নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানায় দুদক। গত ২২ মে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে দুদকের চিঠির উত্তরে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, দুদকের সংশ্লিষ্ট শাখার মহাপরিচালক কালবেলাকে বলেছেন, শেখ হাসিনার অপরাধটি দুদকের তপশিলভুক্ত নয়।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসিতে দাখিল করা হলফনামায় নিজের সম্পদের বিষয়ে অসত্য তথ্য দেন। এ বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর আওতায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে ইসিকে চিঠি দেয় দুদক। চিঠিতে বলা হয়, দুদকে শেখ হাসিনার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে হলফনামায় ৬ দশমিক ৫০ একর কৃষিজমি এবং তার দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন; কিন্তু দুদক যাচাই করে দেখেছে, শেখ হাসিনার নামে ২৮ দশমিক ৪১১ একর কৃষিজমি রয়েছে। যার মধ্যে কেনা জমির মোট দাম ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। এ হিসাবে তিনি ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন এবং ক্রয়মূল্যও প্রকৃত দামের চেয়ে ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০ টাকা কম দেখিয়েছেন, যা হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার শামিল।
তাই এ বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর আওতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
সম্প্রতি দুদকের ওই চিঠির উত্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দুদককে দেওয়া চিঠিতে ইসি বলেছে, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে অপরাধ করেছেন। হলফনামায় মিথ্যা তথ্যের বিষয়টি মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলসহ হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের সময় বা পর্যায় অতিক্রান্তে উত্থাপিত হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই ইসির। শেখ হাসিনা সম্পদের মিথ্যা বর্ণনা দিয়েছেন মর্মে অভিযোগে তিনি দণ্ডবিধির ১৮১ ধারার অপরাধ সংঘটন করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ১৯৫(১) অনুযায়ী যে ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা হলফনামা প্রদান করেছেন, সেই ম্যাজিস্ট্রেট বা তার ঊর্ধ্বতন কোনো সরকারি কর্মচারী কর্তৃক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ আছে।
জানতে চাইলে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দণ্ডবিধির ১৮১ ধারার অপরাধ করেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশনের তপশিলভুক্ত অপরাধ নয়। তাই এ বিষয়ে দুদকের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।’
জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে বেশ কয়েকটি অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলার তদন্ত চলছে। এ ছাড়া কয়েকটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।