ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আব্দো মাহদিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার আজই (১৬ জুলাই) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফাঁসির আদেশ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) স্থগিত করেছে দেশটির বিচার বিভাগ।খবর রয়টার্সের।
বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি কারাগারে সাজা ভোগ করছেন ওই ভারতীয় নার্স।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, নিমিশার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে, বাতিল হয়নি।
ইয়েমেনে ইসলামি শরিয়া আইন প্রচলিত। এ আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির স্বজনরা যদি হত্যার শিকার ওই ব্যক্তির পরিবারের লোকজনদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন— তাহলে আসামির ওপর থেকে অভিযোগ তুলে নিতে পারেন বাদিপক্ষ। সেক্ষেত্রে দণ্ডাদেশ বাতিল হয়ে যায়। ইংরেজিতে ‘ব্লাড মানি’ নামে পরিচিত এই আর্থিক ক্ষতিপূরণকে আরবি ভাষায় বলা হয় দিয়াহ।
এখন নিমিশাকে বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা হলো যদি ওই নিহত ব্যক্তির পরিবার ‘দিয়াহ’ বা ‘ব্লাড মানি’র বিনিময়ে ওই নার্সের প্রাণভিক্ষা দিতে রাজি হয়!
উল্লেখ্য, কেরালার পালাক্কর জেলার বাসিন্দা নিমিশা নার্স হিসেবে কাজ করার জন্য ২০০৮ সালে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। ইয়েমেনে যাওয়ার পরে স্বামী টমি থমাস এবং মেয়ের সঙ্গেই থাকছিলেন নিমিশা। পরে ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং ১১ বছরের কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা ইয়েমেনেই থেকে যান। তার ইচ্ছা ছিল, নিজের ক্লিনিক খুলবেন। ওই বছরই ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। মাহদি তাকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। কারণ আইন অনুযায়ী, ইয়েমেনে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদার রাখা বাধ্যতামূলক। সেইমতো ২০১৫ সালে দু’জন মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন। এর পর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ।
অভিযোগ, নিমিশার অর্থ এবং পাসপোর্ট মাহদি কেড়ে নিয়েছিলেন মাহদি। মারধর করে নিমিশাকে মাদকসেবনেও বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে মাহদির বিরুদ্ধে। আইনি কাগজপত্রে নিমিশাকে স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়ার পথও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন ওই নার্স। নিমিশার দাবি, মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু ওভারডোজ়ের কারণে মৃত্যু হয় মাহদির। এর পর হানান নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে মাহদির দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দেন ওই নার্স। ওই মাসেই ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান নিমিশা। সেই থেকে ইয়েমেনের জেলেই বন্দি রয়েছেন এই ভারতীয় নারী।
নিমিশার মা একজন দরিদ্র গৃহকর্মী। মেয়েকে রক্ষা করতে ২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে আছেন তিনি।