Tuesday, August 19, 2025

জাতীয় সরকারি চাকরিতে আসছে বড় পরিবর্তন

আরও পড়ুন

সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়া শাস্তি দেওয়া যাবে না।

এদিকে অভিযোগ কোনো নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হলে তদন্ত কমিটিতে অবশ্যই একজন নারী সদস্য থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
সংশোধনীতে যা রয়েছে

জানা গেছে, অধ্যাদেশটির সংশোধনী প্রস্তাবে অনানুগত্য ধারা, চাকরি হতে অপসারণ দণ্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম হতে অনুপস্থিত থাকতে উসকানি ও প্ররোচিত করার ধারাটিও বাদ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  জিরো রিটার্ন আইনত দণ্ডনীয়, এনবিআরের নতুন নির্দেশনা

অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে ইচ্ছুক কি না নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে। তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রতিবেদন দাখিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে এটি তদন্ত কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে গণ্য হবে।
এ অদক্ষতা এসিআরে লিপিবদ্ধ হবে। প্রয়োজনে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

কোনো সরকারি কর্মচারীকে দণ্ড প্রদান করা হলে তিনি দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ছিল মূলত সামরিক শাসনামলের বিতর্কিত ও কালা কানুন বাতিল করা। বর্তমান সরকার কর্মচারীদের আপত্তি ও আশঙ্কাগুলোকে বিবেচনায় এনে সংশোধন করেছে—এটি মন্দের ভালো। কেননা প্রশাসনযন্ত্রে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ বহাল ও বিদ্যমান থাকায় অহেতুক এ ধরনের অধ্যাদেশ জারির প্রয়োজন ছিল না। তারপরও এটি সরকার সংশোধন করেছে, এ জন্য কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

আরও পড়ুনঃ  যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বর্তমান সরকার গত ২৫ মে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৭-এর পর নতুনভাবে ৩৭ সন্নিবেশিত করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে। ওই অধ্যাদেশটি ১৯৭৯ সালের মার্শাল ল অর্ডিন্যান্সের অনুরূপ সাত দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুতি, কোনো অফিস প্রধানের কথা যদি নৈতিকমানসম্পন্ন কোনো কর্মচারী না শোনেন তখন সেই ভালো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনানুগত্যের অভিযোগ এনে চাকরিচ্যুতি, শুধু কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য চাকরিচ্যুতি, কর্মস্থলে অনুপস্থিত বা বিরত থাকতে উসকানি বা প্ররোচিত করার অপরাধে চাকরিচ্যুতি বা কর্মে উপস্থিত অথবা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করার জন্য চাকরিচ্যুত করার বিধান রাখা হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ  ‘৪ আগস্ট রাতেই হাসিনা পতনের পরিকল্পনা করেন শিবির নেতা সিবগাতুল্লাহ’

এর প্রতিবাদে সচিবালয়ের কর্মচারীরা কয়েক দফায় আন্দোলন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার আইনটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অধ্যাদেশটি সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্মচারী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে একের অধিক বৈঠক করেন। সর্বশেষ গত ২৬ জুন বিকেল ৪টায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে অধ্যাদেশটি প্রণয়নের দেড় মাসের মধ্যে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করল সরকার।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ