Saturday, August 23, 2025

আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার আরেক নাম বাংলাদেশ, দেশে থাকতে চাননা অনেকেই

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। সড়ক, রেলপথ, জলপথ, বাজার, খোলা মাঠ—প্রায় সব জায়গায় ঝুঁকি ছড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ৮,৫৪৩ জন, যা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৩ জনের সমান। ডব্লিউএইচও বলছে, প্রতি এক লাখে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ১৮.৬–১৯ জন, দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে বেশি।

শহরের রাস্তা থেকে গ্রাম-প্রান্তরের সড়ক—প্রায়ই দেখা যায় চালক অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন, হেলমেট বা সিটবেল্ট ব্যবহার নেই, এবং সিগন্যাল ও ট্রাফিক আইন উপেক্ষা করা হচ্ছে। এসবই মৃত্যুর প্রধান কারণ। অনেকে বলছেন, অসচেতনতা, শাস্তির অভাব এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি এই দুর্ঘটনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘কালচারাল ফ্যাসিস্টদের’ একহাত নিলেন শহীদ আবরারের ভাই

হত্যার হার তুলনায় কম—প্রতি এক লাখে প্রায় ২ জন। তবে মিডিয়ায় খুনের খবর বড় হয়ে প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার অনুভূতি কম থাকে না। বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং শিক্ষার ঘাটতি। এই সব কারণে সাধারণ মানুষ অনিরাপত্তার মধ্যে জীবন যাপন করছেন।

বজ্রপাতে বছরে মারা যান গড়ে প্রায় ৩০০ জন। শুধু ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৯৭ জন মারা গেছেন। বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা শুধু আবহাওয়ার কারণে নয়; মানুষের সচেতনতার অভাব, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থা না থাকা মিশ্রভাবে মৃত্যুর কারণ।

অগ্নিকাণ্ডও প্রাণহানির বড় কারণ। ফায়ার সার্ভিস জানাচ্ছে, ২০২৪ সালে ২৬,৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এতে মারা গেছেন ১৪০–১৪২ জন, আহত হয়েছে প্রায় ৩৭৮ জন। বৈদ্যুতিক ত্রুটি, চুলা বা গ্যাসের ব্যবহার, সিগারেট ফেলা—সবই এক দিকে; অন্য দিকে, মানুষের অসচেতনতা, অগ্নি নিরাপত্তার অবহেলা এবং নিয়ম না মানা—এগুলো পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে।

আরও পড়ুনঃ  চ্যাটজিপিটির ডায়েট প্ল্যানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধ

রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫১২ জন, জলপথে ১৮২ জন। অতিরিক্ত যাত্রী, খারাপ নকশা, আবহাওয়া, নিরাপত্তা–অমান্য—এগুলোই মৃত্যুর প্রধান কারণ।

নিরাপত্তাহীনতা, জীবন–সংকট ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে অনেকেই প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ৭৪ লাখের বেশি বাংলাদেশি, ২০২৪ সালে দেশ ছেড়েছেন প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ।

বিশ্বের তুলনায় হত্যার হার কম হলেও, সড়ক দুর্ঘটনা, বজ্রপাত, অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা, সড়ক নিরাপত্তা, অগ্নি–নিরাপত্তা, শিক্ষার মান এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি না করলে প্রতিদিনের মৃত্যু বন্ধ করা সম্ভব হবে না। মানুষের মানসিক চাপ, আবহাওয়া, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও নৈতিকতার অবক্ষয়—সব মিলিয়ে দেশকে প্রতিদিন ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

আরও পড়ুনঃ  ব্যারিকেড সরলেও রয়েছে পুলিশ, কাকরাইল ফিরেছে পুরোনো রূপে

তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেলমেট, সিটবেল্ট, লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার, ব্ল্যাক–স্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, বৈদ্যুতিক ও গ্যাস–নিরাপত্তা, মোবাইল অ্যালার্ট—এসবই জীবন বাঁচাতে সহায়ক। কিন্তু এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, মানুষের সচেতনতা, নৈতিকতা, শিক্ষার মান এবং আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি করা। এসবই না হলে বাংলাদেশের প্রতিদিনের মৃত্যু থামানো সম্ভব হবে না।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ