ইমিগ্রেশন পার হওয়াটা প্রায়শই বিদেশ যাত্রার সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের মুহূর্ত হয়ে থাকে। সঠিক এবং যথাযথ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও কিছু ভুল কথা বলা আপনাকে চরম সমস্যায় ফেলে দিতে পারে, আপনার প্রবেশ বিলম্বিত হতে পারে, অথবা এমনকি আপনাকে প্রত্যাখ্যানও করা হতে পারে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করা হয় যেন তারা অস্বাভাবিকতা এবং অসঙ্গতি খুঁজে বের করতে পারেন। তাই, যদি আপনি প্রথমবার বিদেশ যান, তবে ইমিগ্রেশন ডেস্কে কিছু কথা বলার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। এখানে ৭টি কথা উল্লেখ করা হলো, যা কখনো ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কাছে বলা উচিত নয়, কারণ এগুলো আপনার প্রবেশে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
১. ‘আমি জানি না কোথায় থাকব’: এই কথা বললে ইমিগ্রেশন অফিসারদের কাছে আপনার পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট হয়ে যাবে। তারা চান, আপনি সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা নিয়ে আসবেন। আপনার থাকার জায়গার স্পষ্ট প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। হোটেল বুকিং কনফার্মেশন, এয়ারবিএনবি অ্যাড্রেস বা যাকে আপনি দেখতে যাচ্ছেন তার সঠিক ঠিকানা থাকা উচিত। এমনকি ক্যান্সেলযোগ্য বুকিংও এ ক্ষেত্রে একটি ভালো বিকল্প হতে পারে, যা আপনাকে সে দেশে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তুত বলে প্রমাণ করবে। এক্ষেত্রে প্রিন্ট করা কপি সঙ্গে রাখা আরও বেশি প্রমাণস্বরূপ হবে।
২. ‘আমি এখানে কাজ করতে এসেছি’: (যদি আপনার হাতে ওয়ার্কিং ভিসা না থাকে) এমনটি বলা বড় ধরনের ভুল হতে পারে যদি আপনার কাছে ওয়ার্কিং ভিসা না থাকে। অনেক সময় যাত্রীরা বলেন যে তারা কাজ করতে যাচ্ছেন, কিন্তু আসলে তারা একটি মিটিং, সেমিনার বা ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে যাচ্ছেন। এটি ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে সন্দেহ তৈরি করতে পারে। যদি আপনি ব্যবসায়িক সফরে যান, তখন স্পষ্টভাবে বলুন যে আপনি কেবল একটি মিটিং বা সেমিনারে অংশ নিতে যাচ্ছেন এবং কাজের জন্য সেখানে অবস্থান করবেন না। ইমিগ্রেশন বা অভিবাসনের নিয়ম খুব কঠোর, তাই নিশ্চিত থাকুন যে আপনি আপনার ভিসার শর্তগুলো মেনে চলবেন।
৩. ‘আমি শুধু অনলাইনে পরিচিত এক বন্ধুকে দেখতে এসেছি’: এটি সরল বা সাধারণ শোনালেও, এটি একটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ইমিগ্রেশন অফিসাররা খুবই সন্দেহ করেন এমন সম্পর্ক নিয়ে, বিশেষত যদি সম্পর্কের প্রমাণ না থাকে। আপনার পুরো ঠিকানা এবং সম্পর্কের প্রমাণ দিন। এটা নিশ্চিত করুন যে, আপনি এই সফরে নির্দিষ্ট ‘বন্ধু’ বা ‘আত্মীয়’ কে দেখতে যাচ্ছেন এবং যদি কোনো অতিরিক্ত প্রশ্ন আসে, সরলভাবে এবং যথাযথভাবে উত্তর দিন।
৪. ‘আমার ফিরতি টিকেট নেই’: এটি প্রায়ই প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। ইমিগ্রেশন অফিসাররা চিন্তা করেন যে আপনি হয়তো অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করবেন। ফেরত টিকেট না থাকলে, আপনি যদি অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে কমপক্ষে একটি রিফান্ডযোগ্য ফিরতি টিকেট রাখা উচিত। ফিরতি টিকেট দেখানোর মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনি আপনার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই দেশটি ছাড়বেন।
৫. ‘আমি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে নেব’: যদিও ব্যাকপ্যাকিংয়ে উপস্থিত বুদ্ধি অনেক সময় কাজে দেয়। তবে ইমিগ্রেশন অফিসারদের কাছে এটি খুবই সন্দেহজনক মনে হতে পারে। ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে অস্পষ্ট মন্তব্য ইমিগ্রেশন অফিসারদের কাছে আপনার অপ্রস্তুতি তুলে ধরে। আপনি যদি নির্দিষ্ট গন্তব্যও না জানেন, তবুও অন্তত একটি সাধারণ পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কোথায় যাবেন, কী কী স্থানে ভ্রমণ করবেন বা কোন শহরগুলোতে যাবেন।
৬. মাদক, বোমা বা অপরাধ নিয়ে মজা করে কিছু বলা: এটি যে কোনো পরিস্থিতিতেই এড়িয়ে চলা উচিত। মাদক বা বোমা সম্পর্কে মজা করা ইমিগ্রেশন অফিসারদের কাছে খুবই গুরুতর (অপরাধ) হিসেবে গণ্য হয় এবং তা আপনার যাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। যদিও আপনার উদ্দেশ্য হাস্যকর না হয়, তবে এসব আপনাকে যাত্রার প্রথম থেকেই যন্ত্রণায় ফেলতে পারে। সুতরাং, সবসময় উত্তরের মধ্যে সোজাসুজি, সরলতা এবং বিনয়ের প্রতি মনোযোগ দিন।
৭. ‘আমার কাছে যথেষ্ট অর্থ নেই’: এটি বললে ইমিগ্রেশন অফিসাররা সন্দেহ করবেন যে আপনি দেশটিতে অবস্থান করতে পারবেন না। তারা চান যে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন যে আপনি আপনার নতুন বাসস্থানের খরচ বহন করতে সক্ষম। ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা নগদ অর্থ সঙ্গে রাখা উচিত, যা প্রমাণ করে যে আপনি যথেষ্ট অর্থ খরচের জন্যে প্রস্তুত। এটি আপনার আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণ করবে এবং দেশটিতে কারও বোঝা হয়ে থাকতে হবে না আপনাকে, তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেবে।
ভুল কথা বললে কী হতে পারে? ভুল কথা বলার অর্থ এই নয় যে আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে, কিন্তু এটি মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। প্রথমত, আপনাকে সেকেন্ডারি ইন্সপেকশনে পাঠানো হতে পারে, যেখানে আরও অনেক প্রশ্ন করা হতে পারে এবং আপনার ব্যাগ চেক করা হতে পারে। এটি আপনার যাত্রার প্রথম থেকেই মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে, যাত্রীদের ভিসা বাতিল করা বা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোও হতে পারে। ইমিগ্রেশন অফিসাররা আপনার উত্তরগুলোর মধ্যে সঙ্গতি এবং স্পষ্টতা খুঁজে থাকেন, তাই আপনার কথার মূল্য অনেক।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সফল হওয়ার ৫ টিপস:
১. সব ডকুমেন্ট/নথিপত্র যথাযথ এবং সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখুন। হোটেল বুকিং এবং ফিরতি টিকেট অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
২. প্রশ্নের উত্তর সংক্ষিপ্ত এবং সোজাসুজি দিন।
৩. আপনার ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে রাখুন যাতে তাড়াতাড়ি পেতে পারেন।
৪. অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৫. শান্ত থাকুন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিন।
ইমিগ্রেশন অফিসার কি আপনার ফোন চেক করতে পারেন? হ্যাঁ, কয়েক দেশে ইমিগ্রেশন অফিসাররা আপনার ফোন, ল্যাপটপ বা সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট চেক করতে পারেন। যদিও এটি সাধারণত হয় না, তবে এটি সতর্কতামূলক হতে পারে। আপনার ডিভাইস আনলক করে রাখা এবং আপনার গল্পের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকা ভালো।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া কত সময় নেয়?
সাধারণত, ইমিগ্রেশন প্রশ্নোত্তর কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়, তবে যদি আপনাকে সেকেন্ডারি ইন্সপেকশনে পাঠানো হয়, তখন এটি ৩০ থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত সময় নিতে পারে। শান্ত থাকলে এবং সহযোগিতামূলক হলে প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হতে পারে।
যদি সেকেন্ডারি ইন্সপেকশন হয়, কী করবেন? যদি আপনাকে সেকেন্ডারি ইন্সপেকশনে পাঠানো হয়, তবে শান্ত থাকুন এবং সত্য কথা বলুন। ডকুমেন্টগুলো দ্রুত দিন এবংি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমবার ভ্রমণকারীদের জন্য ৫টি টিপস:
১. আপনার ভিসার শর্তগুলো ভালো করে জানুন এবং সেগুলো মেনে চলুন।
২. জরুরি অবস্থা সামাল দিতে স্থানীয় মুদ্রা কিছু পরিমাণে সঙ্গে রাখুন।
৩. ইমিগ্রেশন ফর্মে যা লেখা আছে, তার সঙ্গে আপনি যা বলছেন তা মিলিয়ে রাখুন।
৪. ফিরতি টিকেট এবং হোটেল বুকিংয়ের কপি পেপারে এবং ডিজিটালভাবে রাখুন।
৫. প্রশ্নের উত্তর বিনয়ের সঙ্গে দিন, এমনকি আপনি দ্বিধাগ্রস্ত হলেও।
সূত্র: এনডিটিভি