রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে গত ২৬ জুলাই চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ৫ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ নামে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য এবং অন্যরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
এঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর একটি এআই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, যে ধরা পড়েছে সে আমাদের এনসিপির নেতা। আমি বকে দিয়েছি। বলেছে আর করবে না। চাঁদাবাজ হোক বা যা-ই হোক ওরা তো আমাদেরই সন্তান।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটককৃতদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদানের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওটিতে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটির নিচের অংশে দেখতে পাওয়া ইংরেজি লেখাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যার কোনো অর্থবোধকতা নেই। পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
পরবর্তীতে ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮২ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
আলোচিত ভিডিওটি রিভার্স সার্চের মাধ্যমে একাধিক গণমাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর একই শার্ট পরিহিত অবস্থায় একই স্থানের বসে থাকার একটি ছবির সন্ধান পাওয়া যায়। উক্ত গণমাধ্যমগুলোর কয়েকটিতে এটিকে ফাইল ছবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে একই স্থানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদানের কোনো ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই ধারণা করা যাচ্ছে, উক্ত ভিডিও ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটককৃতদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদানের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।