মা নেই—রাতের আঁধারে চিরবিদায় জানিয়েছেন পৃথিবীকে। চারপাশে শোকের মাতম, বাড়িতে চলছে দাফনের প্রস্তুতি। এমন শোকের মুহূর্তে বুক ভরা কান্না চেপে রেখে পরীক্ষার হলে গিয়ে বসলেন দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এ যেন জীবনের এক নির্মম বাস্তবতা, মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে তারা দুজন পা রাখলো পরীক্ষাকেন্দ্রে।
হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন এবং সানস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ নাছির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায়। উপজেলার হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার এবং সানস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের শিক্ষার্থী লাবনী আক্তারের মা মারা গেছেন।
লাবনীর মায়ের জানাজা সকাল সাড়ে ১১টায় নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সায়মার মায়ের জানাজা পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পর বাদ যোহর অনুষ্ঠিত হবে।
মা হারানো সায়মা আক্তার সখীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে এবং লাবনী আক্তার সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ কেন্দ্রে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে কেন্দ্রে আসেন তারা। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় পরীক্ষায় অংশ নেয় তারা।
পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার হতিয়া গ্রামের মো. রায়হান মিয়ার মেয়ে সায়মা আক্তার। সায়মার মা শিল্পী আক্তার (৪০) কিডনি জনিত সমস্যার কারণে ২ জুলাই দিবাগত রাত ৩টার দিকে নিজ বাড়িতেই মারা যান। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে।
অপরদিকে উপজেলার কচুয়া পশ্চিম পাড়া এলাকার আব্দুল মান্নান মিয়ার মেয়ে লাবনী আক্তার। তার মা সফিরন (৪৫) গতরাত সাড়ে নয়টার দিকে মারা যান। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের মা ছিলেন।
দুই বাড়িতেই চলছে মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি। মায়ের মৃত্যুর পর সায়মা আক্তার ও লাবনী আক্তার ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসেন।
হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, সায়মা মেধাবী শিক্ষার্থী। তবে মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে আসা সত্যি কষ্টদায়ক। আল্লাহ যেন তার সহায় হোন।