রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে বুধবার (১৬ জুলাই) বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিচের সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়-
১. বিগত ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে মহাসচিব সভাকে অবহিত করেন।
২. সভায় (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সভায় ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় চারজন নিহত হওয়ায় গভীর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। সভা মনে করে পতিত ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সমর্থকেরা পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নৎসাত করার জন্য ফ্যাসিষ্ট বিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশে আক্রমনের ঘটনা ঘটায়। ফলশ্রুতিতে সরকারকে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করতে হয়, যা এই মূহুর্তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবার নীল নকশা বলে মনে করা হয়। সভা এই প্রসঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে। সভা আশা করে রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সর্তকতার সাথে তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে, অন্যথায় গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে।
৩. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ সভাকে বিস্তারিত অবহিত করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৭ জুলাই রাত ৮টায় এ বিষয়ে পুনরায় আলোচনা হবে।
৪. অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করা যাচ্ছে, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বিঘ্নিত করার জন্য এবং আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিশ্রুতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করবার জন্য একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো অযোগ্যতা এবং নির্লিপ্ততা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাবৃন্দ গণমাধ্যমে শুধুই কথাই বলছেন কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অতিদ্রুত সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
৫. সম্প্রতি সংঘটিত মিডফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জড়িয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচার বিবর্জিত বক্তব্য ও স্লোগান গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের তরুণ জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত যেসব অশ্লীল বক্তব্য ও স্লোগান গোটা জাতিকে বিক্ষুব্ধ করেছে। সভা এই সব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানায়। সভা মনে করে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকেই বিনষ্ট করবে না- গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। সভা আশা করে সকল রাজনৈতিক দল পারস্পরিক মর্যাদা ও সৌহার্দের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এই ধরনের অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে। সেই সঙ্গে মিডফোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানায় এবং অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।