Sunday, July 27, 2025

‘ফিনিশ দ্য জব, দে ওয়ান্ট টু ডাই’, কেন বললেন ট্রাম্প?

আরও পড়ুন

অবরুদ্ধ ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় দখলদার ইসরাইলের সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘ফিনিশ দ্য জব, দে ওয়ান্ট টু ডাই’।

ট্রাম্প এই নির্দেশ এমন এক সময় দিলেন, যার কয়েক সপ্তাহ আগেই তিনি হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘অত্যন্ত কাছাকাছি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই নির্দেশকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের একটি নাটকীয় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ড সফরে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ইসরাইলের এখন ‘কাজটা শেষ করে ফেলা উচিত’। কারণ হামাস ‘সৎভাবে আলোচনায় বসতে চায় না। তারা আসলে মরতে চায়’।

ট্রাম্পের ভাষায়, ‘আমার মনে হয়, ওরা (হামাস) মরতে চায়, আর সেটা খুবই, খুবই দুঃখজনক। কাজটা শেষ করতেই হবে’।

চরম মানবিক সংকটেও সামরিক অভিযানে ‘সমর্থন’

ট্রাম্পের এসব মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা গাজাকে ‘জীবন্ত লাশে ভরা অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করছেন এবং দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা দিচ্ছেন।

আরও পড়ুনঃ  ইরানের ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে পারবে না ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান

এসব সত্ত্বেও ট্রাম্পের বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইসরাইলের চলমান ২১ মাসব্যাপী সামরিক অভিযানে সমর্থন জোগাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে গত সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ কাতারের দোহায় চলমান মার্কিন-মধ্যস্থতাকারী যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ‘হামাসের মধ্যে আন্তরিকতা ও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে’ এবং এখন যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প পথে জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা করবে।

হঠাৎ পরিবর্তনে কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য

যুক্তরাষ্ট্রের এমন আকস্মিক অবস্থান পরিবর্তনে কাতার ও মিসরের কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এই দেশ দুটিই মূলত গাজা যুদ্ধবিরতির প্রধান মধ্যস্থতাকারী।

দোহায় আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র বলেন, ‘এটা এক রকম ভূমিকম্প। এখন আমরা আফটারশক সামাল দিচ্ছি’।

তবে মিসর ও কাতারের কর্মকর্তারা আলোচনার এই অচলাবস্থাকে ‘এ ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করে গুরুত্ব কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

এক যৌথ বিবৃতিতে মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

এদিকে ইসরাইলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএন-কে বলেন, আলোচনাগুলো ‘একেবারেই ভেঙে পড়েনি’ এবং একটি নতুন চুক্তির জন্য এখনো পথ খোলা আছে।

আরও পড়ুনঃ  ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ালো ইউরোপের ৩ শক্তিধর দেশ

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, হামাস বাস্তবতায় ফিরে আসবে, যাতে বাকি ফারাকগুলো দূর করা যায়’।

এদিকে ট্রাম্প দাবি করে বলছেন, হামাসের হাতে থাকা অনেক জিম্মি ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছে বা নিহত হয়েছে। যার ফলে তারা আর আলোচনায় চাপ তৈরি করতে পারছে না।

তিনি হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘তারা চুক্তি করতে চায়নি’।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাদের (ইসরাইল) লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, শেষ করতে হবে সব কিছু… তাদের সরিয়ে দাও’।

নেতানিয়াহুকে ঘিরে ক্ষোভ

ট্রাম্পের বক্তব্যে এও ইঙ্গিত মিলেছে যে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি তার বিরক্তি রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেন, নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাম্প্রতিক কথোপকথন ছিল ‘হতাশাজনক’।

যদিও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই বলেননি।

তবে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প মাসখানেক আগেও বলেছিলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যেই চুক্তি হতে পারে’। কিন্তু সর্বশেষ বক্তব্যে আলোচনা স্থগিত করে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও পুনরায় আলোচনা শুরুর কোনো সম্ভাব্য লক্ষণ নেই।

বক্তব্যে আশা, বাস্তবে যুদ্ধ

আরও পড়ুনঃ  হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন করলো আরেক মুসলিম দেশ

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সিএনএন-কে বলেন, ট্রাম্প ও উইটকফ ‘অনেক কৌশল’ জানেন এবং তারা খুবই ‘চালাক’। তারা এই খেলায় জড়িত সব পক্ষকে ভালো করেই চেনেন।

সেই সঙ্গে, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, কিছু সফলতা আসবে। যদিও নির্দিষ্ট সময়ের তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

এদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন যে, ইসরাইল ‘বিকল্প’ কৌশল নিয়ে ভাবছে—যার লক্ষ্য হলো- জিম্মিদের মুক্তি ও হামাসের শাসনের অবসান।

এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু না বললেও গাজায় আবারও সামরিক অভিযানের প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ধ্বংসস্তূপে গাজা, অজানা কূটনীতির ভবিষ্যৎ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো, গৃহহীন ও খাদ্য-নিরাপত্তাহীনতার এক বিপর্যস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও দাতা সংস্থাগুলোর জোর দাবির পরও ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের রাজনৈতিক বার্তাগুলো যুদ্ধের কৌশলকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সবশেষ বক্তব্য কৌশলগতভাবে হামাসকে চাপ দেওয়ার জন্য হতে পারে—তবে এটাও হতে পারে যে, কূটনীতি এখন সেনাবাহিনীর পেছনে পড়ে গেছে। সূত্র: পলিটিকো ও সিএনএন

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ