১৫ আগস্ট ঘিরে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনের আড়ালে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজশে সরকারকে অস্থিতিশীল করার ভয়ঙ্কর ছক এঁটেছিল সে। কিন্তু দৈনিক ইনকিলাবে এনিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ভণ্ডুল হয়ে যায় তার ষড়যন্ত্র। সবার সামনে মুখোশ উন্মোচন হয়ে পড়ে মুখোশ পাল্টানো এই আওয়ামী দোসরের।
১৫ আগস্ট ঘিরে আজিজী গংদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও এখনও অজ্ঞাত স্থান থেকে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সে। অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষকদের নানা উসকানি অব্যাহত রেখেছে। ইনকিলাবের হাতে আসা একটা ভিডিওতে তাকে প্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট কায়দায় শিক্ষকদের আইনবিরোধী কাজে বাধ্য করার হুমকি দিতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
একাধিক গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, ১৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ শোকদিবস পালনের নামে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্র করে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষকদের প্ররোচনা দিয়ে আন্দোলনে মাঠে নামায় আজিজী। শিক্ষা উপদেষ্টা পরোক্ষভাবে তাকে মদদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, ফ্যাসিস্ট আমলে হাসিনার চাটুকারিতা করে নানা সুবিধা করা চতুর আজিজী বর্তমানে জামায়াতের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে একইভাবে নির্বিঘ্নে ফায়দা লুটছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী মুখোশ পাল্টে সুবিধা নিতে যাওয়া আজিজী এখন গ্রেপ্তার এড়াতে প্রশাসনে থাকা জামায়াত ঘনিষ্ঠদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলে জানা যায়।
দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ফ্যাসিস্ট আমলে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের চাটুকারিতায় জঘন্য রেকর্ড গড়ে মুজিবের মাজারে গিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে মোনাজাত করা এই ফ্যাসিস্ট দালাল। মুখোশ পরে দীর্ঘ ১৬ বছর সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে সে। স্থানীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর নানা তথ্য উঠে এসেছে। ফ্যাসিস্ট আমলে শিক্ষকদের নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে হাসিনার পক্ষের শক্তি হিসেবে দাঁড় করায় সে।
আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দালাল দেলোয়ার হোসেন আজিজীর কোটালিপাড়ায় শেখ মুজিবের মাজার জিয়ারত করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে তাকে দলবল নিয়ে মোনাজাত করতে দেখা যায়। তাকে পাগলপ্রায়ভাবে শেখ মুজিবের বন্দনা করতে দেখা যায়। ধর্মকে ব্যবহার করে এতে সে জঘন্যা চাটুকারিতা করে যা ব্যাপক ক্ষুব্ধ করে ধর্মপ্রিয় মুসলিমদের।
সচেতন মহল বলছেন, এত শত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চিহ্নিত আওয়ামী দালাল আজিজীকে কেন এখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেনি? গোয়েন্দা তথ্য ও মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করলে তার সকল দুর্নীতি এবং ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে চলে আসবে এক নিমিষেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উদাসীনতা হোক আর অপারগতা হোক এর ফাঁক গলিয়ে এই ভয়ঙ্কর চিটার আজিজী যেভাবে বেরিয়ে গেল তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বারবার সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন মোড়কে আন্দোলনের সর্বশেষ এডিশন হলো এই শিক্ষক আন্দোলন। আজ জারি করা ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সতর্কতা বার্তায় এই শিক্ষক আন্দোলনকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে, তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে তারা (আজিজী গং) কি করে উচ্চ মহলের সাথে অনায়াসে মিটিং করল? শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিএনপি সহ দেশের ডানপন্থি দেশপ্রেমিক সকল দলগুলোকে নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে হারিয়ে দেয়া এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা এই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি গোপন এজেন্ডা। অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন শেষের হসিনাকে দেশে ফেরত আনা সহ নানা গোপন কর্মকাণ্ডের তাদের সম্পৃক্ততা আছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা দখল করে চলে এই আন্দোলন। এক পর্যায়ে দুপুরে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট’-এর ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। ওই বৈঠকের পর দেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির আদেশ শিগগির জারি হবে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। সচিবালয়ে বিভাগের সভাকক্ষে গতকাল বুধবার সাংবাদিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
ফ্যাসিস্ট দালাল আজিজীর মতো একজন মুখোশধারীর সাথে বৈঠক করায় সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, চিহ্নিত এই দোসরকে তারা কি চিনেন না? নাকি জেনেশুনেই তার সাথে বৈঠক করেছেন।