২০১৪ সালে প্লট চেয়ে দেওয়া চিঠিতে খুনি হাসিনাকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ নেত্রী ও আদর্শ মা বলে সম্বোধন করেছিলেন অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। প্লট চাওয়ার ওই চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে তখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এরপর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না জয়ের। পতিত সরকারের সুবিধাভোগী তকমা পেয়ে বেশকিছু জায়গা থেকে কাজও হারাতে হয়েছে তাকে। গেল ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানানোয় কয়েকজন সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দেয় ছাত্র-জনতা।এদের মধ্যে জয়ও ছিলেন। রাজধানীর উত্তরার মুগ্ধ মঞ্চে অন্যদের সঙ্গে জয়ের ছবিতেও চুনকালি ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়।
জয় বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই প্রতিদিন বিভিন্ন ইস্যুতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।বুধবারও লম্বা একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সেখানে শুরুতেই জয় লিখেছেন, ‘বিদেশের মাটিতে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে দেখলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকে ভদ্রলোকরা দুর্দান্ত পছন্দ করছেন। বিএনপিকে আগামীতে ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে ইলেকশন চাচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য, আওয়ামী লীগের যতই দোষ থাকুক একটা বিশাল শ্রেণির জনগণ আওয়ামী লীগের সাপোর্টার, তাদের বাদ রেখে ইলেকশন করলে সেই ইলেকশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসবে এবং ভবিষ্যতে বিভক্তি আরও বেশি তৈরি হবে’।
আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চেয়ে জয়ের এমন বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে।গণহত্যার দায়ে দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দলটির পক্ষে তার এভাবে সাফাই গাওয়ায় ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা।
জয়ের স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় জাহিদ খান নামে একজন লিখেছেন, বিএনপি-জামায়াত ছাড়া ইতোপূর্বে যে নির্বাচনগুলো আওয়ামী লীগ সরকার করেছে, তখন তোমার এরকম প্রতিবাদী পোস্ট কোথায় ছিল?
ইসমাইল হোসেন লিখেছেন, এটা একদম ক্লিয়ার, আপনি আওয়ামী লীগের কথা বলতেই এতো কিছু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লিখেছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া যা বলার বলেন সমস্যা নাই। আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী সংগঠন, এরা সুযোগ পেলে দেশ আর দেশ রাখবে না।
আবু তাহের চৌধুরী বলেনে, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন আর লুটপাট করে অবশেষে গণহত্যা চালিয়ে পলায়ন করেছে।
জাবের এইচ সুমন লেখেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশের অধিকাংশ দলকে চারটা নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছে, আওয়ামী লীগকেও চারবার দূরে রাখতে হবে, প্রয়োজন হলে আইনের মাধ্যমে করা দরকার, তখন শিক্ষা হবে।
দেলোয়ার হোসাইন বলেন, জয়রা ভেতরে ঢুকে আওয়ামী পুনর্বাসন চাচ্ছে!
জয়কে উদ্দেশ্য করে মামুন হোসাইন বলেন, এসব মানুষই গত ১৬ বছরে সুযোগ সুবিধা নিতো, আগে বিএনপি জামায়াত কেউ ছিল না, তখন কিন্তু এদের মুখ বন্ধ ছিল।
‘আওয়ামী লীগের সময় তো বিড়ালের মতো চুপ করে ছিলি’, বলেন মুজাফ্ফার নামের এক ব্যক্তি।
টুটুল জহিরুল ইসলাম বলেন, হা হা হা। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চাই। বিরাট জনগোষ্ঠী তারা…ইত্যাদি আরও কত কথা। আর লেখার শুরুতেই বিদেশিরা বলছে!যাইহোক আওয়ামী লীগ যখন ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচন করেছিল, দিনের ভোট রাতে করেছিল তখন এই জাতীয় কোনো পোস্ট করে থাকলে প্লিজ এখানে স্ক্রিনশট যুক্ত করুন। শোনেন মিয়া ভাই, চামচামি একটা জন্মগত অসুখের নাম। আগে সুস্থ হতে হবে।
সাদেকুল ইসলাম বলেন, জয় আওয়ামী লীগের দালালের মতো কথা বলছো।
আহমেদ নুর বলেন, জয় নিজের কথা বাইরের মানুষের নামে চালায়া দিয়েছে!
হাসিনাকে ‘মা’ ডেকে প্লট আবদার, চিঠিতে কী লিখেছিলেন জয়
২০১৪ সালে প্লট চেয়ে দেওয়া চিঠিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ নেত্রী ও আদর্শ মা সম্বোধন করেন জয়। ওই চিঠিতে জয় লিখেছিলেন, ‘আপনার সুযোগ্য পুত্রের নামের আরেক পুত্র শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সালাম রইল আপনার প্রতি। আমি জয়, বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নায়ক (টিভি ও চলচ্চিত্র)। আপনার দোয়ায় গত ১৭ বছর ধরে আমি বাংলাদেশের জনগণের বিনোদনের অন্যতম উৎস হয়ে আছি টিভি পর্দায় এবং সুস্থ চলচ্চিত্রে।’
‘আপনি অত্যন্ত দরদি এবং বাংলার মানুষের বিপদের বন্ধু। শুধু তাই নয়, গত নির্বাচনকালীন সময়ে আপনি যে বলিষ্ঠ সাহসী ও জ্ঞানদীপ্ত আদর্শের ওপর বলীয়ান ছিলেন, তা আমাদের মতো মানুষকে আজীবন আপনার নেতৃত্বকে স্যালুট জানানোর অঙ্গীকার করিয়েছে। মা, আপনার নিকট একজন শিল্পীর আবেদন- আমার সমসাময়িক সব শিল্পীই পূর্বাচলে ১০ কাঠা, ৫ কাঠা প্লট পেয়েছে। আমি দেশের বাইরে শুটিংয়ে থাকার জন্য অ্যাপ্লাই করতেই পারিনি। পরে ঝিলমিলে অ্যাপ্লাই করলে লটারিতে তা পাইনি।’
তিনি লেখেন, ‘মা, পূর্বাচলে একটা জমি আমার স্বপ্ন- আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ। আমি আপনার কাছে আবদার করলাম, আপনি আপনার এ সন্তানের আবদার ফেলে দেবেন না আমি জানি (ইনশাআল্লাহ)।’