এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক—এই যুগল একসময় যেন ছিল অবিচ্ছেদ্য। আর এখন তাদের সম্পর্কচ্ছেদ যেন বিশ্বজুড়ে এক বিরাট আলোচনার উৎস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্কের এই ‘ব্যর্থ বন্ধুত্ব’ নিয়ে এখন চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে বিশাল আলোচনা। বেশিরভাগ নেটিজেনই মাস্কের পক্ষে।
সবশেষ উত্তেজনার জন্ম দিয়েছেন মাস্ক নিজেই। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিশাল কর ও ব্যয় বিল যদি পাস হয় (যেটিকে তিনি ‘উন্মাদনা’ বলে অভিহিত করেছেন), তবে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল “আমেরিকা পার্টি” গঠন করবেন। এই বিলটি চলতি সপ্তাহে সিনেটে পাস হয়েছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাস্ক আগেই হুঁশিয়ার করেছিলেন যে, এই বিল সমর্থনকারী আইনপ্রণেতাদের তিনি ক্ষমতা থেকে সরাতে চান।
একজন মন্তব্য করেছেন, “যদি ইলন মাস্ক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তবে তার প্রযুক্তিনির্ভর মানসিকতা রাজনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে। পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেক – এবং তা মনোযোগের দাবিদার।” আরেকজন লিখেছেন, “যখন আর সহ্য করা যায় না, তখন চুপ থাকার দরকার কী?”
সবচেয়ে আলোচিত মন্তব্য ছিল: “ভাই মাস্ক, তোমার পাশে একশো কোটির বেশি মানুষ আছি আমরা।” টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও মাস্ক চীনে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। চীনের রাস্তায় টেসলা একমাত্র পশ্চিমা বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্র্যান্ড, যা স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমান তালে প্রতিযোগিতা করছে। টেসলার সবচেয়ে বড় কারখানাও রয়েছে সাংহাইয়ে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং-এর সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মাস্কের মা, মায়ে মাস্ক নিজেও চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় এক জনপ্রিয় মুখ।
চীনে আমেরিকান প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে আগ্রহ দীর্ঘদিনের। স্টিভ জবসের জীবনী যেমন চীনে বেস্টসেলার হয়েছিল, তেমনি মাস্কের জীবনীনির্ভর বইও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অন্যদিকে, ট্রাম্পকে চীনে অনেকেই এক ‘অপ্রত্যাশিত রসবোধসম্পন্ন ব্যক্তি’ হিসেবে দেখেন, যিনি চীনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিলেন।
কিছু নেটিজেন অবশ্য ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্বকে শিশুসুলভ বলেও অভিহিত করেছেন। একজন লিখেছেন, “এই দুই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ছোটখাটো বিষয় নিয়েই ঝগড়া করে – আর পুরো পৃথিবী তা দেখে।” আরেকজন রসিকতা করে লিখেছেন, “প্রতিদিনই মাস্ক যেন ‘কোটিপতিরা কীভাবে ঝগড়া করে’—এমন একটা লাইভ স্ট্রিম করছে।” এই আলোচনাগুলো চীনের কড়া নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্টারনেটেও অবাধে ছড়াতে দেওয়া হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয়—মার্কিন রাজনীতির এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চীনের জন্য ক্ষতিকর নয় বলেই মনে করছে কিছু সেন্সর কর্তৃপক্ষ।