Saturday, August 23, 2025

অডিও ভাইরাল: কোম্পানীগঞ্জে ঘাটের চাঁদা যায় নেতা ইউএনও ওসির পকেটে

আরও পড়ুন

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ঘাটের চাঁদাবাজির টাকা আদায়কে ঘিরেই রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চল। এ ঘাট দিয়ে মাছ, শাকসবজি ছাড়াও মাদকের বড় চালানের টাকা যায় জেলা উপজেলার শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে। এসব নিয়ে একটি বিস্ফোরক অডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। যা গত বুধবার থেকে “টক অব দ্য নোয়াখালীতে” পরিণত হয়েছে।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে ঘাটের নিয়ন্ত্রক ছিল চর এলাহী ইউপি চেয়ারম্যার ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। তিনি এখন হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলায় কারাঅন্তরীণ রয়েছেন।

নির্ভরযোগ্য প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চর এলাহী ঘাটটি সরকারি বিধি মোতাবেক ইজারা নিয়েছিলেন ঐ ইউনিয়নের যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ বেলাল।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদারের নেতৃত্বে তার অন্যতম অনুসারী ইব্রাহিম তোতাসহ তার বাহিনী।

এ নিয়েই বিএনপির দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চর এলাহী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মতিন তোতা ও চর ফকিরা ইউনিয়নের যুবদল নেতা এরশাদ মাঝি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে খুন হন। গত শনিবার ও বুধবার চর এলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন, তার ভাই প্রবাসী বেলাল, ছাত্রদল নেতা ইমন, মাসুদসহ কয়েকজন ইব্রাহিম তোতা বাহিনীর হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘৫০ হাজার টাকা দাও, বিষয়টা আমি দেখছি’, জামায়াত নেতার অডিও ফাঁস

চর এলাহী ঘাটের আদায়কৃত চাঁদার টাকার কমিশন নিয়ে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইস্কান্দার মির্জা ও ঘাটের কেরানি সেলিমের ভাইরাল হওয়া বিস্ফোরক অডিওর কথোপকথনে শোনা যায়— উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার, মৃত তোতা চেয়ারম্যানের ছেলে ইসমাইল তোতা, সবুজ তোতা, বাহাদুর তোতা, তোতা চেয়ারম্যানের জামাই আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদল নেতা রুবায়ের, ফাহিম ও ছয় নেতার একটি করে বোট রয়েছে। ঐ ঘাটে চলাচলকারী বোটগুলোর আয়ের ২০ শতাংশ টাকা প্রতিদিন চর এলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাস্টারের কাছে জমা দেওয়া হয়। আদায়কৃত এ টাকা বিএনপির উপজেলা নেতা, জেলা নেতা, ইউএনও, ডিসি, ওসি-এসপিকে দিতে হয়। এ সময় ঘাট কেরানি সেলিম প্রতি উত্তরে বলেন, দিতে হয়। আপনি জানেন না?

ছাত্রদল নেতা ইস্কান্দার মির্জা প্রশ্ন করে বলেন, সাইফুল, রুবায়ের, তোতার ছেলে শাহিন, ইব্রাহিম সবার বোট আছে। আবার নতুন একটা নামিয়েছে। তাদের তো ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হয় না। প্রতি উত্তরে কেরানি সেলিম বলেন, সবাইকে দিতে হয়। এ টাকা কাকে দেওয়া হয় তার জবাবে ঘাট কেরানি বলেন, আমি মাস্টারকে দিই। পরে সে কাকে দেয় আমার জানার দরকার নেই। ইস্কান্দার বলেন, এ পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা তিনি চাঁদা দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  যুবলীগ নেতাকে ধরতে বাড়ি ঘেরাও, ফোনে জানালেন ‘খুঁজে লাভ নেই’

ছাত্রদল নেতা ইস্কান্দার মির্জার সঙ্গে কথিত সাংবাদিক কামাল উদ্দিনের ফাঁস হওয়া অপর আরেকটি অডিওতে মির্জা বলেন, বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার, ইব্রাহিম তোতা, ইসমাইল তোতা, তাদের মেয়ের জামাইয়ের বোট আছে। কিন্তু আপনি শুধু আমার বোটের কথা বললেন কেনো? আমি এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ কমিশনের প্রায় ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি বলে পুনরায় বলেন।

এ সময় মির্জা কথিত সাংবাদিক কামালকে বলেন, প্রথমে তারা (ইসমাইল তোতা, ইব্রাহিম তোতারা) ৩০ শতাংশ চেয়েছে। এ নিয়ে বাজারে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। অনেক দিন আমার বোট বন্ধও হয়েছে। মির্জা বলেন, ইসমাইল তোতা, ইব্রাহিম তোতা আমার কাছ থেকে টাকা নিত। তাদেরকে যখন জিগ্যেস করতাম টাকা কাকে দিতে হয়? তারা বলেন, এ টাকা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার, জেলা, ইউএনও, ওসিকে দিতে হয়। এ সময় মির্জাকে আরো বলতে শোনা যায়, ইব্রাহিম তোতা ও ইসমাইল তোতা বলেন, এ এলাকার এসব নিয়ে তার বাবা আবদুল মতিন তোতাকে হত্যা করা হয়েছে। এখানে বোট চালাতে হলে তাদের কমিশন দিয়েই চালাতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  জানা গেল আওয়ামী ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া মেজর সাদিকের আসল পরিচয়

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম জানান, চর এলাহী ঘাটের বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানে না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম জানান, ইজারা থাকাকালীন অবস্থায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুজাহিদুল ইসলাম নামের ব্যক্তি ঘাটটির অবস্থান ও মালিকানা সন্দ্বীপ উপজেলার দাবি করে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালতে রিট পিটিশন দায়েরের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ঘাটটি আর ইজারা দিতে পারছে না।

এসব বিষয় নিয়ে চর এলাহী ইউনিয়ন বিএনপির আভ্যন্তরীণ কোন্দল ঘিরে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলগীর আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের বিষয়ে বিএনপির দলীয় জিরো টলারেন্স নীতিমালা অব্যাহত রয়েছে। সন্ত্রাসীদের দমনে কারো কোনো তদবির না শুনে প্রশাসনকে জনস্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ