Wednesday, July 9, 2025

সরাসরি যা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন হাসিনা, চাঞ্চল্যকর অডিও ফাঁস

আরও পড়ুন

জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে বিক্ষোভ দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি অনুমোদন দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা— এমন একটি ফোন কলের অডিওর সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি আই।

মার্চ মাসে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, তিনি তার নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‌‌‘মারণাস্ত্র ব্যবহারের’ অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তাদের (বিক্ষোভকারীদের) যেখানেই পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে’ বলে নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই অডিও রেকর্ডটিকে হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন প্রসিকিউটররা। হাসিনার অনুপস্থিতিতেই এই বিচার চলছে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মতে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

একজন অজ্ঞাতনামা জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, যা নির্দেশ করে তিনি সরাসরি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  প্রধান উপদেষ্টাকে জড়িয়ে প্রচারিত দাবি সম্পর্কে যা জানালো প্রেস উইং

ফাঁস হওয়া অডিও সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ওই ফোন কলটি সংগঠিত হয় ১৮ জুলাই। তখন শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে অবস্থান করছিলেন।

ওই সময়টা ছিল বিক্ষোভের এক সংকটময় মুহূর্ত। পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তখন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ছিলেন।

বিবিসির দেখা পুলিশের নথিপত্র অনুযায়ী, শেখ হাসিনার ওই ফোন কলের পরবর্তী দিনগুলোতে সামরিক মানের রাইফেল ঢাকা শহরজুড়ে মোতায়েন ও ব্যবহৃত হয়েছিল।

বিবিসির পর্যালোচনা করা রেকর্ডিংটি শেখ হাসিনার একাধিক ফোন কলের একটি। এটি রেকর্ড করেছিল যোগাযোগ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোন কলের অডিওটি চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফাঁস হয়। কে এটি ফাঁস করেছেন তা স্পষ্ট নয়। এটি ছাড়াও বিক্ষোভের পর থেকে শেখ হাসিনার বেশ কিছু ফোন কলের ক্লিপ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, যার অনেকগুলোর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

আরও পড়ুনঃ  ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আইডিয়া কার, জানা গেল

বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শেখ হাসিনার পরিচিত কণ্ঠস্বরের সঙ্গে ১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটির কণ্ঠস্বর মেলানোর (ভয়েস ম্যাচ) মাধ্যমে তা যাচাই করেছে।

বিবিসি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করেছে, যেখানে তারা অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট-এর সঙ্গে রেকর্ডিংটি শেয়ার করে। প্রতিষ্ঠানটি কোনো সম্পাদনা বা বিকৃতির প্রমাণ পায়নি এবং বলেছে, এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

ইয়ারশট জানায়, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত একটি ঘরে স্পিকারে ফোন কলে বাজানো অবস্থায় রেকর্ড করা হয়েছে। কারণ তাতে স্পষ্ট টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ শোনা যায়। তারা পুরো রেকর্ডিং জুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্ত করেছে— এই ফ্রিকোয়েন্সি রেকর্ডিং ডিভাইস ও বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতির মধ্যে হস্তক্ষেপের কারণে অডিওতে পাওয়া যায়; যা ইঙ্গিত করে যে অডিওটি বিকৃত করা হয়নি।

আরও পড়ুনঃ  মবে জড়িতরা যতই শক্তিশালী হোক খুঁজে আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইয়ারশট শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের ছন্দ, সুর ও নিঃশ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করে রেকর্ডিংয়ে একরকম শব্দস্তর শনাক্ত করে এবং তাতে কোনো কৃত্রিম প্রভাব পাওয়া যায়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি কেডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, “এই রেকর্ডিংগুলো তার (হাসিনার) ভূমিকা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো পরিষ্কার, যথাযথভাবে যাচাই করা এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।”

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন—এই আদালতেই হাসিনা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলছে।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি, বিক্ষোভকারীদের হত্যাকাণ্ডে সাবেক সরকার ও পুলিশের কর্মকর্তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে। আইসিটি মোট ২০৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন বর্তমানে গ্রেফতার রয়েছেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ