Wednesday, August 20, 2025

দ্বিতীয় প্রতিবেদনেও উঠে এলো হাসিনার গোপন বন্দিশালার ভয়াবহ তথ্য

আরও পড়ুন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের বহু আগে থেকেই আলোচনায় আসে ‘আয়নাঘর’সহ শেখ হাসিনার নানা গোপন বন্দিশালা। যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে বা সরকারের জন্য হুমকি এমন মানুষকে ধরে নিয়ে গুম করে রেখে চালানো হতো ভয়াবহ নির্যাতন। তারই কিছু বর্ণনা উঠে এসেছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে। 

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাতে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে ২৫৩ জন গুম হওয়া ব্যক্তির অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। যাদের মধ্যে কেউ ৩৯ দিন, কেউ ৩৯১ দিন ধরে গোপন ‘টর্চার সেলে’ বন্দী ছিলেন। 

বন্দিশালায় গুম হওয়া এসব ব্যক্তিরা জানান, ঝুলিয়ে রাখা, বাঁশডলা, বৈদ্যুতিক শক, ওয়াটারবোর্ডিং (জলপীড়ন) অর্থাৎ মুখের ওপরে গামছা দিয়া ওপরে দিয়া পানি মারা, উলঙ্গ করে এলোপাথাড়ি মার, নখ উপড়ে ফেলা, শীতে কম্বল-বালিশ না দেওয়া, হ্যান্ডকাপ পরিয়ে বিছানার পাশে আটকে রাখাসহ বহুভাবে নির্যাতন করা হতো।  

আরও পড়ুনঃ  ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক, হাতিয়ে নেন ৮ লাখ টাকা

২০১৭ সালে অপহৃত হয় হাবিব। মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১১৩ দিন ‘গুম’ হয়ে ছিলেন তিনি। হাবিবের ভাষায়, তাকে গ্রিলের সঙ্গে হাতকড়া পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো, যাতে বসতে না পারে। পা ফুলে যেত, হাত রক্তাক্ত হতো। টেবিলের ওপর হাত রেখে আঙুলে প্লাস দিয়ে চেপে ধরত, আরেকজন সুচ ঢুকাত।

শুধু হাবিব নন, এমন শত শত মানুষের ওপর চালানো হতো অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। গুম হওয়া ব্যক্তিরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যেতেন। বমি করে দিতেন। কেউ কেউ আবার চোখ বাঁধা অবস্থায় নিজের শরীরের মাংস পোড়ার গন্ধ পেতেন। নির্যাতনের ভয়াবহতা থেকে রেহাই পেতেন না গুমের শিকার নারীরাও। তাদের ঝুলিয়ে বিকৃত উল্লাস করে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়তেন বাহিনীর সদস্যরা।

আরও পড়ুনঃ  সমন্বয়ক পরিচয়ে সাবেক এমপির বাসায় চাঁদাবাজির সময় আটক ৫

২৫ বছর বয়সী এক নারীকে ২০১৮ সালে অপহরণ করে পুলিশ। তিনি গুম কমিশনকে বলেন, অনেকটা ক্রুসিফাইড হওয়ার মতো করে হাত দুই দিকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। ওরা আমাদের ওড়না নিয়ে নেয়। আমার পিরিয়ড অনেক দেরিতে হতো। কিন্তু এতো বেশি নির্যাতন করেছে যে সঙ্গে সঙ্গে আমার পিরিয়ড আরম্ভ হয়ে যায়।

রিপোর্ট বলছে, র‍্যাব-২ ও সিপিসি-৩ এর হেফাজতে ছিল ঘূর্ণায়মান চেয়ার, পুলি সিস্টেম, সাউন্ডপ্রুফ রুম। বন্দিদের ঝুলিয়ে, মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে, বৈদ্যুতিক শকে, ওয়াটারবোর্ডিংয়ের মতো পদ্ধতিতে দিনের পর দিন নির্যাতন চালানো হতো। গুমের শিকার বেশিরভাগ ব্যক্তিকে জনসম্মুখে হাজির করার আগে নির্যাতনের চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা চলত। কেউ কেউ স্পষ্ট নির্যাতনের দাগ নিয়েই হাজির হলেও, বিচার বিভাগ অনেক সময় তা উপেক্ষা করত।

আরও পড়ুনঃ  খাবার দেওয়ার কথা বলে ২ শিশুকে ধর্ষণ, তারপর...

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) গঠিত হয়। এরপর কমিশন বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, শনাক্ত, কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন-তা নির্ধারণে কাজ শুরু করে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ