারতীয় এই নারীর পোষ্টটির পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও দেখা যায়, স্থানীয় কাশ্মীরী মুসলমানরা জীবন বাজি রেখে পর্যটকদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। আর শিভাঙ্গী চৌধুরী নামের সেই নারীর দেওয়া তথ্যমতে দুজন কাশ্মীরী মুসলমানও পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, যা ভারতীয় কোন গণমাধ্যমেই উঠে আসেনি। যদিও এই ভিডিওতে দেখা যাওয়া যুবকের পরিচয় মেলেনি। এছাড়া ২৮ বছর বয়সী মুসলিম এক ঘোড়া চালক, সৈয়দ আদিল হোসেন শাহ পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিলো এর আগেই।
এদিকে ভারতীয় গোদি মিডিয়াগুলোর কাজই তো এমন। ভারতে কোন হামলার ঘটনা ঘটলেই তার দায় চাপায় মুসলমানদের ওপর। ভারতীয় মিডিয়া কাশ্মীর হামলার বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করছে যে মনে হচ্ছে কাশ্মীরের হামলায় শুধুু হিন্দুদের প্রাণহানী হয়েছে আর যারা মেরেছে তারা মুসলিম। এখন প্রশ্ন হলো যদি তাই হয় তাহলে ভারতীয় এই নারীর তথ্যনুসারে তো হিন্দুদের বাঁঁচাতে উল্টো প্রাণ হারিয়েছে মুসলমানরা।
কাশ্মীরী মুসলমানরা যেখানে নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে জীবন বাঁচিয়েছেন একের পর এক হিন্দুধর্মাবলম্বী পর্যটকের। সেখানে মোদি সরকার যেনো ব্যস্ত এই হামলার দায় কাশ্মীরের মুসলমানদের ওপর চাপাতে। ইতিমধ্যে মুসলিম হত্যাকারী কসাই মোদির দল বিজেপির দলীয় নেতা-কর্মীরা কাশ্মীরের মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালানোর মত নেক্কারজনক ঘটনারও জন্ম দিয়েছে এই কাশ্মীর হামলাকে কন্দ্র করে। মোদি যেনো চাইছে কাশ্মীরের মুসলিমদের হত্যা করে ফিলিস্তিনের গাজার মত কাশ্মীরকে দ্বিতীয় গাজা বানাতে।