Friday, July 4, 2025

এবার ইসরায়েলের ওপর চটেছে সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ডা. মারওয়ান আল-সুলতান নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির সংসদ সদস্যরা একে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনার কথা বলছেন। আর এজন্য ইন্দোনেশিয়া সরকারকে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ডা. মারওয়ান ছিলেন একজন খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি ফিলিস্তিনের উত্তর গাজায় ইন্দোনেশিয়া পরিচালিত হাসপাতালের পরিচালক। তিনি ২০০১ সালে পাকিস্তানের হায়দরাবাদের লিয়াকত মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। বুধবার (২ জুলাই) উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় তাদের অস্থায়ী বাসস্থানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিনি, তার স্ত্রী ও সন্তানরা নিহত হন।

বেঁচে যাওয়া কন্যা লুবনা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, ‘ক্ষেপণাস্ত্রটি সোজা তার কক্ষেই আঘাত হানে, যেখানে তিনি ছিলেন।’ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইন্দোনেশিয়ার মেডিকেল ইমার্জেন্সি রেসকিউ কমিটি (MER-C)-এর তথ্যমতে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল।

আরও পড়ুনঃ  স্ত্রীর কাছ থেকে কিডনি পেয়েই পরকীয়ায় জড়ালেন স্বামী!

বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালটি গাজার অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন শুরু হলে এ হাসপাতালই প্রথম হামলার শিকার হয়।

ইসরায়েলি হামলার মধ্যেও ডা. মারওয়ান কখনও তার পোস্ট ছাড়েননি। তিনি একের পর এক বিমান হামলার মধ্যেও রোগীদের পাশে থেকে চিকিৎসা দিয়ে গেছেন এবং হাসপাতালের জরুরি সংস্কার কার্যক্রমও নিজ হাতে তদারকি করেন। এমইআর-সি জানায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি ঘেরাও চলাকালে তিনি হাসপাতাল খালি করেন, তবে তা করেন রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর।

এই হাসপাতালটি ২০১৫ সালের শেষের দিকে এমইআর-সি-এর তত্ত্বাবধানে ইন্দোনেশীয় জনগণের দান ও স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হয়। এর স্থাপনা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া থেকেই। বহু প্রকৌশলী ও নির্মাণকর্মী স্বেচ্ছাশ্রমে যুক্ত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  নয়াদিল্লিকে সংলাপের প্রস্তাব দিলেন শেহবাজ

ডা. মারওয়ানের নির্মম হত্যাকাণ্ডে ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয় পর্যায়ে শোক ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের এই বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। পাশাপাশি, দেশটির সংসদের আন্তঃপার্লামেন্টারি সহযোগিতা কমিটির সদস্যরা বিশ্ব সংসদগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন মানবতাবিরোধী এসব অপরাধ আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা হয় এবং ইসরায়েলকে আইনি ও নৈতিকভাবে জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৬,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। তবে আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলোর মতে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৪১ শতাংশ মৃত্যু তথ্যগতভাবে অনুল্লিখিত থেকে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো যে দেশ

ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ ও অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে খাদ্য, চিকিৎসা ও মৌলিক সেবা না পাওয়ার ফলে মৃত্যু আরও বেড়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৯২ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

সম্প্রতি, ‘হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ওয়াচ’ জানিয়েছে, গত ৫০ দিনে নিহত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ৭০ জনে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ডা. মারওয়ান, যিনি ছিলেন ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের পরিচালক ও গাজার হৃদরোগ চিকিৎসার মুখ্য ব্যক্তিত্ব।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ