২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন প্রধান। ঘটনার পরপরই বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও গণমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরায় ধরা পড়া এক ছবিই ফাঁস করে দেয় আসল ঘটনা।
অভিযোগ ওঠে, তখন নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে কর্মরত এসআই মাহফুজুর রহমান কনক চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়েছিলেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, তিনি টানা তিনবার গুলি ছোড়েন। তবে সেই রাইফেল তার নামে ইস্যুকৃত ছিল না, বরং ঘটনাদিন এক কনস্টেবলের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে রাইফেল নিয়ে গুলি চালান। এতে নিহত শাওনের পাশাপাশি আরও ২৫ থেকে ৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। বর্তমানে কনক কারাগারে রয়েছেন।
ঘটনার সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপের মুখে শাওনের বড় ভাই মিলন মিয়াকে দিয়ে বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করানো হয়। পরে তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলসহ কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে জোরপূর্বক সেই মামলায় স্বাক্ষর করান।
সরকার পতনের পর গত বছরের ২১ অক্টোবর মিলন মিয়া নতুন করে মামলা করেন। এতে এসআই কনকসহ তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক পাঁচ সংসদ সদস্যসহ মোট ৫২ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়, কীভাবে কনক গুলি চালিয়ে শাওনকে হত্যা করেছিলেন।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বিদেশে পালানোর সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন মূল অভিযুক্ত এসআই কনক। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। অন্যদিকে, মামলার অন্যতম আসামি তৎকালীন এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেলকে দায়িত্ব থেকে পালানোর অভিযোগে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শাওনের বড় ভাই মিলন মিয়া বলেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে দিয়ে মিথ্যা মামলায় স্বাক্ষর করানো হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত হত্যাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সত্য সবার সামনে আসে। এখন আমার একটাই দাবি—শাওন হত্যার প্রকৃত খুনিদের বিচার।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিনুজ্জামান বলেন, মামলার প্রধান দুজন আসামি কারাগারে আছেন এবং তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের অনেকে দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন। তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিহত শাওন প্রধান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় একটি ইজিবাইক তৈরির কারখানায় ওয়েল্ডিং শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।