আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা এখনো শুরু করেনি ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে গণঅভ্যুত্থানের প্রধান তিন দফা দাবির বাস্তবায়ন। সেই সঙ্গে দলটির জুলাই পদযাত্রা চলমান রয়েছে।
এর মাধ্যমে এনসিপি তৃণমূলে দলের নির্বাচনি মাঠ প্রস্তুত করে রাখছে। জুলাই পদযাত্রার কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ তুর্কিরা। তবে এখনই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রার্থী ঘোষণা এবং নির্বাচনি তৎপরতা না চালালেও সংসদীয় আসনকেন্দ্রিক নির্বাচনি ভাবনা রয়েছে এনসিপির। ভেতরে ভেতরে চলছে ভোটের প্রস্তুতিও। প্রাথমিকভাবে দলটির সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
জুলাই পদযাত্রার শুরুর দিকে দলের দুজন প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে এনসিপি। তারা হলেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪) এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ (কুড়িগ্রাম ২)। এরপর গত ১৯ দিনে বিভিন্ন বিভাগের একের পর এক জেলায় পদযাত্রা হলেও আর কোনো প্রার্থীর নাম সেভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে জমায়েতে সংশ্লিষ্ট এলাকার শীর্ষ নেতাদের হাত ধরে পরিচয় করিয়ে দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলটির দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও দুজন যুগ্ম সদস্য সচিব জানান, কৌশলগত কারণে এখনই দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে না। বরং সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের নেতাদের হাত তুলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট দুটি কারণ রয়েছে—পদযাত্রায় প্রার্থী ঘোষণা করা হলে ফোকাস নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারে। তাতে সংস্কার, বিচারসহ যেসব দাবি তুলে ধরা হচ্ছে, তা উপেক্ষিত হবে। দ্বিতীয়ত, দলের বিস্তৃতির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হতে পারে এবং সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা আশাহত হতে পারেন। এনসিপির নেতৃত্বে বাইরে থেকেও দলটি থেকে নির্বাচন করতে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী সক্রিয় রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আমার দেশকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং মৌলিক সংস্কারের জুলাই সনদের ভিত্তিতে আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবব। বিদ্যামন ব্যবস্থা থেকে সংসদের আসন বাড়ানো, উচ্চক্ষ-নিম্নকক্ষ, সংখ্যানুপাতিকসহ অনেক বিষয় এখনো প্রস্তাব আকারে রয়েছে। এসব বিষয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। ফলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় নাকি নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে, সেটি ঠিক হওয়ার পর নির্বাচনি তৎপরতায় যাবে এনসিপি। এসব বিষয় নিয়ে যেসব দল ভাবছে, তাদের সঙ্গে আমাদের একটি বোঝাপড়া হলেও হতে পারে, তবে সেটি তফসিলের পর। এখন আমরা সাংগঠনিক মজবুত ভিত্তির প্রতি বেশি মনোযোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এনসিপির শীর্ষ নেতাদের বড় একটি অংশ রাজধানীর বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হবেন। অন্য শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ এলাকা থেকে প্রার্থী হবেন। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নিজের জন্মস্থান ঢাকা-১১ (বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা) এবং বেড়ে ওঠার এলাকা ঢাকা-৯ (রামপুরা-বনশ্রী) আসন থেকে প্রার্থী হবেন। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ থেকে প্রার্থী হবেন।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ঢাকার একটি আসনে বা ভোলা-১ থেকে, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর-৫ অথবা ঢাকার কোনো একটি আসনে প্রার্থী হতে পারেন। ঢাকা-১৪ থেকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, ঢাকা-১৭ আসন থেকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১ থেকে নির্বাচন করতে পারেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ঢাকা-৯, যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসাইন ঢাকা-১৩, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এসএম শাহরিয়ার ঢাকা-৫, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীন ঢাকা-৬, সংগঠক মো. রাসেল আহমেদ ঢাকা-১, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন নওগাঁ-৫, মাহবুব আলম লক্ষ্মীপুর-১, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন পটুয়াখালী-২, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ-৪, এসএম সাইফ মোস্তাফিজ সিরাজগঞ্জ–২, সালেহ উদ্দিন সিফাত ফেনী-২, মীর আরশাদুল হক চট্টগ্রাম-১৬, মশিউর রহমান ঝালকাঠি-১ এবং মাহিন সরকার সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী হতে পারেন।
এ ছাড়া জয়নাল আবেদীন শিশির কুমিল্লা-১০, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ গাজীপুর-৩, অলিক মৃ টাঙ্গাইল-১, আবু সাঈদ লিয়ন নীলফামারী-৪, ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, মোল্যা রহমতুল্লাহ্ বাগেরহাট-৩, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম ঠাকুরগাঁও-৩, ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু খুলনা-১, সাকিল আহমাদ মেহেরপুর-২, আশিকিন আলম ময়মনসিংহ-৯, তুহিন মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ-৩, আবদুল্লাহ আল ফয়সাল নরসিংদী-৫, নাভিদ নওরোজ শাহ্ কুমিল্লা-৬, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আবদুল্লাহ আল মনসুর ফেনী-২ ও মিরাজ মেহরাব তালুকদার ময়মনসিংহ-৫ এবং সদস্য আবদুল্লাহিল মামুন নিলয় নরসিংদী-৩, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ফেনী-১, ফাহিম রহমান খান পাঠান নেত্রকোনা-২, সোহেল রানা মেহেরপুর-১ ও সাইয়েদ জামিল রাজবাড়ী-২ থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে।
জুলাই পদযাত্রার আগে পবিত্র রমজান মাসে ইফতার পার্টি, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে এনসিপির সম্ভাব্য এসব প্রার্থী আসনভিত্তিক সক্রিয় ছিলেন। তারা ঈদ শুভেচ্ছাবিনিময়, জনসংযোগ, পোস্টারিংয়ের পাশাপাশি দল গোছানোর কাজও করেন ওই সময়ে। দুই ঈদে নিজ নিজ এলাকায় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে যোগদান এবং সভার আয়োজন করেন এনসিপি নেতারা। প্রীতি ফুটবল, ক্রিকেট খেলাসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয় সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তারা।
এনসিপির শীর্ষ চার নেতার একজন আমার দেশকে বলেন, আসনকেন্দ্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রতি এখনো মনোযোগ দেওয়া হয়নি। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া নতুন দলটির মনোযোগ এখনো সব জনগোষ্ঠীর মৌলিক দাবি অন্তর্ভুক্ত করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম করতে জনসম্পৃক্ত ও জনবান্ধব কর্মসূচির প্রতি। সেভাবেই এনসিপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচিও ডিজাইন করা হবে।
এনসিপির ডজনখানের কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, বিদ্যামন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এনসিপির রাজনীতির মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অন্য দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি করলেও দলটি গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েমের প্রতি বেশি মনোযোগী। সে কারণে দলের কৌশল, কর্মসূচি ও কর্মপন্থাও অন্য দলগুলোর থেকে ভিন্নতর। বিকল্প নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উত্থিত হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এনসিপি। অন্য দলগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা থাকলেও এনসিপির তৎপরতায় রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র এবং গণহত্যার বিচার। গণঅভ্যুত্থানের এ দাবিগুলোর উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন না হলে এনসিপি আগামী নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারে।
তারা বলছেন, সংসদীয় ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা, সম্ভাব্য প্রার্থীদের সক্ষমতা এবং জনমানুষের চাওয়া পর্যালোচনা করছে এনসিপি। চলমান জুলাই পদযাত্রায় তৃণমূলে গিয়ে এ তিন বিষয়ে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এ কর্মসূচি দেশের সব বিভাগের অধিকাংশ জেলা ঘুরে এসে ৩০ জুলাই শেষ হবে রাজধানীতে। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির কর্মসূচি ও আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার মধ্যেই জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি হওয়ার কথা। সারা দেশে বড় আকারে একটি জরিপ পরিচালনা করে তার ফলাফল বিশ্লেষণ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার ঢেলে সাজাবে এনসিপি।
দলটির নেতাদের ভাষ্যমতে, জুলাই-আগস্টের মধ্যে মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান চূড়ান্ত রূপ নেবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনসিপির নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়টি ঠিক হবে। তবে শাপলা প্রতীক নেওয়ার ব্যাপারে এনসিপি সিরিয়াস। এজন্য প্রয়োজনে তারা আন্দোলনে যাবে। এ সময়ের মধ্যে পেশাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশব্যাপী বড় একটা জরিপ পরিচালনা করবে দলটি। সুতরাং সেপ্টেম্বরের আগে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোর তৎপরতায় যাবে না এনসিপি। জুলাই স্পিরিটকে সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে নির্বাচনি সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
এ বিষয়ে দলটির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, মৌলিক সংস্কার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হলে, জুলাই সনদ সংস্কারের প্রত্যাশা পূরণ করলে, জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হলে, সংস্কার হওয়া ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হলেই ভোট করবে এনসিপি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলে ভোটে যাবে না এনসিপি, রবং রাজপথের আন্দোলনে নামা হবে। আর ভোট করলে এককভাবে হতে পারে আবার রাজনৈতিক জোট বা সমমনাদের সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা হতে পারে। আন্দোলনে গেলে মিত্রদেরও রাজপথে নামার আহ্বান জানানো হবে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও নির্বাচনসংক্রান্ত কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম মুসা আমার দেশকে বলেন, জুলাই পদযাত্রায় পাওয়া জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া মূল্যায়ন করে এনসিপি দলের কর্মসূচি এবং কর্মপদ্ধতি নতুন করে পুনর্বিবেচনা করবে। এজন্য এই মুহূর্তে নির্বাচনকেন্দ্রিক এগোচ্ছি না। আমাদের মূল ফোকাস সংস্কার, গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যন্ত দলের বিস্তৃতি ঘটানো এবং গণমানুষের কাছে পৌঁছতে কাজ করছি আমরা।
নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্যোগে একটি রাজনৈতিক জরিপ পরিচালনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তার আলোকে আমাদের সাংগঠনিক শক্তির মূল্যায়ন করে নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোন কোন আসনে আমরা বেশি গুরুত্ব দেব, কোন কোন আসনে আমরা কীভাবে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করব এবং রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন কেমন হবে, সেসব বিষয়ও জরিপের ফলের ভিত্তিতে হবে।
গত শুক্রবার জুলাই পদযাত্রায় মুন্সীগঞ্জে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি সামনে আরো একটি লড়াই আসছে। আমরা সে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। এর একদিন আগে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর বলেন, কোনো একটি দল বা অন্য কোনো কারণে মৌলিক সংস্কার বাধাগ্রস্ত হলে এনসিপি রাজপথে সমাধান খুঁজবে।
মুন্সীগঞ্জের পদযাত্রায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যে সংস্কার চাই, তা নির্দিষ্ট কোনো দলের নয়। সংস্কার বাংলাদেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে। আমরা দেখেছি অতীতে নেতাকে পূজা করা হয়েছিল। আমরা চাই পরবর্তী বাংলাদেশে এরকম যেন আর না হয়। এ দেশ আর নেতানির্ভর হবে না। নেতা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী মত ও সব রাজনৈতিক দলের সবাইকে পরবর্তী বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্যভাবে কাজ করতে হবে।’
এনসিপি নেতারা জানান, জুলাই-আগস্টের কর্মসূচির মাধ্যমে এনসিপির প্রতি গণজোয়ার ও মানুষের আগ্রহের বিষয়টি ধুলে ধরতে চান তারা। সেই সঙ্গে মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং সাংবিধানিক সংস্কারে গণপরিষদ ও জাতীয় নির্বাচনের দাবির প্রতি মানুষের সমর্থনের বিষয়টিও দেখাতে চায় দলটি। গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের পাশাপাশি এ তিন দাবিতে সোচ্চার থাকছে দলটি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিএনপিসহ অন্যদের চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন।
এদিকে গত শনিবার কক্সবাজারে পদযাত্রা সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছি জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ হতে হবে। নির্বাচনের জন্য কে পিআর বোঝে, কে বোঝে নাÑএজন্য সংস্কার আটকে থাকবে না। আমরা জানি জনগণ সংস্কার বোঝে, তারা সংস্কার চায়। ফলে অবশ্যই উচ্চকক্ষে পিআর হতে হবে। নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি করতে হবে। এ দুটি সংস্কার প্রস্তাবনায় ঐকমত্য হলেই জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি হয়ে যায়।’
শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, গত ৫ আগস্ট আমাদের দেখা স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশে খুনি হাসিনার বিচার হতেই হবে, রায় কার্যকর দেখতে চাই। দেশের বিচার বিভাগকে কোনো দলের বিচার বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই না। নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে।’
এনসিপির সারা দেশে চলমান ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ চলতি মাসের শেষে রাজধানীতে এসে শেষ হবে। পরের মাসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার’ পাঠ করবে দলটি। ওই দিন এনসিপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করবেন এনসিপির আহ্বায়ক ও শেখ হাসিনার পতনের এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম। আগামী ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছেন জানিয়ে গত শনিবার কক্সবাজারের সমাবেশে তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আমরা অবশ্যই আদায় করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’
এনসিপি সূত্রমতে, এর মধ্যে সরকার ঘোষণাপত্র ও সনদ প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলে সারা দেশে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ফের আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে ৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে। হাসিনাকে উৎখাতের এক দফার ঘোষণাস্থলের এই সমাবেশে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতা যোগ দেবে, বড় সমাবেশ হবে সেদিন। এমনকি ঘোষণাপত্র ও সনদে জুলাই স্পিরিট ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তও আসতে পারে সমাবেশ থেকে।
অবশ্য ঐকমত্য কমিশন বলেছে, ৩০ জুলাই সনদ করতে চায় তারা। সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলছে শেষ সময়ের সংলাপ। গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কারে ছাড় না দেওয়ার কথাও বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া সরকারি কমিটি ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সবগুলো রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে। এটিও ৫ আগস্টের আগে ঘোষণা করতে চায় সরকার। তবে এটি নিয়ে সেভাবে কথা বলছে না ঘোষণাপত্র প্রণয়ন কমিটি।
এদিকে, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য সব শর্ত পূরণ করে আবেদন করেছে এনসিপি, তারা প্রতীক হিসেবে চেয়েছে শাপলা। নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ ইস্যুতে চাওয়া পূরণ না হলে ইসি পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলনে নামবে দলটি। এ দুই বিষয়ের সিদ্ধান্ত আসতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর লেগে যেতে পারে।
গত ১০ জুলাই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সবকিছু বিবেচনা করে শাপলাকে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি কমিশন। এই হলো ফাইনাল কথা। তবে গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাতে সে ইঙ্গিত দিয়েছে এনসিপির প্রতিনিধিদল। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘নির্বাচনি প্রতীক শাপলা ছাড়া বিকল্প অপশন নেই। লিগ্যাল ওয়েতে আমরা দেখেছি, আইনগতভাবে শাপলা পেতে আমাদের কোনো বাধা নেই। যদি বাধা দেওয়া হয়, সেটার জন্য আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করব।’
ইসির সদস্যদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাসীরুদ্দীন বলেন, ইসির অনেকে দলীয় মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। নির্বাচনের আগে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড। ইসি যেভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল, সে আইনটিও পরিবর্তন করতে হবে। তবে এই ইসিতে যারা ভালো কাজের পরিচয় দিয়েছেন, তাদের রাখা যেতে পারে।