কুমিল্লার মুরাদনগরে কথিত ধর্ষণের ঘটনা। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়ার কাছ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অ্যামোনেশন ম্যাগজিন উদ্ধার। জামায়াতসহ কয়েকটি দলের পি.আর.পদ্ধতির নির্বাচন দাবি। ভেঙ্গে দেয়া এনবিআর কর্মকর্তাদের ‘অলআউট শাটডাউন’। মাঠ গরম ছিলো মোটামুটি এই তিন ইস্যুতেই। এর মধ্যে চট করেই মাঠে ছেড়ে দেয়া হলো অতি কচলানো পুরনো সেই ইস্যু। আবার সেই ‘প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন’!
ঘটনা কী ? ঘটনা হচ্ছে, ইস্যু পরিবর্তন। জন-দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানো। মিডিয়াকে অন্যকিছু দিয়ে ব্যতিব্যস্ত রাখা। এ কায়দা অনেকটা ভারতে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কাছ থেকে টুক্লিফাই করা। হাসিনা এবং তার দলদাস মিডিয়াগুলো নিপুণ কৌশলে এমন খেলা খেলতেন। পুরো জাতির চোখ যখন এক ইস্যুতে, তখন তিনি মাঠে ছেড়ে দিতেন ‘জঙ্গি’ ইস্যু। কখনো বা ঘটাতেন মর্মান্তিক অগ্নিকা-ের ঘটনা।
অনেকের মনে থাকার কথা। ২০২০ সালের ঘটনা। পুরো বিশ্ব যখন কোডিভ-১৯ মোকাবেলায় পর্যুদস্তÑ শেখ হাসিনা তখন মত্ত পিতা মুজিবের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন নিয়ে। চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ায় তখন লকডাউন চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন বারবার উচ্চারণ করছে মহা সতর্কবার্তা। আন্তর্জাতিক রুটের প্রায় সব ফ্লাইট বাতিল। বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা ল-ভ-। হাসিনা তখন গোটা প্রশাসনকে মগ্ন রাখেন আতশবাজিতে। কোভিড-১৯ আক্রান্তের পর বছর জুড়ে চললো ‘জন্মশত বার্ষিকীর’ নগ্ন নৃত্য। কোভিড প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা নেই। হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসার বিহিত-ব্যবস্থা নেই। ঘরের সিঁড়িতে, গেটের সামনে, পথে-ঘাটে লাশ পড়ে থাকছে। হাসপাতালগুলোতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর ঠাঁই নেই। আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডাক্তারদের মধ্যে পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই)র অভাব। মাস্ক নেই। তখনো করোনাকে ‘মহামারি’ ঘোষণার নাম নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে গৃহীত সকল ব্যবস্থাই অকার্যকর হওয়ার দশা। টিকা আবিষ্কার হওয়ামাত্র যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাস্ট্রোজেনেকা টিকা আনার জন্য ভারতকে অগ্রিম পেমেন্ট। সর্বত্রই যখন হাসিনা সরকারের ব্যর্থতার চিত্র। ঠিক তখনই ডিবি হারুন এবং র্যাবকে দিয়ে মাঠে ছেড়ে দেয়া হলো ‘ক্যাসিনো’ ইস্যু। ধরা শুরু হলো নিজদলেরই ‘নট-গুড’ বুকে থাকা কিছু পাতি নেতাকে। সামনে আনা হলো কিছু মুখ। কিছু নাম। ওমর ফারুক, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, জি.কে. শামীম, সেলিম প্রধান, এনু-রূপন, পাপিয়া। বিশ্বের অনেক দেশ যখন করোনার টিকা হাতে পায়, বাংলাদেশ তখনো টিকা প্রাপ্তির নাম নেই। এই ব্যর্থতা ঢাকতে মাঠে ছাড়া হয় মোহাম্মদ সাহেদ ও সাবরিনা ইস্যু।
ইসু্যূ দিয়ে ইস্যু বিনাশের এই তরিকা নতুন কিছু নয়। এসব কৌশল আম-জনতার অতি চেনা। ১০ মাস বয়সী অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে প্রথমোক্ত কয়েকটি ইস্যু। বিশেষ করে কুমিল্লার মুরাদনগরে নিজ গৃহে সংখ্যালঘু পরিবারের গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিহীনতা নিয়েও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রশ্নের। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উত্তরণে যখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় মানুষ অধীরÑ তখন মীমাংসিত ইস্যু দিয়ে সাত-পাঁচ বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
গত তিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যে, ‘ফ্যাসিস্ট’ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার স্থলাভিষিক্ত নাকি হচ্ছেন বিএনপি’র চেয়ারপার্সন, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া! কিসের ভিত্তিতে কোন্ যুক্তিতে এটি সম্ভব- সেই প্রশ্ন কেউ করছে না। যে সম্ভাবনার (বর্তমান প্রেসিডেন্টকে অপসারণ) কথা গেলো বছর সেপ্টেম্বরেই বিএনপি নাকচ করে দিয়েছে সেটি নতুন করে বিএনপি কেন চাইবে? নাকি এটি আসন্ন নির্বাচনকে বিলম্বিত করা কিংবা অনিশ্চিত করে তোলারই নতুন কোনো ফাঁদ ? বিশ্লেষকরা তেমনটিই সন্দেহ করছেন। বিএনপি সেই ফাঁদে পা দেবে না- এমনটিই বিশ্বাস তাদের।
জুলাই, জাগরণের মাস জুলাই। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে উৎখাত-আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো এ মাসে। হাসিনা বিরোধী এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের সম্ভাবনা বানচালের প্রয়াসও হতে পারে ‘প্রেসিডেন্ট অপসারণ’র ইস্যু।
১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের এই সময়জুড়ে ক্রমে ঘনীভূত হয় হাসিনা উৎখাতের আন্দোলন। প্রথমে কোটা আন্দোলন। পরে এ ইস্যুকে খুঁচিয়ে শেখ হাসিনা নিজেই ‘উৎখাত আন্দোলন’এ উন্নীত করেন। এক অভূত জাতীয় ঐক্যের চূড়ান্ত রূপ ছিলো ৫ আগস্ট। ক্ষুব্ধ, তরঙ্গায়িত ঢাকামুখী সেই গণজোয়ার আছড়ে পড়ে গণভবনের চৌকাঠে। হাসিনা সপরিবারে পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগীরা পড়িমরি করে যে যেভাবে পারে পালিয়ে যান। আত্মগোপনে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। বলাচলে সরকারহীনতার ৩ দিন (৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট) দেশে কোনো প্রশাসন ছিলো না। সকল প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও স্থাপনার ওপর চলে মানুষের ক্ষোভের অগ্নিপ্রজ্ব¡লন। অক্ষত ছিলো শুধু একটি মাত্র স্থাপনা। সেটি হচ্ছে বঙ্গভবন। বঙ্গভবন থেকেই তখন উদ্যোগ আসে নতুন সরকার গঠনের। প্রয়োজন পড়ে সুপ্রিমকোর্টের রেফারেন্ডাম। প্রেসিডেন্ট পদটি অলঙ্কারিক হলেও সে সময় এ পদটি ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর। এ পদে তখন ছিলেন হাসিনার পছন্দে বসানো প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বিতর্কিত, বিদ্যমান সংবিধানের আওতায়ই তখন জাতিকে খুঁজতে হয় অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণের পথরেখা। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে শপথ নিতে হয় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকেই। সরকারের শপথ গ্রহণের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সমন্বয়কগণ এবং মাঠে থাকা প্রায় সকল রাজনৈতিক দল। তারা তখন সবাই অনুধাবন করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট পদটি নেহায়েত কোনো ‘পদ’ নয়। পদটি সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত প্রধান ব্যক্তির পদ। এ পদের জন্যই বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের শপথ দান অনুষ্ঠানকে সবাই মেনে নিয়েছিলেন।
সরকার গঠনের এক মাসের মাথায় প্রশ্ন ওঠে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের এ পদে থাকার বৈধতা নিয়ে। মধ্য সেপ্টেম্বরে তার ‘সেকেন্ডহোম’ পার্টনারশিপ বিজনেস এবং সংযুক্ত আরব-আমিরাতে রেসিডেন্সির তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এর ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়করা (আজকে তাদের অনেকেই এনসিপি নেতা) সাহাবুদ্দিনের অপসারণ দাবি তোলে। বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে কেন সরিয়ে দেয়া হচ্ছে নাÑ এ প্রশ্ন করেন বুদ্ধিবৃত্তিক জীবিকা নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ। জামায়াতে ইসলামীও কণ্ঠ মিলিয়েছিলো সেই কোরাসে। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের নিজ থেকেই সরে যাওয়া উচিৎ- এমন বক্তব্য দিতে শুরু করেন কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। বড় দল বিএনপি তখন কোন্ দিকে যাবে ? উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে অত্যন্ত ধীর-স্থির গতিতে দূরদর্শী এক সিদ্ধান্ত এলো তখন লন্ডন থেকে। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে নতুন কোনো সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হোক, বিএনপি সেটি চায় না ! এ কথার পর ক্রমে মিলিয়ে যেতে থাকে সাহাবুদ্দিন ইস্যু।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি’র এই অবস্থান ছিলো অত্যন্ত দূরদর্শী। কারণ ব্যক্তি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কোনো বড় বিষয় নয়। ইস্যু হচ্ছে সংবিধান। বিশাল এক সাংবিধানিক সঙ্কটের গহ্বরে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করলে তিনি হয়তো বন্দী হতেন, বিচারের মুখোমুখি হতেন। কিন্তু জাতি নিপতিত হতো গহীন সঙ্কটের গহ্বরে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছিলো সাহাবুদ্দিনকে প্রেসিডেন্ট মেনে। বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে।
১০ মাস আগের সেই আশঙ্কাটিকেই পুনরায় সামনে আনা হয়েছে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে ‘আউট’ করার কথা তুলে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি এবারও দূরদর্শীতার পরিচয় দেবে। নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার এই ফাঁদে কোনো ক্রমেই পা দেবে না।
শেখ হাসিনা সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করে গেছেন। এমন সঙ্কট সৃষ্টি করে গেছেন যে, তার সৃষ্ট গোলক ধাঁধাঁ থেকে উত্তরণে আপাত: অবলম্বন করতে হবে তারই পথ। কারণ বিদ্যমান সংবিধানে আপাতদৃষ্টিতে এমন কোনো ছিদ্রপথ খোলা নেই, যা দিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিটি সাংবিধানিক এ আসন শূন্য করে স্বেচ্ছায় চলে যেতে পারেন। সম্ভব হলে সেটি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তখনই করতেন। বিদ্যমান অবস্থা থেকে বেরুনোর পথ সংবিধান বিশ্লেষকদেরও প্রায় অজানা। যদিও কোনো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট কেবল প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে বিতাড়নের মাঝেই সমাধান দেখাচ্ছেন। আসলে কি তাই ?
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী, সরকারের মন্ত্রী এমনকি সাড়ে ৩শ’ এমপির পুরো সংসদ একযোগে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। এ কারণে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার নিজেদের ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠিত হয়নি। কিছু বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো মাত্র। অন্তর্বর্তী সরকার জনআকাক্সক্ষা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে ‘বিলুপ্ত’ ঘোষণা করেছেন। পরে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। গ্রেফতার করা হয় হত্যা মামলার আসামি ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে। হাসিনা সরকারের ‘শেষ চিহ্ন’ হিসেবে রয়ে যান কেবল প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবু্িদ্দন।
প্রশ্নটা হচ্ছেÑ কেমন করে তিনি পদত্যাগ করবেন? কিংবা তাকে অপসারণ করা যাবে? তাকে অপসারণের পদ্ধতিটাই বা কি? এর উত্তর বিদ্যমান সংবিধানে নেই। ফলে সংবিধান নিয়ে সৃষ্ট এ গোলক ধাঁধাঁর কথা কারো মাথায় নেই। আজকের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে সেটি সংবিধানের ১৭ বারের সংশোধনীতে একবারও ভাবা হয়নি। এমনটি স্বীকার করছেন সংবিধান বিশ্লেষকরাই।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর মতে, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যদি নিজ থেকে পদত্যাগ না করেন, আইনত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও বর্তমান আইন বলছে, পরবর্তী সংসদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত ধরে নিতে হবে বর্তমান সংসদ বহাল রয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্ট যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাকে ইমপিচ বা অভিশংসন করার বিধান রয়েছে। ইমপিচমেন্ট তখনই হয় যখন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে করণীয় জানতে এক্সিকিউটিভ সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে রেফারেন্স চাইতে পারেন। তৃতীয় কথা হচ্ছে, যেহেতু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন, তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। সেহেতু তার দায়িত্ব পালন করবেন ডেপুটি স্পিকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার গ্রেফতার হলেও তিনি এখন পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত হননি। তার পদ বহাল রয়েছে। স্পিকারের স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও ওই শূন্যস্থান পূরণে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার হবেন স্পিকার। একইভাবে প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার হবেন প্রেসিডেন্ট। আইনি ব্যবস্থাপনায় এমনটি রয়েছে। সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে।
এই আইনজীবী মনে করেন, প্রেসিডেন্টকে অপসারণের পদ্ধতি দু’টি। একটি হচ্ছে, তিনি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন তাহলে সংসদ রি-কল করে তাকে ইমপিচ করা। দ্বিতীয়তটি হচ্ছে, অ্যাডভাইজারি ওপেনিয়নের জন্য সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ। সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম গৃহীত হবে। এটি পরিষ্কার।
‘প্রেসিডেন্টের নৈতিক স্খলন’ হয়েছে কি না এটি কে নির্ধারণ করবে? নৈতিক স্খলন হয়েছেÑ এমনটি তো যে কেউ মনে করলে কিংবা দাবি করলেই হবে না। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ তো উঠতেই পারে। সেটি তো প্রমাণ ও তদন্ত সাপেক্ষ। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত করার এখতিয়ার তো সংবিধানে কাউকে দেয়া হয়নি। বরং সংবিধানের ৫১(১), ৫১(২) অনুচ্ছেদে প্রেসিডেন্টকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। সাংবিধানিকভাবেই তিনি কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন।
এদিকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকার সংবিধানকে ইচ্ছেমতো কাটা-ছেঁড়া করে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে, কেউ চাইলেও বিদ্যমান সংবিধান সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারবে না। বর্তমান সরকার এই সংবিধানের আওতায় শপথ নিয়েও পড়েছে অভূত এক গ্যাঁড়াকলে। একদিকে তারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। অন্যদিকে সংবিধানের মধ্যেও থাকতে পারছে না।